প্রগতির পথের পরিব্রাজক পদার্থবিদ অজয় স্যারের শুন্যতা নিয়েই বয়ে চলবে দিন। আমাদের এই বাতিঘরের শুন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। কিছুদিন আগে চলে গেলেন কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন। আজ বারবার মনে হচ্ছে মাইকেল মধুসুদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের সেই লাইন- ‘এ মোর সুন্দরী পুরী! কিন্তু একে একে শুখাইছে ফুল এবে, নিবিছে দেউটি’
“ জম্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে” মাইকেল মধুসুদন দত্তের এ লাইনটির মতোই জীবন।

কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু অন্তরের গহীনে দাগ রেখে যায়। অজয় রায় ছিলেন সে গোত্রের একজন। ৮৫ বছর বয়সে তার প্রয়াণ ঘটলেও মূলত তার ছেলে লেখক অভিজিৎ রায় ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে যান। মাঝখানে তার স্ত্রীর বিয়োগ তাকে আরও বেশি একা করে দেয়।
অজয় স্যার আর দশজন মানুষের মতো ছিলেন না। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং দীর্ঘদিন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠা করে লড়াই করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে। শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এই বরেণ্য অধ্যাপক সোমবার সকালে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ৮৫ বছর বয়সে লোকান্তরিত হন।

এর আগে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৫ নভেম্বর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট বাড়লে দুইদিন পর তাকে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়া শুরু হয়।
একুশে পদকপ্রাপ্ত পদার্থবিদ অজয় রায়ের দুটি গবেষণা নোবেল কমিটিতে আলোচিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবসরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইউজিসি অধ্যাপকও ছিলেন অজয় রায়। মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও।তিনি চিলেন প্রগতির পথের পরিব্রাজক এবং চেনা বিচ্ছুরনের এক বাতিঘর। বরেণ্য অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে জঙ্গিদের হাতে নির্মমভাবে নিহত লেখক অভিজিৎ রায়। সন্তানকে হারিয়ে তিনি পাগল প্রায় হলেও কখনও খেই হারাননি। জীবনের শেষ দিকে পূঞ্জিভুত সব বেদনা নিয়ে চলে গেলেন তিনি। রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক অজয় রায়ের প্রয়ানে।
তার সংগ্রামী জীবন ও কর্মের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।