দুচোখের কালোজাম অথবা তোমার ভালো নামের ঠিকুজি
প্রশ্নবোধক চিহ্ন একটা সুখ জাগানিয়া ভাবের সম্প্রসারণ। তাই প্রশ্নকর্তার নামে অবিরত বেজে ওঠে ঢোলের বাদ্য। এটা তো হলো একটা ‘ইচিক দানা’র খেলা; মনবৃক্ষতলে উসখুস করে হেঁটে এসে বসা একজন উড়াল পাখি। তর্জমার ভাষায় এ পাখিটা সকলের চেনা; তোমার সার্কিটে সদা প্রবাহিত বিশ্বাসের বৈদ্যুতিক পিলার। তন্ত্রভেদে তার বেশুমার ডাকনাম! তাহলে তো তুমি সেই জেদী শিশুদের কান্না ভোলানোর রঙিন ঝুমঝুমি!
তুমিও আসলে অতি সহজ মানুষ। বাতাসের গানে তাই বেজে ওঠে তোমার থাকা না থাকার সচিত্র নিশানা। সকল ডাকনামের ভীড়ে তোমার সুপরিচিত আসল প্রকাশ হারিয়ে গিয়েছে শাস্ত্রগাছের চিরল পাতায়। এই নিখিলের ঘনীভূত বিশ্বাসের আকুতিতে তোমার ভালো নামের খোঁজে মানুষেরা তাই রিমঝিম ফুল, তোমার সীমানা ও সাকিন! এত এত ডাকনামের বিভ্রাটে মানুষেরা আজ যন্ত্রণাবিদ্ধ, নামগোত্রহীন উজানের পাখি।
প্রশ্নের বিপরীতে মানুষ ও তুমি আসলে পরস্পরের দুচোখের কালোজাম…
অসংখ্য ডাকনামের বাজারে তোমারও ভালো নাম প্রকৃতপক্ষে শুধুই ‘মানুষ’।
মুর্শিদের বাজারে ফোটা অর্কিডের ফুল
খুলে গেছে ডানা, অতিশয় গুপ্ত-রহস্যপূর্ণ কলধ্বনিমুখরতা। তাই বয়নসূত্র ভুলে গেছে তাঁতি আর ব্যাবহারশাস্ত্রে লেখা সেই পোষাকি মাজহাব। সংঘাত ও সংহতির মাঝে মানুষের প্রচ্ছদেই প্রকাশিত হয় মালিকের প্রকৃত আমলনামা। অকুতোমৃত্যুর লোভে পলি ও পাথরে জাগে এই অঘটনঘটনকুশল।
কোন কিছু থাকা না থাকার মাঝে শুধু ফুটে ওঠে অতি পরিচিত অর্কিডের ফুল। ডানা ঝেড়ে ফেলে মানুষের উদ্ধারে যে এগিয়ে আসে সকলের আগে, সেই তো আসল দয়াল মুর্শিদ।
মানুষ আসলে আকিক পাথর, চিলেকোঠা ভেদ করে ফুটে ওঠা চাঁদ
নিজের উপস্থিতি জানিয়ে দিতেই প্রতিনিধি পাঠানোর কথা চিন্তা করা হয়ে থাকে। অতএব যারা প্রতিনিধি, তারা স্বশরীরে প্রেরকের সমতুল্য। অর্থাৎ যে কোন প্রতিনিধিকে প্রেরকের মত করে বিশেষিত করাই তো সমধিক প্রশংসনীয়। এটা তো আসলে কাকেদের চোখ, স্বচ্ছ বাস্তবের অনুদিত সত্য।
মানুষ প্রেরিত; তুমি তার প্রেরক যে তুমি বয়ান করো কিতাবে ও কল্যাণে। তাহলে মানুষ তোমারই সঙ্গত অহং-দোসর; আরেক কথায় প্রেরকের আত্মরূপ। মানুষ তাহলে আকিক পাথর, মানুষ তো আসলে স্ফটিক!
প্রেরককে যদি ভালো ও মন্দে বিশেষিত করে ফোটানো না যায়, তাহলে মানুষ কিভাবে বলো তো ভালো ও মন্দে বিশেষিত হয় – বলো, ও আমার যাবতীয় মহিমাকীর্তনে চিলেকোঠা ভেদ করে ফুটে ওঠা চাঁদ।
খাঁচার ভিতর অতি চেনা পাখি
যে সকল পাখি খাঁচার ভিতরে আসে আর যায়, তারা তো অচিন নয় অতি চেনা পাখি। অচিন পাখিরা কখনো তো আসে না, যায়ও না কোন দিকে; তারা শুধু খাঁচার ভিতরে যাওয়া-আসার পথ খুঁজে খুঁজে অপেক্ষমান হয়ে থাকে।
তোমাকে অচিন রেখে ঝরোকার ভিতরে যে আয়নামহল, তাতে কাকে বলো প্রার্থনায় ডাকি, বলো পাখি – নিজের কুঠুরি ও দরজা দিয়ে খাঁচার ভিতরে যাতায়াত করা অতি চেনা পাখি!
অদ্বৈত-বৈভব
ধর্মের নিজের কোন মাহাত্ম্য নাই।
সকল মহিমা প্রকাশ করার জন্য
তাকে মানুষের উপর ভর করতে হয়।
তুমি যদি ভর কর আমার উপরে,
আমিও মহান হয়ে যাই;
কেননা –
তুমিই আমার ধর্ম।
লালন নূর
জন্ম ৩০ জুন ১৯৭৩; খামার সেনুয়া, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও। ২০০৬ থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ‘জ্যেষ্ঠ তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক’ হিসেবে কর্মরত।
প্রবাসের প্রায় ১১ বছর কেটেছে পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া মহানগরীর কাছে একটি ছোট শহরতলীতে। ফিলাডেলফিয়া থাকাকালীন কবি বদরুজ্জামান আলমগীরের সাথে গড়ে তোলেন ‘সংবেদের বাগান’ নামে একটি কবিতার সংগঠন। বর্তমান নিবাস ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড শহরে।
জীবন আর পাখির ডানা নিয়ে প্রতিদিন ফুটে ওঠে রোদের বাগান। নিঃসঙ্গ মুখরতায় কবিতা হয়ে ওঠে প্রতিদিনের নিকটতম প্রতিবেশী। মুলত কবি ও প্রাবন্ধিক; তবে রয়েছে গল্প ও অন্যান্য গদ্য রচনাও। বিভিন্ন পত্রিকায় বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে কিছু লেখা। গ্রন্থবিহীন।
বাহঃ, দারুণ তো। খুব ভালো লাগলো লেখাগুলো। ঝরঝরে আর ভাবনা উদ্রেককারী।
<3