
মেয়েটির অপরাধ পাবলিক প্লেসে সে সিগারেট খাচ্ছিল, তাইতো?
হ্যা, সে তো পাবলিক প্লেসেই খাচ্ছিলো, আপনার বাড়ির বেলকনিতে বসে নিশ্চয়ই নয়। মানছি, মেয়ে মানুষের মুখে সিগারেট খুবই অশোভনীয় দেখায়। তাই বলে বাংলাদেশের কোন আইনে আছে একজন মেয়ে পাবলিক প্লেসে সিগারেট খেতে পারবেনা?
ভিডিওটা খুব ভালো ভাবে দেখলাম, মেয়েটা নীল রঙের শাড়ি পরে একজন ছেলের পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো। হুট করে একজন এসে ধমকের সুরে বলে উঠলেন- আপনি মেয়ে মানুষ হয়ে এখানে সিগারেট খাচ্ছেন কেন? সিগারেট ফালান। ১৮ কোটি মানুষের দেশে তারপর লোকসমাগম হতে দেরি হয়নি। বিশেষ করে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু যদি কোন মেয়ে মানুষ হয় তাহলে তো কথাই নেই। সেই মোতাবেক সাথে সাথে একদল লোক এসে সেখানে ভিড় জমালেন। এতোগুলো মানুষের মধ্যে বোধ করি সাহসী একজন দাঁড়ালেন মেয়েটার পক্ষে। নইলে সেখানে কি যে হতো তা কেউ বলতে পারে না। ওই একজন বাদে সকলে মিলে মেয়েটাকে অপদস্ত, অপমান করতে লাগলো।
তারপরও মেয়েটি দমে যায়নি। সে স্পষ্ট করে উঁচু গলায় বলে যাচ্ছিলো- এটা পাবলিক প্লেস, এখানে সিগারেট খেলে আপনার সমস্যা কিসের? অবশ্য অজস্র প্রতিবাদে মেয়েটি টিকতে পারেনি। তার আগেই নিভিয়ে ফেলেছে সিগারেট। তার সঙ্গীকে নিয়ে সরে পড়াকেই সে নিরাপদ ভেবেছে ।
আসলেই তো, আপনার সমস্যা কিসের? একটু বুঝিয়ে বলবেন?
আমরা যখন রাস্তা দিয়ে হেটে যাই আর আপনারা পুরুষেরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যখন পেশাব করেন তখন কি আমরা একটি বারের জন্যেও বলি, অসভ্যের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে পেশাব করছেন কেন?
না, আমরা তা চাইলেও এমন কিছু বলতে পারিনা কিন্তু নিজেদের আত্মসম্মান ও লজ্জাবোধের জায়গা থেকে ঠিকই মাথা নিচু করে চলে আসি।
একটা মেয়ের সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে পাবলিক প্লেসে তাকে অপমান করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত আমার জানা নেই।
মেয়েটা সিগারেট নিভে ফেলার পরেও বাজে ব্যবহার করতে ছাড়েনি এই সভ্য সমাজের মানুষ।
অথচ একজন নারীকে গনধর্ষণ করে তার ভিডিও ছেড়ে ভাইরাল করলেও কিচ্ছু করতে পারেনা এই সভ্য সমাজ।
ভিডিওতে আরেকজন চিৎকার করে বললেন- এই জন্যই দেশে ধর্ষণ বেড়ে গেছে ইত্যাদি।
মেয়েটি চলে যাবার সময় ঘাড় ঘুরে তাকাচ্ছিলো। তখন আবার ভিডিও ম্যান বারবার বলছিলেন- ত্যাজ কতো দেখেছেন, যা ভাগ, আবার ঘাড় ঘোরাস, তাকানোর ভাব দেখছেন?
আমাদের সমাজটা একদিনে এমন হয়নি। দিনে দিনে আমরাই এমনটা বানিয়েছি। অন্যায়কে অন্যায় না বলতে পারার কারণেই বোধহয় কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেও আমরা অন্যায় বলে রুখে দাঁড়াতে পারিনা।
যে দেশে একজন নারীর পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়াটা ঘোর অন্যায় অথচ পাবলিক প্লেসে জিপার খুলে পেশাব করা অন্যায় নয় !
ভিড়ের মাঝে সুযোগ বুঝে নারীর শরীরে হাত দেওয়াটা অন্যায় নয়। গনধর্ষণ করে নারীর শরীর নিয়ে ভিডিও ভাইরাল করে সেই নারীর এবং তাঁর পুরো পরিবারকে নি:স্ব করে দেওয়া কি অন্যায় নয়?
অন্যায় কেবল নারীর ঠোঁটে জলন্ত সিগারেট থাকা। সভ্য সমাজের পুরুষের দল আপনারা নারী মুখের জ্বলন্ত সিগারেট নয়, নারীকেই এই সমাজ থেকে নিষিদ্ধ করুন। নয়ত একে একে সকল নারী যেদিন ঘাড় বাঁকা করে আড়চোখে তাকাবে সেদিন আপনাদের ঘাড়ও মটকে যেতে পারে !
ইসমত আরা প্রিয়া : কথাসাহিত্যিক, কবি। প্রকাশিত গ্রন্থ- নীলপদ্ম (কবিতা); আওয়াজ (উপন্যাস); কান্নাগুলোর প্রার্থনা (উপন্যাস); মিরার নীল শাড়ি (ছোট গল্প)।