জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে শতবর্ষী হতেন এবছর। ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে নিহত হন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার ও স্থপতি।জাতীয় শোকদিবসে প্রশান্তিকার আয়োজন ‘রক্তস্নাত শোকাহত আগস্ট’ সংখ্যায় লিখেছেন প্রশান্তিকার বার্তা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আরিফুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু্কে লিখতে গেলে এক ধরণের আবেগ মনের মধ্যে কাজ করে।বিশাল ব্যক্তিত্বের, কর্মযজ্ঞের,নেতৃত্বের, যুগান্তরের ইতিহাস সৃষ্টিকারী একজন মানুষকে নিয়ে লেখার সময় মনে হয় তাঁর কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা লিখি।একবার মনে হয় আমাদের পরম সৌভাগ্যের কথা লিখি। কেননা তাঁকে আমাদের মাঝে পাওয়াটাই যে পরম সৌভাগ্য বা আনন্দের ব্যাপার। সেই আনন্দের অনুভূতির কথাই লিখি। আবার তখনই মনের ভেতর হু হু করে কেঁদে উঠে। চোখ ছলছল করে। রাগে সারা শরীর দরদর করে ঘামতে থাকে। তখন কেবলই মনে হয় কিভাবে লিখব আমাদের আনন্দের কথা।এমন একজন মানুষকে আমরা যাকে মেরে ফেলতে পারি! এই অনুকম্পা বুকের ভেতর সবসময় কাতর করে তোলে। যাইহোক যত কষ্টই হোক তবু আজ আনন্দের কথাই লিখব। একজন বড় মনের মানুষ পাওয়ার আনন্দ । একটি অনুভূতি পাওয়ার আনন্দ ।
ছোটবেলা। তখন বুঝতে শিখেছি মাত্র ।ভালোকে ভালো, মন্দকে মন্দ ধারণ করতে শিখেছি।মনে প্রাণে বুঝার বা জানার চেষ্টা করতাম আমাদের বঙ্গবন্ধুকে। বিভিন্ন জনের কাছে অতি মনোযোগ নিয়ে গল্প শুনতাম। যত শুনতাম ততই মনের ভেতর একধরণের ভালোলাগা কাজ করত। খুব আবেগি হয়ে শুনতাম।১৫ আগষ্ট কিংবা ৭ মার্চ এলেই ভোররাত থেকে মাইকে তার বজ্র কণ্ঠ বাজাতাম আর ভাবতাম আহা এমন করে কেউ ভাষণ দিতে জানে! এমন করে কেউ মানুষ কে ভালোবাসতে পারে! এমন করে কেউ অধিকার নিয়ে মানুষের মনের ভেতর ঢুকতে পারে! হ্যা সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। কিভাবে মানুষকে কাছের মানুষ, আপন মানুষ ভাবতে হয় সেই অপার ক্ষমতা যে একমাত্র তাঁরই আছে।
অথচ… সেই আপন মানুষকে আমরা ধরে রাখতে পারলাম না।আমার কেবলই ভাবতে ইচ্ছে করে । দুটি দিক খুব করে ভাবায় আমাকে। তারমধ্যে ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পূর্বপর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এই দেশ মাতৃকার জন্য কী করেছিলেন বা জীবিত থাকলে কী কী করতেন। কেমন বাংলাদেশ থাকতো আমাদের। একবার মনে হয় উন্নত বাংলাদেশ। অনেক উন্নত। আরেকবার মনে হয় অহংকারের বাংলাদেশ পেতাম। যে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সকল দেশ অনুসরণ করে চলবে। এতো স্বপ্ন দেখার পর কোন স্বপ্নই মেলাতে পারিনা। স্বপ্ন গুলো আরো বড় করে দেখতে ইচ্ছে করে। আসলে তাকে নিয়ে যে যেকোন স্বপ্নই দেখা যায়। তিনি যে আমাদের স্বপ্নের দূত ছিলেন। যেমন স্বপ্ন দেখিনা কেন এটা হলফ করে বলতেই পারি। আমরা নিশ্চিত এক ভালোবাসার বাংলাদেশ পেতাম। যে দেশে থাকবেনা পরশ্রীকাতরতা। ওনার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বেশ কয়েকবার পরশ্রীকাতর শব্দটা উল্লেখ করছেন। ওনি জানতেন বাংলাদেশের মানুষ কতটা পরশ্রীকাতর । অন্যের ভালোতে যেমন আমাদের খারাপ লাগে তেমনি অন্যর মন্দে আমাদের আনন্দ লাগে। আরও একটা বাংলাদেশ আমরা অবশ্যই পেতাম সেটা হলো মানুষে মানুষে বৈষম্যহীনতা। আকাশচুম্বি এই বৈষম্য অবশ্যই দেখতে হতোনা। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন গুলো শুধু স্বপ্নের মতোই থেকে গেল। ৭৫ সালের পরবর্তিকালের কথা আমার ভাবতে ভয় লাগে। ঘেন্না লাগে। সইতে পারিনা । তাই আর লিখতেও ইচ্ছে করেনা এই নিষ্ঠুর হায়েনার মানুষরূপী হন্তাদের নিয়ে। তবে শেষ কথা বলতে চাই । আমরা যদি এখনো তার আদর্শ ও তার মনোবল বুকে ধারণ করে চলি তাহলে একদিন না একদিন স্বাধীন বাংলাদেশের আস্বাদ নিতে পারবো। অবশ্যই পারবো।
১৫ আগষ্ট ২০২০।
আরিফুর রহমান
কথাসাহিত্যিক, বার্তা সম্পাদক, প্রশান্তিকা।
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।