প্রশান্তিকা ডেস্ক: বাঁধনহারা ব্যাপারটা বুঝি খুঁইয়ে বসেছিল সবাই। সেই কবে কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একদন্ড সময় কাটানো, একান্তই নিজের বা সহপাঠিদের সাথে। বিদেশ বিভূইয়ে জীবনেতো তা দুষ্প্রাপ্য। যেখানে সময় মানেই আয় নয়ত ব্যয়। দাওয়াত মানেই গদবাঁধা আনুষ্ঠানিকতা! কিন্তু মেয়েদের যেই আড্ডা, আরো খোলাসা করে বললে ‘সখি কথন’, তা সত্যিই চিন্তার বাইরের ব্যাপার।
অবস্থা যখন এমন, তার মধ্যেই পরিকল্পনা অভিনব মিলন মেলার। যার আয়োজক অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী নারীদের ফেইসবুক গ্রুপ ‘অসি বাংলা সিস্টারহুড’। যার বর্তমান সদস্য সংখ্যা সাড়ে ছ’হাজারেরও বেশী। এক কথায় বলা যায় অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী মেয়েদের অভয়ারণ্য এই গ্রুপ।
কোথায় কি ভালো পাওয়া যায়, বাচ্চার অসুস্থতার কারণ কি হতে পারে, রান্নার সহজ রেসিপি, ভিসা প্রসেসিং কিংবা পারিবারিক সহিংসতায় আইনী সহায়তা- এসব বিষয়ে আলোচনাসহ তথ্য আদান প্রদান করা হয় এই গ্রুপে। সব পেশার, সব বয়সের নারীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাঁড়ায় একে অন্যের পাশে।
গেলো ২০ অক্টোবর সিডনির রকডেলের একটি ফাংশন সেন্টারে আয়োজন করা হয় এই ‘গেট টুগেদার’। অনুষ্ঠানের আয়োজক জান্নাতুল ফেরদৌস উড়ে আসেন মেলবোর্ন থেকে। শুধু মেয়েদের নিয়ে এতো বড় পরিধির এমন আয়োজন অস্ট্রেলিয়ায় এই প্রথম। যাতে উপস্থিত ছিলেন প্রায় তিনশ জন।
আড্ডা, খুনসুটিতে সময় কাটাতে আগে থেকেই উপস্থিত সকলে অর্থাৎ শুধুমাত্র মেয়েরাই, ‘হাজব্যান্ড ওয়াজ নট এ্যালাউড’! দুপুরের খাবারের পাশাপাশি অতিথিদের জন্য ছিল গেম শো, লটারি এবং সম্মাননা প্রদান। সবাই মিলে কেক কাটা আর বাংলা গান- নাচে ভরপুর একটি অসাধারণ বিকেল, যার প্রতীক্ষায় পার হয়েছে বহু বছর।
গিটার জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর সুরের ছোঁয়া লাগেনি এমন কেউই ছিলেন না এ অনুষ্ঠানে। প্রিয় শিল্পীর প্রয়াণ উপলক্ষে সবাই মিলে গাইলেন ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে…’। গানের সুরে সুরে কারো কারো চোখ হয়ে উঠেছিল টলমল।
শুরুতে অনুষ্ঠান আয়োজনে আর্থিক ব্যাপারটা নিয়ে কিছুটা দু:শ্চিন্তা থাকলেও অল্প ক’দিনেই চিন্তামুক্ত হন জান্নাত। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন গ্রুপের সদস্যরা। পুরো অনুষ্ঠান ডেকোরেশনের দায়িত্ব নিয়ে নেন ‘কানিতা ইভেন্ট সল্যুশন’। মেয়েদের অনুষ্ঠান বলেই কিনা, কানিতা এমনভাবে ডেকোরেশন থিম পরিবেশন করেছেন যে, প্রথম দেখাতেই মনে হবে চাঁদের দেশে বসেছে শত পরীর মেলা।
অনুষ্ঠানের সফলতায় গ্রুপের নয়জন স্বেচ্ছাসেবীকে ধন্যবাদ জানান অসি বাংলা সিস্টারহুডের প্রতিষ্ঠাতা জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, “কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া এমন একটা আয়োজন ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। সবার সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে।” আগামীতে অস্ট্রেলিয়ার অন্য শহরেও এমন আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান জান্নাত।
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া আসার পর, শুরুতেই নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হন জান্নাত। কারোর কাছেই একসাথে সব তথ্য পাচ্ছিলেন না। একজন এটা জানেতো, অন্যজন আরেকটা জানে। তখনই চিন্তা করেন যে একটা প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন, যেখানে সবাই তথ্য আদান প্রদান করতে পারবে। এই চিন্তা থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে অসি বাংলা সিস্টারহুড।