অস্ট্রেলিয়াতে চাকুরি পাবেন কিভাবে? (পর্ব-১)- অনীলা পারভীন

  
    

অস্ট্রেলিয়াতে চাকুরি খোঁজ করা এবং চাকুরি পাওয়া দুটোই বেশ দুরূহ। বিশেষ করে বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য। আমরা অনেক মেয়েই চাকুরি করতে চাই, কিন্তু কিভাবে চাকুরি খুঁজবো বুঝতে পারি না। অথবা চাকুরির জন্য আবেদন করলেও কোনো উত্তর আসে না। এই সমস্যায় আমরা অনেকেই ভুগে থাকি। এক্ষেত্রে সঠিকভাবে আবেদন করতে না পারাটাই প্রধান অন্তরায়। চাকুরি খোঁজ করাও আসলে একটি ফুলটাইম চাকুরি। তাই চাকুরি পেতে হলে সঠিক উপায়ে শ্রম দিতে হবে। অষ্ট্রেলিয়াতে যারা নতুন এসেছেন এবং চাকুরি খুঁজছেন, তাদের জন্য কিছু টিপস।

প্রথম বিবেচ্য বিষয় হলো, আপনি কি ধরনের চাকুরি খুঁজছেন?
আপনি যদি এদেশে নতুন এসে থাকেন এবং আপাতত যে কোনো একটা কাজ হলেই চলবে এমন কাজ খোঁজেন, তবে বাংলাদেশী  দোকানগুলোতে চোখ রাখুন। ওখানে বিভিন্ন ধরনের কাজের বিজ্ঞাপণ থাকে। আপনি ওখান থেকে কাজ খুঁজে নিতে পারেন। অথবা শপিং মলগুলির বিভিন্ন দোকানে, ফাস্টফুড শপগুলিতে চোখ রাখতে পারেন। তার আগে আপনাকে একটা (resume/CV রেজিউমি/সিভি) তৈরী করতে হবে।
এধরণের কাজের ক্ষেত্রে দেশের উচ্চতর ডিগ্রী বা অভিজ্ঞতা উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন নাই। বরং কাজের ধরণ বুঝে অভিজ্ঞতা লিখবেন। যেমন ধরুন, আপনি কাস্টমার সার্ভিস বা চেক আউট পজিশনের জন্য আবেদন করবেন। তাহলে অবশ্যই রেজিউমিতে উল্লেখ করবেন যে, দেশে এধরনের কাজ করেছেন। যদি এখানে পরিচিত কারো একই ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে, তবে তাকে অনুরোধ করে তার নামটি রেফারি হিসেবে দিন। চাকুরিদাতা ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান খোঁজ নিলে যাতে আপনার পরিচিত লোকটি (রেফারি) বলতে পারেন, আপনি তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন এবং কাজ জানেন। এছাড়া রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে নিবন্ধন করে রাখতে পারেন।  এদেশে অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, এখানে কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম এবং তাদের ওয়েবসাইট দিলাম-
১.Hays
https://www.hays.com.au/
২.Michealpage
https://www.michaelpage.com.au/
৩.People2People
https://www.people2people.com.au/
৪.Ransted
https://www.randstad.com.au/
৫.PagePersonnel
https://www.pagepersonnel.com.au/

এই রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওয়েবসাইটে ঢুকে নিবন্ধন করে রাখুন। চাকুরিদাতা সংস্থাগুলোর নিবন্ধন করতে আপনার জীবন বৃত্তান্তসহ রেজিউমি সাবমিট করতে হবে। তারপর কোনো একজন রিক্রুটিং এজেন্ট আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ফোন করবে। ইন্টারভিউ কল পেলে অবশ্যই ‘How to face Interview’ এটা Google করে দেখে ও শিখে নিতে পারেন।  কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়া ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
বাংলাদেশে যদি আপনার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে থাকে (বিশেষ করে ব্যাংকিং অথবা আইটি),তবে রিক্রুটিং এজেন্সি ছাড়াও নিজে নিজে Google করে চাকুরি খুঁজতে পারেন। অথবা এক্ষেত্রেও আপনি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে নিবন্ধন করে রাখতে পারেন। অস্ট্রেলিয়াতে ব্যাংকিং এবং  আইটি পেশার কথা কেন উল্লেখ করলাম? কারণ এদুটো পেশাতেই বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা দিয়ে চাকুরি পাওয়া সম্ভব ও তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে যদি আপনি কোনো জুনিয়র পোস্টের (এডমিন কর্মকর্তা, ডাটা এন্ট্রি অফিসার, টেলার) জন্য আবেদন করেন, অথচ আপনার এই পদের চেয়ে উচ্চতর ডিগ্রী বা অভিজ্ঞতা আছে, তাহলে আপনার রেজিউমিতে তা উল্লেখ করবেন না। পদ অনুযায়ী অভিজ্ঞতা উল্লেখ করবেন। যেমন, বাংলাদেশে হয়তো আপনি কোনো ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা অথবা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কাজ করেছেন, কিন্তু এখানে টেলার পদে আবেদন করছেন। সেক্ষেত্রে আপনি যদি দেশের সেই অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেন, তাহলে ওভার কোয়ালিফাইড হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে চাকুরি পাবার সম্ভাবনা কমে যায়। বরং রেজিউমিতে টেলার পদের উপযুক্ত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করলে ইন্টারভিউ কল পাবার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। আর যদি সম্ভব হয় কোন পরিচিতজনকে রেফারি হিসেবে দেখান যে, তার অফিসে ভলান্টারি জব করেছেন। কারণ এদেশে ভলান্টারি জবের অভিজ্ঞতাও চাকুরি পাবার ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

যারা এদেশে মাস্টার্স ডিগ্রি করে চাকুরি খুঁজছেন, তাদের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য যে, যদি আপনি আপনার যোগ্যতায় খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী না হন, তাহলে প্রথমেই উচ্চ পদে আবেদন করবেন না।  জুনিয়র পজিশন থেকে শুরু করুন, আস্তে আস্তে উচ্চপদ পেয়ে যাবেন। এছাড়া চাকুরি পাবার আগে পর্যন্ত যদি বসে থাকতে না চান, তাহলে ভলান্টিয়ারি কাজ করতে পারেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে-
Salvation Army Australia
https://www.salvationarmy.org.au/
St. Vincent de Paul
https://www.vinnies.org.au/
The Smith Family
https://www.thesmithfamily.com.au/
আমি আগেই উল্লেখ করেছি, এদেশে ভলান্টারি কাজকেও যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়। সুতরাং হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। [ চলবে]

অনীলা পারভীন
লেখক ও কলামিস্ট
সিডনি।

 

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments