প্রশান্তিকা ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ায় গতকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের হার আশাতীত ভাবে কমে এসেছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫৪ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন না প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি বলেছেন, করোনা আক্রান্তের নিম্নগতির এই হারে সন্তষ্ট হওয়ার কোন কারণ নেই। আগামী ছয় মাস এবং পুরো ইস্টার হলিডে ঘরে বসে পালন করতে হবে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইস্টার হলিডে। প্রতি বছর এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ানরা ছুটি পালন করতে বিভিন্ন হলিডে স্পটে যায়। এই প্রথম সেই সব হলিডে হোম, বীচগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। কেউ বাড়ি ছেড়ে হলিডে পালনের উদ্দেশে কোথাও বের হলেই জেল বা জরিমানা করা হবে। গতকাল নিউ সাউথ ওয়েলসে এক মন্ত্রী মিনিস্টার ফর আর্টস ডন হারউইনকে তার হলিডে হোমে বেড়াতে যাওয়ার কারণে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি ইস্ট সিডনিতে বসবাস করেন। কিন্তু প্রায় দুইঘন্টা ড্রাইভ করে তার সেন্ট্রাল কোস্টের হলিডে হোমে যাওয়ার অপরাধে পুলিশ তাকে ১০০০ ডলার জরিমানা করে। আজ বিকেলে ডন হারউইন মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। এসময় তিনি বলেন, রাজ্যের একজন মন্ত্রী হয়ে তিনি আইন ভঙ্গ করেছেন এবং স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন।
গতকাল থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে কাজ করা কোন হেল্থ ওয়ার্কার বা জরুরী সেবাদানকারীদের প্রতি কোনরূপ কফ বা থুথু ফেললে পুলিশ ৫০০০ ডলার জরিমানা করা শুরু করেছে।

জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তের হার ছিলো ২৫-৩০ শতাংশ; এখন সেটা নেমে এসেছে ১০ শতাংশ। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা গতকাল থেকে ১০০ জনের নীচে নেমে এসেছে।
কোভিড-১৯ এর আক্রমণ এই মুহূর্তে স্মিমিত হয়ে আসলেও আবারও ভয়াবহতা বাড়তে পারে। সেজন্যে সরকার অন্তত আরও ৬ মাস সামাজিক দূরত্ব, দুই জনের বেশি জমায়েত, অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ রাখতে বলেছে।
অর্থনৈতিক সহায়তা:
অস্ট্রেলিয়া সরকার করোনা বিপর্যয় সামাল দিতে প্রায় চার সপ্তাহ আগে ১৮৯ বিলিয়ন ডলার এবং দুই সপ্তাহ আগে ১৩০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করে। এই সহায়তা পুরো দেশের জিডিপির ৯.৭ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ের সহায়তা ইতোমধ্যে নাগরিকরা সেন্ট্রাল লিংকের মাধ্যমে পাওয়া শুরু করেছে। যে প্যাকেজে হাউজহোল্ড ৭৫০ ডলার এবং প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর ১১০০ ডলার যা জবসিকার বা বেকারভাতা হিসেবে পাচ্ছেন।
অন্য ১৩০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা জবকিপার বা ব্যবসা, স্মল বিজনেস এবং সোলট্রেডারদের সহায়তার জন্য। গত বুধবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে এই সহায়তা বিলটি পাশ হয়েছে। এটি পার্লামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমান সহায়তা বিল পাশের রেকর্ড। ব্যবসা, স্মল বিজনেস, সোলট্রেডার, ট্যাক্সি ড্রাইভার, উবার বা অন্যান্য রাইড শেয়ার ড্রাইভার বা অন্যান্য এবিএন(অস্ট্রেলিয়ান বিজনেস নাম্বার) হোল্ডাররা যারা কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তারা অস্ট্রেলিয়ান ট্যাক্স অফিসের মাধ্যমে এই সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর ১৫০০ ডলার পাবেন। নীচে পাঠকদের সুবিধার জন্য সহায়তার এটিও লিংকটা দেয়া হলো:
https://www.ato.gov.au/general/gen/JobKeeper-payment/
অস্ট্রেলিয়ার কোভিড-১৯ আক্রান্তের তথ্য:
আজ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের আক্রমণে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সারাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬১৭৭। নিউ সাউথ ওয়েলসে আক্রান্ত ২৮২২ এবং মৃতের সংখ্যা ২২; ভিক্টোরিয়ায় ১২৪১( মৃত ১৩), কুইন্সল্যান্ডে ৯৬৫(মৃত ৪), ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ৪৯৫(মৃত ৬), এসিটি ১০০(মৃত ২), সাউথ অস্ট্রেলিয়া ৪২১ (মৃত ৩), তাসমানিয়া ১০৬(মৃত ৪) এবং নরদার্ন টেরিটোরি ২৭(মৃত ০)।