অস্ট্রেলিয়ায় দুই থেকে তিন সপ্তাহের কার্যকরী ‘লকডাউন’ এখনি জরুরী -ডা: সাজিদুল ইসলাম

  
    
ডা: সাজিদুল ইসলাম

কোভিড – ১৯ বা সার্স কোভিড – ২ একটি ভাইরাস, যা মানব থেকে মানবে বা এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি কোন কিছু স্পর্শ করলে সে স্থানের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ভাইরাসটি সাধারনত শিশুদের তেমন ভাবে আক্রান্ত করে না। মূল ভূক্তভোগী হন ষাটোর্ধ মানুষ যাদের অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ ( যেমন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনী প্রদাহ) বিদ্যমান।

এই রোগটি অস্ট্রেলিয়া সহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে আশংকা জনক ভাবে। আজকে এই মুহূর্ত পর্যন্ত শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার জনেরও বেশি। এযাবত অন্য যেকোন রোগে আক্রান্তের চেয়ে এই হার অনেক বেশি।

আমি অস্ট্রেলিয়ায় জেনারেল প্র‍্যাক্টিশনার হিসেবে কাজ করি প্রায় আট বছর হলো। আমার রোগীদের মধ্যে বয়স্ক রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। গত কয়দিনে রোগীদের মধ্যে ঠান্ডা – কাশি ও জ্বরের প্রাদুর্ভাব সাধারন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এই রোগটি নিয়ে শংকাও অনেক বেশী। আমরা শংকিত রোগীদের চেষ্টা করছি টেলিফোন বা ভিডিও কনফারেনসিং এর মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার, যাতে রোগীরা বাড়িতে ‘হোম আইসোলেশনে’ থাকতে পারেন।

কারো যদি হঠাৎ করে জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ; গত ১৪ দিনে বিদেশ ভ্রমণ করে এসেছেন অথবা এমন কারো সংস্পর্শে এসেছেন যার কোভিড-১৯ হয়েছে বা হবার সম্ভাবনা আছে, তারা নিজস্ব জিপি সেন্টারে ফোন দেবেন অথবা সরাসরি ন্যাশানাল কোভিড হেল্প লাইনে ফোন দিতে পারেন। অতিরিক্ত শংকিত হয়ে সরাসরি জিপি সেন্টার বা হাসপাতাল ইমার্জেন্সি তে যাবার প্রয়োজন নেই। এতে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোভিড-১৯ থেকে বাঁচার উপায় কি? যেহেতু এখনো এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি, তাই প্রতিরোধক নেওয়াই একমাত্র উপায়। আমি সবাইকে বলি, ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। এই ভাইরাসের ফ্যাট লেয়ারটি সাবানের সংস্পর্শে ভেঙ্গে যায়। ফলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারেনা। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যাবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই যথেষ্ঠ। নিউরোফেন জাতীয় ওষুধ পরিহার করতে হবে।

এসব কিছু ছাড়িয়ে, সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হোল – আইসোলেশন। বাংলায় যাকে বলে স্বেচ্ছা নির্বাসন। আপনাদের যদি কোভিড-১৯ উপসর্গ থাকে, গত ১৪ দিনে বিদেশ ভ্রমন করে এসেছেন অথবা এমন কারো সংস্পর্শে এসেছেন যার কোভিড-১৯ হয়েছে বা হবার সম্ভাবনা আছে, তাহলে প্রথমেই আইসোলেশনে যাবেন। এটাই একমাত্র আপনাকে ও আপনার পরিবারকে বাঁচাতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে – আইসোলেশন মানে কি?

এই মুহূর্তে লকডাউন না করলে অস্ট্রেলিয়া ঝুঁকিপূর্ণ দেশে পরিণত হতে পারে

আইসোলেশন মানে এমন একটি জায়গায় নিজেকে আবদ্ধ করা যেখানে প্রচুর আলো বাতাস আছে, সাথে টয়লেট সুবিধা আছে কিন্তু কোন জনমানুষের উপস্থিতির সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় কারো সাথে বিছানা, বালিশ, টাওয়েল, প্লেট, গ্লাস শেয়ার করা যাবে না।প্রয়োজনে নিজের খাবারের ব্যবস্থাটি নিজে করে নিলে ভালো। প্র‍য়োজনীয় ওষুধ পত্তরের জন্য আপনার জিপি ও কাছাকাছি ফার্মেসীর সাথে যোগাযোগ রাখলেই চলবে।

অস্ট্রেলিয়াতে এখনো স্কুল গুলো বন্ধ হয়নি। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। বয়স্কদের নার্সিং হোমে এখনো অন্তত দুজন করে পরিবারের সদস্যদের ঢুকবার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে৷ আমি আবেদন জানাই সরকারের কাছে যেন স্কুল গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ নার্সিং হোমে অপ্রয়োজনীয় সকল ভিজিট বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ আমরা যদি শুধু মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহ একটা কার্যকরী ” লক ডাউন ” করতে পারি, তবে এই রোগকে পরাস্ত করতে সক্ষম হব।

আমরা এই অস্ট্রেলিয়াতে জাতি, ধর্ম, বর্ন, নির্বিশেষে সকল মানুষ এতদিন মিলেমিশে ছিলাম৷ পৃথিবীর একেক প্রান্ত থেকে এসে এই ভূখন্ডকে আমরা আমাদের বাসস্থান বানিয়েছি। আমাদের প্রত্যেকের একে অন্যের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে৷ মাত্র কয়েকটা সপ্তাহ আমরা যদি একটু সাবধান হই, এই মহামারী থেকে আমরা মুক্তি পাবো।
সবার জীবনে ফিরে আসুক সুসাস্থ্য, শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা আর আনন্দ, এই শুভকামনা রইল।

ডাঃ সাজিদুল ইসলাম
জেনারেল প্র‍্যাক্টিশনার, স্পেশাল ইন্টারেস্ট ইন চাইল্ড হেলথ এন্ড স্কিন ক্যান্সার সার্জারী।
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments