প্রশান্তিকা রিপোর্ট: গতকাল শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী করোনা সংক্রমণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তা বিষয়ে ক্যাবিনট মিটিংয়ের পরে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেছেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা যার যার দেশে চলে যাও’। এটি আসলে প্রধানমন্ত্রীর বড় একটা বাক্যের অংশবিশেষ। যে অংশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং নিউজ পোর্টাল ভুল শিরোনাম দিয়ে খবর প্রকাশ করছে। যাতে করে অস্ট্রেলীয় বসবাসকারী ছাত্র ছাত্রী এবং তাদের দেশে অবস্থানরত পরিবার নতুন এক শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তার বক্তব্যে কথা প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের চলমান অর্থনৈতিক সহায়তা শুধু এদেশের নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য। এখানে ভিজিটর বা আন্তর্জাতিক ছাত্রদের দেখার দায়িত্ব সরকারের নয়। কারণ বাইরে থেকে যখন ছাত্ররা এদেশে পড়তে আসে তারা এক বছর চলতে পরতে পারবে এরকম অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিয়েই আসে এবং এটিই ভিসার শর্ত। কিন্তু কোন কারনে এই সংকট মুহূর্তে তারা যদি তাদের চাকুরী হারায় বা অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয় তবে অস্ট্রেলীয় সরকার তার দায়িত্ব নেবেনা। সেক্ষেত্রে তাদের উচিত স্ব স্ব দেশে ফিরে যাওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এটি কোন ভাবেই অর্থ বহন করেনা যে, ছাত্রদের অবশ্যই দেশে ফিরে যেতে হবে। আমরা প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে সিডনি প্রবাসী বেশ ক’জন আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছি।

নিউ সাউথ ওয়েলস’র সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সলিসিটর ও ব্যারিস্টার ফারাহ কান্তা এটিকে গুজব হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, “সবচেয়ে নতুন যে গুজব চালু হয়েছে সেটা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সব ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের বলেছেন, যে যে যার দেশে ফিরে যাও। এটা একটা টুইস্টেড খবর। শুধুমাত্র যারা হলিডেতে বেড়াতে এসেছেন অস্ট্রেলিয়াতে কিংবা ওয়ার্কিং হলিডে ভিসায় যারা আছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের বলছেন, এখানে আর বেড়ানোর কিছু নাই, বাড়ি ফিরে যাও। আরেকটা গুজব হচ্ছে, স্টুডেন্টদের সরকার টাকা দিবে কাজ না থাকলে। এটাও আংশিক সত্য। শুধুমাত্র লোকাল স্টুডেন্টরা টাকা পাবে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা পাবেনা। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট রা চাইলে ২০ ঘন্টার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারবে। যেকোন ধরনের উড়ো খবর শুনলে অবশ্যই সেটা ভালো করে যাচাই করে নিন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।”
ফারাহ কান্তা আরও বলেন, “যদি কোন টেম্পোরারি ভিসায় থাকা অবস্থায় আপনি অস্ট্রেলিয়ার বাইরে গিয়ে আটকা পড়েন এবং ট্র্যাভেল রেস্ট্রিকশনের কারণে ফিরতে না পারেন, তখন ভিসা এক্সটেন্ড করার জন্য এপ্লাই করতে পারেন।”
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বৃহৎ গ্রোসারী শপ উলওয়ার্থস, কোলস্ সহ বিভিন্ন কোম্পানী হাজার হাজার কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ছাত্ররা এই সুযোগটা নিতে পারে এবং অবিরাম কাজ করে যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রধানমন্ত্রী কথা প্রসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের যার যার দেশে ফিরে যেতে বললেও সেটা কোন আইন বা বিধি অনুসারে বলেননি। এটি কেবল কথা প্রসঙ্গেই বলেছেন। কথাটি তিনি না বললেও পারতেন। কারণ অস্ট্রেলিয়া কখনই বাইরের ছাত্রদের দায়িত্ব নেয় না এবং নেবেওনা।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং আরও প্রায় ১০ লাখের বেশি অস্থায়ী ভিসাধারী রয়েছেন। এদের কেউই অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক সুরক্ষা বা সুযোগ সুবিধা পাবেন না।
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসা ছাত্রদের পরিসংখ্যান জানা যায়নি। তবে ধারনা করা হয় প্রায় ৪/৫ হাজার ছাত্র ছাত্রী সারা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা বিভিন্ন টেইফে পড়াশুনা করছেন।