প্রশান্তিকা ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে জেমস ক্যামেরনের টারমিনেটর ২ চলচিত্রটি ঝড় তোলার পরপরই পরিচালক ভেবেছিলেন অ্যাভাটার নির্মাণের কথা। ১৯৯৪সালে এরজন্য ৮০ পৃষ্ঠার একটি চিত্রনাট্য লিখেন ক্যামেরন।কিন্তু ছবিটি বানানোর মতো প্রযুক্তির অভাবে বাক্স বন্দি করেন পরিকল্পনা। নির্মাণ করেন টাইটানিক রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা সফল এই চলচ্চিত্র জিতে নেয় ৯ টি অস্কার।
২০০৫ সালে ক্যামেরনের প্রতীক্ষার অবসান হয়। খ্রি–ডি প্রযুক্তির ভার্চুয়াল ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্রানুষঙ্গ চলে আসে হাতের নাগালে। ২০০৯ এর মাঝামাঝিতে ক্যামেরনের স্বপ্নের ছবি অ্যাভাটার নির্মাণ শেষ হয়। জেমস ক্যামেরন ডিজনি এনিমেটড ফ্লিম Pocahontas (১৯৯৫) দেখার পর সর্বপ্রথম অ্যাভাটার মুভিরধারণা পান।
যদিও ধারণা করা হয় Dr. Seuss এর The Lorax বইটির সাথে মুভির কেন্দ্রীয় ঘটনার কিছুটা মিল আছে। বইটির প্লট অনেকটা এরকম, একটি জঙ্গল যেখানে রহস্য জনক সুন্দর সুন্দর গাছপালা এবং অদ্ভুত জীবজন্তু ছিলো কিন্তু জঙ্গলটিকে মানুষ ধ্বংস করে দেয়।
জেমস ক্যামেরন, অ্যাভাটার মুভিটি ১৯৯৯ সালেই মুক্তি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিলেন কিন্তু তখন এতটা অত্যাধুনিক সিজিআই ইফেক্ট দেওয়ার মতো প্রযুক্তি এবং এত হিউজ পরিমাণ বাজেট কোন প্রযোজনা সংস্থা বহন করতে চাচ্ছিল না যার কারণে তিনি এটি স্থগিত করে দেন। পরবর্তিতে The Lord of the Rings: The Two Towers (2002) দেখার পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রযুক্তি এখন অ্যাভাটার এর সিজিআই ইফেক্ট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। যদিও 20th Century Fox বড় বাজেটের কারণে প্রথমে চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করার জন্য রাজি হতে চায়নি। জেমস ক্যামেরন অ্যাভাটার নিয়ে প্রচুর আত্নবিশ্বাসী ছিলেন, তখন তিনি ফক্স স্টুডিওকে বলেন যদি মুভিটি ফ্লপ হয়, তাহলে তিনি তার পরিচালন পারিশ্রমিক নিবেন না।
দ্যা গ্রেট ওয়াল ও প্রিন্স অব পারসিয়া খ্যাত ম্যাট ডেমন এবং জ্যাক গিলেনহেলকে প্রথমে পছন্দ করা হয় জ্যাক সুলি রোলের জন্য। কিন্তু জেমস ক্যামরেন চাচ্ছিলেন একদম অজনপ্রিয় একজন অভিনেতাকে। সেই সুবাদে“স্যাম অরথিংটন” কে চরিত্রটি করার জন্য আহ্বান করা হয়। তখন তিনি জীবন নিয়ে এতটাই বিধ্বস্ত ছিলেন যে, নিজ গাড়িতে বসবাস করতেন। এলিয়েনদের ব্যবহৃত “Na’vi” ভাষাটি এক হাজার শব্দ সমৃদ্ধ একটি রিয়েল ভাষা, যেটি ভাষাবিদ পওল ফরমার আবিষ্কার করেছিলেন অ্যাভাটারের জন্য। এছাড়াও চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত বেশিরভাগ জীব–জন্তুর শব্দ, “জুরাসিক পার্ক” এ ব্যবহৃত জীব–জন্তুর শব্দগুলােকে রিসাইকেল করে ব্যবহার করা হয়। মিউজিক কম্পোজার টানা দেড় বছর ভোর ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেছিলেন শুধু এই মুভির মিউজিকের পিছনে।
অ্যাভাটার ছিলো প্রথম খ্রি–ডি মুভি। শুধু মাত্র কিছু কিছু সিজিআই দৃশ্যের জন্য সেট তৈরি করতেই প্রায় ৪৭ ঘন্টার মতো সময় লাগে। এজন্যই এটি বর্তমান সময়ের অন্যতম আলাচিত চলচ্চিত্র। এটি বর্তমানে দ্বিতীয় সর্বাধিক আয় করা চলচ্চিত্র, কারণ অ্যাভেঞ্জার্স এন্ড গেম এখনও প্রথম স্থান অধিকার করে আছে। অ্যাভাটার মুভি মোট ৩টি অস্কার সহ ৮৭টি পুরস্কার এবং ১২৯টি মনোনয়ন পেয়েছে যা হলো সর্বকালের সেরা। মুভি রিলিজের পরপরই জেমস ক্যামেরন ঘোষণা দিয়েছিলেন এর সিক্যুয়াল সম্পর্কে।
জেমস ক্যামেরনের বিখ্যাত মুভি অ্যাভাটার সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালের বড়দিন উৎসবের সময়। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। অ্যাভাটার ব্যাপক সাফল্য পাওয়ার পর ঘোষণা দেওয়া হয়, ছবির সিক্যুয়েল আসছে। কিন্তু অসংখ্য ঘােষণার পরও ছবির শুটিং শুরু হয়নি। তবে অবশেষে সুসংবাদ দিলেন ছবির নির্মাতা জেমস ক্যামেরন। জানিয়েছিলেন ৩০ নভেম্বর ২০১৯ সালের সিনেমাটির শুটিং পর্ব শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ২০২২ সালে সিনেমাটির মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন নির্মাতা।