আইফোনের গতিহ্রাস: বিশাল অংকের জরিমানা গুনছে অ্যাপল

  
    

ফাহাদ আসমার: গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগে অবশেষে জরিমানার মুখে পড়লো অ্যাপল। কোন প্রকার আগাম সতর্কতা না দিয়ে পুরনো মডেলের আইফোনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়ায় ২৫ মিলিয়ন ইউরো বা ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হবে অ্যাপলকে।

ফ্রান্সের প্রতিযোগিতা এবং প্রতারণা পর্যবেক্ষন সংস্থা DGCCRF, অ্যামেরিকান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যপলকে পুরানো ফোনগুলোর গতি এবং কার্যক্ষমতা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধীর করে দেয়ায় এই নতুন এই জরিমানা আরোপ করেছে। অনেকদিন ধরেই অ্যাপল আগের মডেলের আইফোনগুলোতে কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছিল, অভিযোগ ছিল এ ব্যাপারে তারা গ্রাহকদের আগে থেকে সতর্ক করেনি। শুধু তাই নয়, ফরাসী সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী এক মাসের জন্য ফ্রান্সের আইফোন ওয়েবপেইজে ব্যানার আকারে এই লেখাটি থাকবে যে অ্যাপল প্রতারণামূলক ব্যাবসা করেছে এবং তার জন্য জরিমানা প্রদান করেছে।

অভিযোগটা অনেকদিনের। প্রতিবছর অ্যাপলের নতুন আইফোন সফটওয়্যার (আইওএস) আপডেটে তারা দুই বা অধিক বছরের বেশি পুরানো মডেলগুলোতে গতি কমিয়ে দিচ্ছিল। ২০১৭ সালে এই অভিযোগ বিশ্বব্যাপী আইফোন গ্রাহকদের ভেতর বিপুলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচন্ড অভিযোগের মুখে সেবছর ক্যালিফোর্নিয়ার কোম্পানিটি স্বীকার করে নেয় যে তারা আসলেই সফটওয়্যার আপডেটে পুরানো ফোনের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। যদিও অ্যাপল বারবার বলছে যে তারা আসলে এই কাজটি গ্রাহকদের মঙ্গলের স্বার্থেই করছে, বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা তাতে শান্ত হয়নি। তাদের দাবী ছিল আইফোন বানানো প্রতিষ্ঠানটি তাদের কোনপ্রকার আগাম সতর্কতা জানায়নি যা তাদের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। আগে থেকে এটা জানানো হলে তারা নতুন সফটওয়্যার আপডেট করতো না। তাছাড়া, অনেক গ্রাহক উচ্চমূল্যের আইফোন না কিনে অন্য কোন ফোন কিনতে পারতো। এমনকি প্রচুর পরিমাণ গ্রাহক মূল্যছাড় সুযোগ নিয়ে পুরনো মডেলের আইফোন কিনে থাকে, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আইফোন গ্রাহক, প্রযুক্তি গবেষক, বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এবং নানা দেশের সরকার দীর্ঘদিন ধরেই অ্যাপলের এই সিদ্ধান্তে বিরূপ মনোভাব জানিয়ে আসছিল। ফরাসী সংস্থার এই বিপুল অংকের জরিমানা মেনে নিলেও অ্যাপল বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে যে, নতুন ফোন বিক্রি বাড়ানোর জন্য নয়, শুধুমাত্র গ্রাহকদের কথা চিন্তা করেই পুরনো কিছু কিছু মডেলের গতি এবং কার্যক্ষমতা কমানো হয়েছিল। পুরানো ফোনের প্রসেসরের উপর চাপ কমানো এবং ব্যাটারির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতেই তাদের এই পদক্ষেপ। এভাবে পুরনো আইফোনগুলো আরো বেশিদিন কার্যকর থাকবে।

২০১৭ সালে আইফোনের গতি কমানোর এই অভিযোগ স্বীকার করে নেয়ার পর থেকে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যে সকল ফোনগুলোর গতিক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে তার মাঝে রয়েছে;

আইফোন সিক্স এবং সিক্স প্লাস, আইফোন সিক্সএস এবং সিক্সএস প্লাস, আইফোন এসই, আইফোন সেভেন এবং সেভেন প্লাস, আইফোন এইট এবং এইট প্লাস (আইওএস ১২.১ এবং পরবর্তি সফটওয়্যার),
আইফোন এক্স (আইওএস ১২.১ এবং পরবর্তি সফটওয়্যার), আইফোন এক্সএস, এক্সএস ম্যাক্স এবং এক্সআর (আইওএস ১৩.১ এবং পরবর্তি সফটওয়্যার)।

নতুন মডেলের ফোনগুলোতে এই পরিবর্তন কম দৃশ্যমান হবে বলে অ্যাপল জানিয়েছে। এখন থেকে ব্যাবহারকারীরা যে কোন ফোনের গতি কমানোর আগে পরিষ্কার ঘোষণা এবং নির্দেশিকা পাবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফরাসী সংস্থাটির আরোপিত জরিমানা এর মাঝেই পরিশোধ করা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে অ্যাপল। ফ্রান্সটুয়েন্টিফোর’কে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে যে এখন থেকে যতদিন সম্ভব আইফোনের কার্যক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবে প্রতিষ্ঠানটি।

উল্লেখ্য যে ২০১৮ সালে ইতালিয়ান বাজার প্রিতিযোগিতা পর্যবেক্ষন সংস্থা AGCM, একই অভিযোগে অ্যাপল এবং স্যামসাং উভয় কোম্পানিকে ৫০ কোটি ডলারের বেশি জিরিমানা করেছিল। এখানেই শেষ নয়, আইফোনগেট নামে পরিচিত এই কেলেঙ্কারিতে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য সংস্থার জরিমানার মুখেও পড়তে পারে অ্যাপল।

সূত্রঃ এনগেজেট, সি নেট, বিবিসি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments