দুই সিটির নতুন ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি ছিল। কিন্তু ডিএনসিসির যেসব এলাকায় কেবল মেয়র পদের উপনির্বাচন হয়েছে, সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। তবে গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটির সব কেন্দ্র মিলে ৫০ শতাংশ ভোট পড়তে পারে। তবে এটা এখনো হিসাব করিনি। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে বলছি।’
ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে এই সিটিতে মেয়র পদটি শূন্য হয়। এ ছাড়া এই সিটির ২১ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মারা যাওয়ায় ওই ওয়ার্ড দুটির কাউন্সিলর পদ শূন্য হয়। উপনির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির ১৮টি করে ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হয়।
ডিএনসিসির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪৫ জন প্রার্থী ছিলেন। ডিএসসিসির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী ছিলেন ১২৫ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪৫ জন। ঢাকা উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে সাতজন প্রার্থী ছিলেন।
ভোটার উপস্থিতি কম : ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। তবে কোথাও সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। ভোট কারচুপির অভিযোগও নেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদা বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসার দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রার্থীদের। আমি আগেই বলেছি, দুটি কারণে ভোটার উপস্থিতি কম থাকতে পারে। একটি হচ্ছে স্বল্প সময়ের জন্য এই নির্বাচন, অন্যটি হলো সব রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়া। সিইসি গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে আইইএস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এই নির্বাচনকে অপূর্ণাঙ্গ বলছেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নয়।’ নির্বাচন ভবনে নিজের কার্যালয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘আমি মগবাজারের ইস্পাহানি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সরকারদলীয় মেয়রের পোলিং এজেন্ট ছাড়া আর কারো পোলিং এজেন্ট সেখানে ছিল না। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত একই ভবনে অবস্থিত পাঁচটি কেন্দ্রের ১৫টি বুথে মাত্র ৩৮৫ জন ভোট দিয়েছে। ওই পাঁচ কেন্দ্রে ভোটার রয়েছে ৯ হাজার ৪১৩ জন।’
প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। বড় দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হতেই পারে। তা ছাড়া আজকে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিন আবহাওয়ার অবস্থাও ভালো ছিল না।’
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘বৃষ্টির কারণে ভোটারদের উপস্থিতি কম।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি উপনির্বাচনে অংশ নিলে ভালো হতো। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো।’ গতকাল সকাল ৯টায় উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি।
গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল কেন্দ্রে ভোট দেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শাফিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আগের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু না হওয়ায় মানুষ নির্বাচন থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছে। নির্বাচনে কিছু অনিয়ম চোখে পড়েছে।’
বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচনের সমালোচনা করেছে। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘আজকে যে নির্বাচন দেখছেন তা নির্ধারণ হয়ে গেছে, ঠিক হয়ে গেছে গতকাল (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতেই।’