রাফসান রোহান, ঢাকা থেকে : জনপ্রিয় সুস্বাদু ভারতীয় উপমহাদেশর মুখরোচক খাদ্যবিশেষের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ফুচকা। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের ট্রাভেল পাতায় এশিয়ার সেরা ৫০ স্ট্রিট ফুডের তালিকায় উঠে এসেছে ফুচকার নাম।

গত ২৪ আগস্ট সিএনএনের ট্রাভেল বিভাগে কেট স্প্রিঙ্গারের লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একটু মিষ্টি, একটু টক, একটু ঝাল ফুচকা বাংলাদেশের পথেঘাটে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া খাবার। ভারতে যেটি পানিপুরি, গোলগাপ্পা বা গুপচুপ নামে পরিচিত, ফুচকা সেটিরই বাংলাদেশি সংস্করণ। এটি দেখতে যেমন মুচমুচে, খেতেও তেমন।’
সেই প্রতিবেদনে এশিয়ার সেরা ৫০ খাবারের মধ্যে স্থান পেয়েছে পাকিস্তানের ফালুদা ও বান কাবাব, ভারতের জিলাপি, নেপালের মোমো, ভুটানের এমা ডাটশি, মালদ্বীপের কাভাবু, থাইল্যান্ডের খাও সোই ও সাই ক্রোক ইসান, মালয়েশিয়ার আসাম লাকসা ও নাসি লেমাক, ভিয়েতনামের বান মি এবং ফো, তাইওয়ানের বাবল টি, ইন্দোনেশিয়ার গাডো গাডো, গেটুক এবং কেরাক টেলর, ফিলিপাইনের হালো হালো ও কোয়েক কোয়েক, চীনের জিয়ানবিং ও জিয়াওজি, মিয়ানমারের লাহপেত থোকে এবং জাপানি আইসক্রিম সোফুতো কুরিমু। ফুচকা সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মুচমুচে পুরের মধ্যে পেঁয়াজ, শসা ও লেবু মাখানো আলু ভর্তা ও রাবড়ি পুড়ে দেয়া থাকে। এর ওপরে ডিমের কুচি দেয়া হয়। সঙ্গে দেয়া হয় তেঁতুলের টক।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ফুচকা এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে পরিচিত পথের খাবার হয়ে উঠলেও এটির আগমন খুব বেশি দিনের না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর মূলত ঢাকায় এটির আগমন ঘটে। ঢাকায় এসে এটির অনেক বিবর্তন ঘটেছে।
এটির আদিরূপ পানিপুরির উল্লেখ মহাভারতেও আছে বলে অনেক খাদ্যবিশারদ দাবি করেন। সেখানে এটিকে ‘জলপত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের একেক অঞ্চলে এটি একেক নামে পরিচিত। মহারাষ্ট্রে এটিকে পানিপুরি বলা হলেও মধ্যপ্রদেশে বলা হয় ফুলকি। দিল্লি, পাঞ্জাব এবং এমনকি পাকিস্তানে এটিকে বলা হয় গোলগাপ্পা। গুপচুপ বলা হয় উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশে। বাংলাদেশের মতো বিহার ও নেপালেও এটিকে ফুচকা বলা হলেও আসামে এটির নাম ‘ফুসকা’।
শহরাঞ্চলে চার চাকার ঠেলা গাড়ীতে করে ফুচকা বিক্রি করা হয়। ঠেলাগাড়ীতে প্রধানত: চটপটি বিক্রয়ের জন্য। চটপটি তৈরির সকল উপদান ও আয়োজন ঠেলায় চড়িয়ে বিক্রেতা একেক দিন একেক স্থানে থানা গেড়ে চটপচি ও ফুচকা বিক্রি করে। এদের পাওয়া যায় রাস্তার ধারে বাস স্ট্যাণ্ডে, পার্কে-উদ্যানে, সমুদ্র তীরে, জনসভাস্থলে। ক্রেতাদের জন্য থাকে চেয়ার, এমনকী শামিয়ানা। থাকে পানি পরিবেশনের আয়োজন। ফুচকার পাপড়িটিতে একটি ছোট ছিদ্র করে তার মধ্যে চটপটি ভরে দেয়া হয়। থালায় মধ্যভাগে একটি রেখে চারপাশে বৃত্তাকারে ৬-৭টি ফুচকা বিছিয়ে পরিবেশন করা হয়।

মানুষের পছন্দের এই খাবারটি নিয়ে ঢাকায় বারিধারা ডিওএইচএস কনভেনশন সেন্টারে প্রায় ২০ ধরনের ফুচকা নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ফুচকা উৎসবের। সাধারণত আটা এবং সুজি দ্বারা প্রস্তুত একটি গোলাকৃতি পাপড়ির মধ্যে মসলামিশ্রিত সেদ্ধ আলুর পুর ভরে তেঁতুলজল সহযোগে পরিবেশিত হয় এই ফুচকা। বিভিন্ন অঞ্চলে নানাবিধ নামধারণের পাশাপাশি ফুচকা পরিবেশনের রীতিটিও বিভিন্নতা লাভ করেছে। কোন কোন অঞ্চলে তেঁতুল পানির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় পুদিনামিশ্রিত পানি। আবার পশ্চিমবঙ্গে ফুচকার পুর হিসেবে ব্যবহৃত আলুতে পেঁয়াজের প্রচলন না থাকলেও ভারতের ওড়িশা প্রদেশে পেঁয়াজ ফুচকার একটি অন্যতম উপকরণ। এছাড়া সমগ্র দেশেই দই-ফুচকা অর্থাৎ টকদই সহযোগে পরিবেশিত ফুচকা জনপ্রিয়তা প্রবল।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রস্তুত হয় ফুচকা। পশ্চিমবঙ্গে ফুচকা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সাধারণত যে পদ্ধতিটি অনুসৃত হয় সেটিই এখানে দেওয়া হল।
পাপড়ি : প্রথমে আটা এবং সুজি ভাল করে জল দিয়ে মেখে একটি আর্দ্র কাপড়ে বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে রাখা হয়। তারপরে সেই মেখে রাখা আটা ও সুজি থেকে ছোট ছোট (সাধারণত নকুলদানার আকৃতি) লেচি কেটে নিয়ে তা বেলে ভেজে নিলেই ফুচকার পাপড়িটি তৈরি হয়ে যায়।
পুর : ফুচকার পুর হিসেবে সাধারণত ব্যবহৃত হয় মসলামিশ্রিত আলুসেদ্ধ। সেদ্ধ আলুতে ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, শুকনো মরিচ গুঁড়ো এবং লবণ মিশিয়ে তাতে কুচনো কাঁচালঙ্কা দিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকে এই পুর। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য পুর মাখার সময় সামান্য তেঁতুলজলও তার সাথে যুক্ত করা হয়। এর সঙ্গে আবার অনেক ক্ষেত্রেই ভেজানো ছোলা এবং মটর দেওয়াও হয়ে থাকে।
টকজল : জলের মধ্যে তেঁতুল গুলে তাতে গন্ধরাজ লেবুর রস মিশিয়ে প্রস্তুত হয় টকজল।
মনকে একটু চাঙ্গা করে তুলতে এক প্লেট ফুচকাই যথেষ্ট সেটা হোক বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা পরিবারের সকলের সন্ধ্যা মিলনায়নে।
Excellent writing