কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন আর নেই! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
এখনো চোখের সামনে দৃশ্যটা ভাসছে। এক্সিম ব্যাংক – অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ এর অনুষ্ঠান শেষে ছবি তোলার পালা। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন ৮৫ বছর বয়সের রাবেয়া খাতুন। আমি পেয়েছি নবীন সাহিত্য শ্রেণীতে। মঞ্চে তখনো আরও অসংখ্য মানুষ। কিন্তু সেই সব মানুষের মধ্যেও যেন ঝলমলে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন কেবল একজন। তিনি রাবেয়া খাতুন। কী এক আশ্চর্য বিভায় তিনি আলোকিত করে রেখেছিলেন চারপাশ।
আমি তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি স্মিত হাসলেন, তারপর বললেন, কেমন লাগছে?
কী বলব আমি? কিছুই বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না, রাবেয়া খাতুনের সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি!
অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম আমাকে বললেন, এখন ফটোশুট হবে।
রাবেয়া খাতুন আমার দিকে হাত বাড়ালেন। আমি শক্ত করে ধরলাম। তিনি সেই হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তার জাদুকরী স্পর্শের ওই অনুভবটুকু আমার সারাজীবন থাকবে। যেন এক জীয়নকাঠি। তারপর একটা দুটো কথা বললেন। এর ওর ডাকে সাড়া দিলেন। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছবি তুললেন। কিন্তু ওই হাতটা ছাড়লেন না। ধরে রাখলেন হাতের মুঠোয়ই। ওই স্পর্শটুকু সত্যিকার অর্থেই আজীবন রয়ে যাবে। এই মাত্র কিছুদিন আগেই, অন্যদিন পত্রিকায় হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কারের স্মৃতিচারণা করে লিখলেন। তার বয়স তখন ৮৬!
বছরখানেক আগের ওই মুহূর্তটুকু, এই অভাজন আমার কথা তার মনে থাকার কথা নয়। কিন্তু আমাকে বিস্মিত, মুগ্ধ করে দিল তার সেই লেখাটা। পড়তে গিয়ে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, শুধু সেই স্মৃতিই নয়, আমায় নিয়ে কতকিছু লিখেছেন তিনি! আমার লেখালেখি, উপন্যাস নিয়েও!!
এতো অবাক হয়েছি! মনে হয়েছে, তিনি যে মায়াময় স্পর্শে ছুঁয়ে দিয়েছিলেন, তারচেয়েও বেশি কিছু বয়ে নিয়েছিলেন বুকে। সেই অনুভব ছড়িয়ে দিলেন লেখায়। যা আমার বুকের ভেতর বুনে দিল অসংখ্য স্বপ্নের বীজ। সেই স্বপ্ন একদিন মহীরুহ হবেই…
মানুষ চলে যায়, যেতে হয় বলে। কিন্তু কিছু মানুষ চলে যান মূলত রয়ে যাবেন বলে। তাদের এই চলে যাওয়া অন্তহীন রয়ে যাওয়া। চির অমরত্ব…
বাংলা সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক সহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রাবেয়া খাতুনের যে বিপুল বৈচিত্র্যময় অবদান, তা হয়ে রইবে চির জাগরুক…
প্রিয়, শ্রদ্ধেয় রাবেয়া খাতুন… আপনার এই প্রস্থান মূলত চির অমরত্বের গল্পের শুরু….
সাদাত হোসাইন
কথাসাহিত্যিক, নির্মাতা
বাংলাদেশ।