আপনার সমস্যার সমাধানে…

  
    
তানজিলা মিম: ক্রিসমাস আর নতুন বছরের ছুটির আমেজ কাটিয়ে প্রশান্তিকার লেখাটি জমা দিতে একটু দেরি হয়ে গেল। সেজন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। পাঠকদের প্রশ্ন গুলো এসেছে বেশ আগেই। আমাদের নির্ধারিত টপিক নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়া হয়ে ওঠেনি। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে উত্তর দেবার চেষ্টা করেছি। সব সময় মনে রাখবেন এক্সপার্ট ওপেনিয়ন নেবার দরকার আছে তবে সিদ্ধান্ত সবসময় আপনাদের। 
আমরা প্রাইভেসির কারনে কারও পূর্ণাঙ্গ নাম প্রকাশ করছি না। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। আপনাদের প্রশ্ন যতদিন আছে আমি আছি প্রশান্তিকার সাথে।
প্রশ্ন ১: সিডনি থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। 
আমার স্ত্রী একটুতেই রেগে যান। সে সময় সামনে থাকলে তিনি আমাকেও আঘাত করেন। আ্যংগার ম্যানেজম্যান্টের নামে ৫ বার থেরাপি নিয়েও কাজ হয়নি। অনেকেই বলেন ডিভোর্স দিয়ে আলাদা থাকলেই দুজনের শান্তি আসতে পারে এবং সমস্যার সমাধান হতে পারে। আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের বয়স ৫ ও ৮ বছর। সমাধান চাই। 
উত্তর: আসলে ডিভোর্স কিন্ত সব সময় সব সমস্যার সমাধান নয়। বিশেষ করে বাচ্চাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে। যাই হোক আপনার দেওয়া তথ্য খুবই সীমিত। যেমন আপনার স্ত্রীর এই রাগ বিয়ের আগে থেকেই নাকি বিশেষ কোন ঘটনার কারণে ওনার এই অবস্থার সূচনা ? আপনাদের দুজনের সম্পর্কের ধরন কেমন, উনি কি সব বিষয়ে রেগে যান নাকি বিশেষ কোন কিছু নিয়ে তিনি রাগ করেন, আপনার বিশেষ কোন আচরণে কি উনি রাগ হন নাকি এটাই তার স্বভাব, রাগ কি শুধু আপনার সাথেই করেন নাকি সবার সাথে, উনি রেগে যাবার পর যখন রাগ প্রশমিত হয় তখন উনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন কিনা এই বিষয় গুলো জানা জরুরি। এছাড়া আপনি নিজে  আপনার স্ত্রীর সাথে আপনাদের অন্তরঙ্গ  সুন্দর কোন মুহূর্তে তার এই  বিষয় গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন কি? যদি না করে থাকেন তবে তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন। তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন যে তার এই রেগে যাবার প্রবণতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আপনাদের সন্তানরা। আপনার স্ত্রীকে যদি এই বিষয়টি রিয়ালাইজ করান যায় এবং তিনি নিজে উদ্যোগী হন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তাহলেই সম্ভব এই পরিস্থিতির থেকে মুক্তি। আমার আগের একটি লেখা যেটি প্রশান্তিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল;  ভুল বোঝাবুঝি দুর করতে হলে কমিউনিকেশন গ্যাপটাকে আগে দুর করতে হবে। আপনি আপনার স্ত্রীর ব্যাপারে সহমর্মী হয়ে সবসময় নিজের মনে মনে ভাবুন তিনি রাগ মুক্ত। ঠিক যেভাবে আপনি চান সেভাবেই কল্পনা করে যান। আমরা যদি পজেটিভ ভাইব তৈরি করতে পারি আমাদের মধ্যে , তখন সেটা বাস্তবায়ন হতে সময় লাগে না।
এছাড়া আমি বলব যদি সুযোগ থাকে বাংলাদেশে গিয়ে চারদিনের কোয়ান্টাম মেথড কোর্স টি করে নিতে পারেন আপনি এবং আপনার স্ত্রী। রাগ নিয়ন্ত্রণের ব্যপারে এটি খুবই চমৎকার একটি মেথড।
এই ভিডিও ক্লিপটি দেখতে পারেন
দাম্পত্ব সুখী পরিবার
আর কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের ব্যপারে নিচের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পারেন।
আবারো বলছি বুঝতে হবে আপনাকে। আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে বোঝাতে না পারেন পৃথিবীর আর কেউ পারবে না। ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু জয় করা যায়। হতে পারে রাগের মাঝেই আপনার স্ত্রী তার অনুরাগ প্রকাশ করেন। খুঁজে বের করুন, তাকে মমতা দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেন তিনি তো আপনার সন্তানদের মা।  তবে অনেক ক্ষত্রে কিছু সম্পর্ক থাকে যা আসলে বয়ে বেড়ান কঠিন। তবে বিচ্ছেদ করতে হলে সন্তান জন্মের আগে সিদ্ধান্ত নিলে ভাল।  আশা করি স্রস্টার করুণায় ইনশাল্লাহ আপনাদের সমস্যার সুন্দর সমাধান আপনারা পেয়ে যাবেন।
প্রশ্ন ২: জাহাঙ্গীর, মিন্টো, সিডনি। আমার ৯ বছরের মেয়ে লোকাল পাবলিক স্কুলে পড়ে। ইদানিং সে কোন এক সহপাঠির সঙ্গে মিশছে। সেই সহপাঠি (মেয়ে) সমন্ধে সব অভিভাবকরা জানেন যে সে এই বয়সেই নানারকম সেক্স বিষয়ে জ্ঞান দিতে থাকে। যেটা এই বয়সে জানার কথাও নয়। আমার প্রশ্ন এ ক্ষেত্রে আমার মেয়েকে কি ওর সাথে মিশতে না করব নাকি সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে ? বেশি মাত্রায় না করলে যদি সে বিগ্রে যায়- এই আশংকা করছি। পরামর্শ চাই প্লিজ।
উত্তর: আসলে আমার মনে হয় প্রতি বাবা মায়েরই উচিত বাচ্চাদেরকে ছোট থেকেই বাচ্চাদের বোঝার মত করে একটু একটু করে রিপ্রডাক্টিভ সিস্টেম, কিংবা প্রাইভেট অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে ধারনা দেওয়া । তাছাড়া অস্ট্রেলিয়াতে ক্লাস ফাইভ  সিক্স থেকেই  সেক্স এডুকেশন দেওয়া হয়। আমি মনে করি এটার দরকার আছে। তবে প্যারেন্ট হিসেবে বাচ্চাদের কে মোরাল জ্ঞান দেওয়া বাচ্চার প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেওয়া একটি বড় দায়িত্ব বলে আমার মনে হয়। কারন এখানে সেক্স এডুকেশন দেওয়া হলেও এই বিষয়ে মোরাল জ্ঞানটা দেওয়া হয় না সেভাবে। মোরাল জ্ঞান বলতে আমি বুঝাচ্ছি যে বাচ্চা কে বলা এটা খুব নরমাল একটি বিষয়। তবে এটা প্রাইভেট এবং বিয়ের পরই এমন সম্পর্কে যেতে হয়, ইত্যাদি। আপনার ধর্মীয় রীতি এবং কালচার অনুযায়ী বুঝান আরকি। আসলে আপনি কয়জনকে আটকাবেন। বাচ্চা স্কুলে গিয়ে কত মানুষের সাথে মিশছে। আপনি যদি আপনার সন্তানের সব থেকে কাছের বন্ধু হতে না পারেন একটা পর্যায়ে বাচ্চা স্কুলে কি করছে না করছে সেটা আপনার কাছে বলবে না। অনুপ্রাণিত হবে বন্ধুদের দিয়ে। আসলে একেক বয়সে বাচ্চারা একেক রকম আচরণ করে। যেমন টিন এজের আগ পর্যন্ত বাচ্চা চায় বাবা-মা কে অনুকরণ করতে। বাবা-মাকে খুশি করতে। কিন্তু টিন হলেই ঘটনা ঘটে ঠিক উল্টো। তখন বাচ্চারা চায় বাবা-মায়ের ঠিক বিপরীত হতে। আমরা বাঙ্গালি বাবা-মায়েরা অনেক ক্ষেত্রেই অতি আবেগে বাচ্চার বেড়ে ওঠার এই প্রসেসটাকে ইগনর করি। ফলে কখনো অতি আদরে আবার কখনো অতি শাসনে বাচ্চা ভুল পথে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে আমরা যে সোসাইটিতে থাকি সেখানে। আপনার বাচ্চা এখনো ছোট। চেষ্টা করেন তার বন্ধু হয়ে যেতে। যেন তার মনে ঘুরপাক খেতে থাকা প্রশ্ন গুলো সে আপনাকেই প্রথম বলবার সুযোগ পায়। আর প্রয়োজনে দৃঢ় হতে ভয় পাবেন না। সন্তান সবসময় দৃঢ় বাবামায়ের উপর ভরসা বেশি করে। মনে রাখতে হবে শ্বাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।
প্রশ্ন ৩: সিফাত, সিডনি। 
সালাম মিম আপু,
আমি ২০১০ সালে কোয়াল্টাম মেডিটেশনের ওপর কোর্স করেছিলাম। আমার অনেক উপকার হয়েছে। বিয়ের পরে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে হঠাৎ করে। এজন্য সবসময় ডিপ্রেশনে ভূগতাম। এখনো আমার ডিপ্রেশন রয়েছে। এখন আমি সিডনিতে থাকি। এর আগে অগাঅগা ও ক্যানবেরায় ছিলাম। আমার খুবই মন খারাপ থাকে, এই কারনে কোন কাজ করতে ভালো লাগেনা, শুধু ঘুমাতে ইচ্ছে করে। কারো সাথে কথা বলতে তেমন ভালো লাগেনা। নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। আর কোন কাজেই মনোযোগ দিতে পারিনা। বাধ্য হয়ে যেসব কাজ করতে হয় সেগুলোই শুধু করি। আমি বুঝি আমাকে সেল্ফ ইমপ্রুভমেন্টের জন্য অনেক স্টাডি, অনেক চেষ্টা করতে হবে কিন্তু কিছুই করতে ভালো লাগেনা। প্লিজ আপু আমাকে একটু সাহায্য করেন কিভাবে আমি ভালো থাকতে পারবো, কিভাবে এই অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবো ?
ধন্যবাদ। 
সিফাত।
উত্তর: আপনি বলেছেন আপনি কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করেছেন। কোর্স করলে আর নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করলে তো ডিপ্রেশন হবার কথা না। আমার মনে হচ্ছে আপনি নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করছেন না। আসলে আপনি যেহেতু কোয়ান্টাম কোর্স করেছেন আপনি একটা সৎ সঙ্ঘের সাথে যুক্ত হয়েছেন আপনি চেষ্টা করুন নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করতে  আর  সঙ্ঘের সাথে একাত্ব হওয়াটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই কাজটিকে সহজ করে দেবার জন্য দেশে বিদেশে অনেক শাখা সেল রয়েছে আপু। সিডনিতে সেল আছে। চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন আবার আমরা মেলবোর্নেও সেল চালাচ্ছি। যেখানে অনলাইনে অংশ নেবার সুযোগ রয়েছে। আরেকটা জিনিস আপু করতে পারেন সেটা হল অটসাজেশন চর্চা। এটি খুবই কার্যকরী। আমি নিজে এটা প্রাকটিস করে দেখেছি। কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে গিয়ে ডাউনলোড সেকশন থেকে “আত্মজাগরন “ অটসাজেশন ডাউনলোড করে চর্চা শুরু করতে পারেন। প্রথমে ফিউচার তারপর প্রেজেন্ট। এছাড়া হিলিং এ নাম দিতে পারেন নিজের ও পারিবারের সার্বিক কল্যাণের জন্য।  আশা করছি আপনার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন আত্মজাগরন
তানজিলা মিম
কাউন্সেলর  (মাল্টিলিঙ্গুয়াল কাউন্সেলিং ক্যাফে), কনভেনর  (কোয়ান্টাম মেডিটেশন সোসাইটি মেলবোর্ন )
ইমেইল: proshantika@gmail.com
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments