আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে । পিয়ারা বেগম

  
    
পিয়ারা বেগম

সেন্ট অগাস্টিনের একটা বিখ্যাত উক্তি, “মানুষ রাতের আকাশ দেখে বিস্মিত হয়, সমুদ্রের বিস্তৃতি দেখে অভিভূত হয়; কিন্তু সে জানে না মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় সে নিজেই। এ পৃথিবীতে আমরা সবাই মহাজাগতিক মুসাফির। এখানে আমরা আতিথ্য গ্রহণ করেছি মাত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এ মহাজাগতিক সফরে আমাদের আত্মার বাহন হচ্ছে আমাদের দেহ। আসুন, অগাস্টিনের উক্তির সত্যতা যাচাই করি। স্রষ্টা আমাদের আত্মার জন্য যে চমৎকার বাহন বানিয়েছেন সেটার দিকে তাকাই। মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যবেক্ষণ করি। আয়নায় নিজেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবলোকন করি। আহ রে, দৈহিকভাবে কত অনন্য আমরা! স্রষ্টার বিমুগ্ধকর কারিগরি উৎকর্ষের প্রতীক আমাদের এই দেহখান। গভীরভাবে উপলব্ধি করলেই বুঝতে পারব, দেহের প্রতিটি অঙ্গের গুরুত্ব আমাদের কাছে কতটুকু? তাই একে একে দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারীতা সম্পর্কে অবগত হই। তাহলেই আমরা বিস্মিত হবো। আর অনুভব করব আসলেই মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় আমরা! আরো অনুভব করব কত মহামূল্যবান সম্পদ আমরা বহন করে বেড়াচ্ছি। অথচ এই সম্পদের গুরুত্ব আমরা বুঝি না। এর যথাযথ পরিচর্যা আমরা করি না। বুঝতামই যদি তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মতো একটা অদৃশ্য অনুজীবের কাছে আমরা পরাস্ত হতাম না। এমন অলোকসুন্দর দেহরত্নটাকে করোনামুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি পালনে স্বেচ্ছায় সচেষ্ট থাকতাম। এতে আমদের এত্ত এত্ত আপনজনদের হারাতে হতো না। দিন দিন মৃত্যুর মিছিলও বাড়তনা। আর আক্রান্তের সংখ্যাও এতটা লাগামছাড়া হতো না। এর একটাই কারণ,আর এ মূল্যবান দেহটা আমরা পেয়েছি কোনরকম তদবীর ছাড়া। এমন কী অর্থের বিনিময়েও কিনতে হয় নি। তাই তো এত অবহেলা। অথচ এ দেহের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহৃত গহনার যত্ন করি। কেননা গহনা টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। কিন্তু গহনা বহনকারী শরীর বা দেহের যত্নের বিষয়ে আমরা একেবারেই উদাসীন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় “দেহটা কিন্তু আমার, সুতরাং একে ভালো রাখার দায়িত্বটাও তাই আমার।

এ প্রসঙ্গে আরো চমকপ্রদ তথ্য উল্লেখ করছি। নব্য চিকিৎসা ধারার প্রবর্তক ডা. ডীন অরনিশ, ডা. দীপক চোপড়া, ডা. ল্যারী ডসি, ডা. রবিন্স, ডা. বার্নি সীজেল, ডা. ক্রিশ্চিয়ানে নর্থট্রপ, ডা. হাবার্ট বেনসন, ডা. জোয়ান রবিসেঙ্কো, ডা. এন্ড্রু ওয়েলস, ডা. এডওয়ার্ড টাওব, ডা. মিখাইল স্যামুয়েলস প্রমুখ ‘বডি, মাইন্ড, স্পিরিট’ সাময়িকীর ১৯৯৭ সালের বিশেষ সংখ্যায় “একবিংশ শতকের স্বাস্থ্য” প্রচ্ছদ কাহিনীতে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে মত প্রকাশ করেছেন যে, সুস্থ থাকতে হলে নিজের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিজেকেই গ্রহণ করতে হবে।
এই উক্তির আলোকে নির্দ্বিধায় বলতে পারি
“আপনার স্বাস্থ্য আপনারই হাতে” এ কথাটি শতভাগ যুক্তিযুক্ত। আমার আজকের লেখায় শিরোনাম “আপনার স্বাস্থ্য আপনারই হাতে” এর আলোকেই লিখব। কারণ,এ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং গবেষকগণ সর্বোপরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতামত শুনে এইটুকু অনুধাবনে এসেছে যে, করোনার প্রতিরোধে মূল কথা এটাই। যেহেতু, এ রোগের কোন চিকিৎসা বা প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয় নি।
তাই করোনা প্রতিরোধের একমাত্র হাতিয়ার ব্যক্তি নিজে। অর্থাৎ নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই গ্রহণ করতে হবে। আসলে, শরীরকে সুস্থ রাখার এক বিশাল ক্ষমতা দিয়েই স্রষ্টা আমাদেরকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাই তো আমাদের প্রত্যেকের শরীরে দৈহিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকের দেহের নিজস্ব একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। তা সবসময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদেরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছে। এ ছাড়াও আমাদের প্রত্যেকেরই রোগের বিরুদ্ধে মানসিক প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে। আমরা জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সব সময়ই বেশি ফলপ্রসূ। কারণ,রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা অনুশীলনের মাধ্যমে রোগমুক্ত থেকে নির্বিঘ্নে জীবন-যাপন করা সম্ভব। তার জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি। প্রবল ইচ্ছাশক্তির দ্বারা স্বাস্থ্যবিধি পরিপন্থী বদভ্যাসগুলোকে সহজেই পরাভূত করা সম্ভব।

অবস্থাদৃষ্টে বলা প্রাসঙ্গিক যে, করোনার ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া কেবলমাত্র চিকিৎসার ওপর নির্ভর করাটা মূলত আত্মঘাতী সিদ্ধান্তই বলা যায়। করোনা সাড়াশির মতো আমাদের টুটি চেপে ধরার জন্য প্রতিনিয়ত ওৎ পেতে রয়েছে। এতে করে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সচেতন প্রয়াস থাকাটা জরুরী। করোনার প্রতিরোধ সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধিসমূহের গুরুত্বের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। এতে করে প্রয়োজনে আমাদের জীবনাচারের যে অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা দরকার তা পরিবর্তন করতে হবে। সর্বোপরি করোনা প্রতিরোধে যে অভ্যাসগুলো অনুসরণ করা দরকার তা আয়ত্ত করতে হবে। আর তা অবশ্যই পালন করতে হবে। আমি বলতে চাচ্ছি, পালন করার অর্থ এই নয় যে, পনের দিন করলাম আর কত? আমাদের মনে রাখা উচিত করোনা কেন, অসংখ্য কঠিন রোগের ভাইরাস বাতাসে, মাটিতে, ঘরে-বাইরে, ভেসে বেড়াচ্ছে। হয়তো বা কণ্ঠনালীতে কোটি কোটি ম্যানিঙ্গো, কক্কাস,ব্যাকটেরিয়া অবস্থান করছে। এমন কী একজন সুস্থ মানুষও বিভিন্ন রোগের ভাইরাসের বাহক হতে পারে। হয়তো আমাকে,আপনাকে সংক্রমিত করে চলেছে আমাদেরই অজান্তে। কিংবা আমিও হয় তো ভাইরাসের বাহক হয়ে অন্যদেরকে সংক্রমিত করছি। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধিগুলো আমাদের সবার জীবনে সবসময় একই গুরুত্ব বহন করে। ফলে প্রতিটি মুহূর্তেই এর প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বও সমভাবে গুরুত্ববহ। সুতরাং জীবন যতদিন স্বাস্থ্যবিধিও ততোদিন।

“আপনার স্বাস্থ্য আপনারই হাতে” এটা এই অর্থেও বলা যায় যে, করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গবেষকরা মূলত হাত ধোয়ার ওপরই গুরত্বটা বেশি দিচ্ছেন। তার কারণ, করোনাভাইরাস মূলত নাক-মুখ-চোখ এই তিনটি পথেই মানবদেহে প্রবেশ করে। তবে ভাইরাসের শেষ গন্তব্যস্থল ফুসফুস। আর এই পথগুলোতে ঢুকার প্রধান মাধ্যম আমাদের হাত। তাই হাত ধোয়ার গুরুত্ব সর্বাধিক। একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন আমাদের হাতটি দিনে কতবার নাক-মুখ-চোখে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই চলে যায়। কারণ, হাতের কাজই এটা। তবে হাতে ভাইরাস লেগে থাকল না খুশবু ছড়ালো এটার বুঝার দায়িত্ব হাতের নয়, দায়িত্বটা আমাদের নিজের।

তাহলে এবার জেনে নিই বাতাস নিয়ন্ত্রক ফুসফুস প্রসঙ্গ। ফুসফুসের কাজই অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গমন। আমরা জানি, পাকস্থলী এবং ফুসফুস এই দুইটি অঙ্গের মধ্যে দিয়েই রোগজীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্র এটি মস্তিষ্কের মাধ্যমে একটি স্বয়ংক্রিয় অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্র। এটি দিয়ে আমরা প্রায় ২৫ হাজার বার দম নিচ্ছি কোনরকম সচেতন বা চেষ্টা ছাড়াই। আমরা দমের সাথে যে বাতাস নিচ্ছি তা থেকে ফুসফুস অক্সিজেন গ্রহণ করছে। আর রক্তের হিমোগ্লোবিন থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড দম ছাড়ার সাথে তা বের করে দিচ্ছে। কী চমৎকার অটোমেটিক ব্রিদিং সিস্টেম। মূলত ফুসফুসের মাধ্যমেই অক্সিজেন শরীরের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে রক্তে। যা শরীরের কোটি কোটি কোষের প্রধান খাবার। আমাদের জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন সরবরাহ কেন্দ্র এই ফুসফুস। অথচ করোনাভাইরাসের লক্ষ্যবস্তু এই ফুসফুস। ভাবা যায়? এই ক্ষুদ্র ভাইরাসটি আমাদেরকে কাবু করার জন্য এই ফুসফুসকেই বেছে নিয়েছে? কী বলব, বুদ্ধিমত্তায় কোভিড -১৯ আসলেই একটি জিনিয়াস!
তাই গবেষকরা এই ফুসফুসের যত্নের প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ফুসফুসের সুস্থতার প্রতি মনোযোগী হতে। তাই তার সুস্থতা সুরক্ষায় ফুসফুসের ব্যায়াম করার পরামর্শও দিচ্ছেন তাঁরা। অর্থাৎ দমচর্চা করা। এবার জেনে নিই দমচর্চা সম্পর্কে কিছু তথ্য।
দমচর্চাঃ দম হচ্ছে জীবনের মূল ছন্দ। এই দমই শরীরের বাকী সকল কার্যক্রমকে ছন্দের দোলায় নিয়ন্ত্রণ করেন। কারণ,সঠিক ও পরিপূর্ণ দম প্রতিটি জীবকোষকে প্রকৃতির ছন্দে ছন্দায়িত করে। দম মানেই অক্সিজেন। আমরা খাবার বা পানি ছাড়াও কয়েক দিন বাঁচতে পারব কিন্তু দম ছাড়া অর্থাৎ অক্সিজেন ছাড়া আমরা কয়েক মিনিটও বাঁচতে পারব না। অপ্রিয় হলেও এটাই বাস্তবতা যে, অধিকাংশ মানুষই এমন মহামূল্যবান যন্ত্রটির যত্নের ব্যাপারে আমরা একেবারই উদাসীন এবং নির্লিপ্ত। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শ্বাসতন্ত্রের অনেক অসুখের কারণ হলো সঠিকভাবে দম নিতে না পারা। সঠিক ও পরিপূর্ণ দমচর্চা করলে আমাদের প্রতিটি কোষ পর্যাপ্ত অক্সিজেন লাভ করবে। তার জন্য প্রয়োজন বুক ফুলিয়ে দম নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। আর এর জন্য প্রয়োজন দিনে পাঁচ দফায় ১৯ বার করে দম নেওয়া। প্রথমবার ধীরে ধীরে নাক দিয়ে দম নিতে হবে। এতে বুক ফুলতে থাকবে। বুক পুরো ফুলে গেলে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়তে হবে। এইভাবে একবার দম নেওয়া দম ছাড়া এক এক করে গুনে উনিশবার করে দম নেওয়ার অভ্যাস করুন। সারাদিন এরকম ৫ দফা দমের চর্চা করলে ভালো হয় । তবে কতবার করা প্রয়োজন আপনার শারীরিক সক্ষমতা, বয়স বিবেচনা করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত। এতে প্রাণবন্ত ও প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠবে দেহমন। তাই সারাদিন পরিশ্রম করেও শরীর থাকবে ক্লান্তিহীন, কর্মক্ষম।
তাছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি আমাদের মানসিক শক্তিকেও উজ্জীবিত রাখতে হবে। আর তার সাথে থাকতে হবে নিজের প্রতি বিশ্বাস। বিশ্বাসই আত্মবিশ্বাসকে শাণিত করে। আর আত্মবিশ্বাস যে কোন লড়াইয়ের জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার।

এবার বলছি, হবু চন্দ্রের রাজা আর গবু চন্দ্রের জুতা আবিষ্কারের গল্প তো সবারই জানা। সমস্ত দেশটাকে চামড়া দিয়ে না ঢেকে নিজেদের পা দুটো চামড়াবৃত করাতেই লেঠা চুকে গেল। অর্থাৎ জুতোজোড়া ব্যবহার করেই যেমন শরীরটাকে ধূলোমুক্ত রাখা যায়। তেমনি নিজের শরীরের সুরক্ষা করতে স্বাস্থ্যবিধি পালন করেও করোনামুক্ত থাকা যায়। আর প্রত্যেকেই যদি স্বাস্থ্যবিধি পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকি তবে নিজেকে করোনামুক্ত রাখা খুবই সহজসাধ্য হবে। এই থাকা আর রাখাটা কোন কঠিন বিষয় নয়। আসুন, আমরা এখন আর ভীতসন্ত্রস্ত হবো না। বরং সাহসীকতার সাথে নিজের শরীরটাকে ভাইরাসমুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধিকে জীবনের অনুষঙ্গ করে নিই। নিজ নিজ পরিবারের সুরক্ষায় অধিকতর যত্নবান হই। পরিবারই কিন্তু রাষ্ট্রের মূল সংগঠন। মূল সংগঠন করোনামুক্ত হলে রাষ্ট্রও করোনামুক্ত হবে নিঃসন্দেহে। করোনামুক্ত দেশ হোক আমাদের নিরাপদ আবাসস্থল। আসুন, নিজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। আর অন্যদেরকে মেনে চলতে উৎসাহিত করি এবং করোনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় অবদান রাখি। আমরা আগের মতো আবারো, সুস্বাস্থ্য-সুস্থতায়, হাসি-আনন্দে আর কর্মব্যস্ততায় ভরিয়ে তুলব করোনামুক্ত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে।

পিয়ারা বেগম
কবি, কথাসাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক পিয়ারা বেগম আজীবন শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা নয়টি। মাদকদ্রব্যের বিস্তার, কুপ্রভাব এবং নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন এবং প্রিন্ট পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments