আমার যত ঈদ
অজয় দাশগুপ্ত
আমার কাছে ঈদ মানে এক বিরল অনুভূতি। বড় হয়ে ওঠার বয়সে বাংলাদেশে ঈদ হতো শীতকালে। নামাজ পড়তে জানিনা বলে সেটি ছাড়া আর সবকিছুই উপভোগ করতাম। মজা আনন্দ খাবার এমনকি ঈদের পাওনাও বুঝে নিতাম। আমার মনে আছে একসময় নতুন জামাও কিনেছি। বন্ধুরা সব নতুন কাপড় পরে ঘুরে বেড়াবে আর আমি পুরণো পোশাকে? সেটি হবার নয়। জানিনা কি বদলেছে কেন বলেছে কতটা বদলেছে। এটুকু জানি আমরা না গেলে অনেক বন্ধুর বাসায় ঈদ শুরু হতোনা। সালাম করার পর যেসব বন্ধুর মায়েরা জড়িয়ে ধরে বা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দিতেন তাঁরাও জননী ছিলেন আমাদের। তাঁরা কোন রাজনীতি বা অন্ধত্ব বুঝতেননা। তাঁদের কাছে অজয়, সনজীব, শহীদ,ফারুক,খালিদ বা আবু মুসায় কোন তফাৎ ছিলোনা।
আমি তেমন ঈদ দেখে বড় হওয়া মানুষ যেখানে সুবীর নন্দী, তপন চৌধুরী বা এন্ড্র কিশোর মূল নায়ক, মূল গায়ক। তখন এবং এখনো দেশের সাধারণ মানুষ এগুলো নিয়ে কলহ করেনি। মাঝখানে এসে জুটেছে রাজনীতি। এটা মানি অন্ধতা ঢুকেছে। ধর্মের নামে সংস্কার এর নামে মৌলবাদ ঢুকেছে। কিন্তু একবার ভাবুন, এই যে বিশ্বকাপ ফুটবল আমরা কাদের জন্য পাগল? কত মুসলিম দেশইতো খেলে। কই তাদের পতাকা তাদের দল নিয়ে মাথা ঘামায় কেউ? মদ শুকর আর ধর্ম যদি বিষয় হতো আর্জেন্টিনা ব্রাজিল জার্মানি নিয়ে পাগল হতাম না আমরা। তাদের পতাকা তাদের খেলোয়াড় ও খেলা নিয়ে এমন মাতামাতি বলে দেয় আমরা মূলত অসাম্প্রদায়িক।
ক’দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক ভিসি আবদুল মান্নান লিখেছেন, কলকাতায় তারকাখচিত হোটেলেও জায়গা নাই। বাজার হাটে গিজগিজ করছে বাংলাদেশীরা। ভারত বিরোধিতার রাজনৈতিক বটিকা যদি কাজ করতো সে দেশের পোশাক গহনা বা প্রসাধন জুতায় ঈদ হতো? হতো না।
এই কারণেই আমি ঢালাওভাবে বিরোধিতা করিনা। এখনো আশা ও সম্ভাবনা দেখি। এখনো মনে করি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষরাই দূর করবে বিভেদ। আজকের বাংলাদেশে মগজ ও মেধা বড় সংকটে। মগজ উড়িয়ে দেয়ার নেশায় উন্মাদেরা আছে তৎপর। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির লড়াই থামেনি। থামেনি লুটপাট। ডাকাতি চুরি এগুলোও চলছে সমানে। দূর্নীতি ও পুকুর চুরির কারণে সমতার ঈদ আসছেনা। আসে বৈষম্যের উৎসব।
যেদিন কেউ জাকাত নিতে এসে পদদলিত হবেনা, যেদিন মজুরের ছেলেটি নতুন পোশাকে ঝলমল করবে যেদিন পোশাককর্মী দিদি বা আপা ব্র্যান্ডের কাপড় গায়ে বেরিয়ে আসবে সেদিন আমাদের ঈদ হবে সর্বজনীন।
আমি একক ঈশ্বরে আস্থাশীল। তিনি যদি করুণাময় না হতেন কবেই তলিয়ে যেতো সব। না সংস্কার না আচরণ না প্রথা কিছুই কিছু না, যদি তাঁর কাছে না পৌঁছুতে পারা যায়। তেমন কেউই একদিন বাংলাদেশে সবার মঙ্গল করবেন। যা রাজনীতি পারবে না।
শুভ ঈদ।
অজয় দাশগুপ্ত
কবি, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সিডনি,অস্ট্রেলিয়া।