আমি কাউন্সিলে আপনাদের কণ্ঠ হবো: ইউসুফ আলী, প্রশান্তিকায় সাক্ষাৎকারে

  
    

মিতা চৌধুরী, মেলবোর্ন: আসছে অক্টোবরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচন। বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে ভিক্টোরিয়ার আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রচারণা। চলতি মাসের ১৭ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়ন জমা দেয়া এবং শেষ হচ্ছে ২২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২:০০ টা । আর আগামী ৬অক্টোবর থেকে ৮অক্টোবর পর্যন্ত ডাকযোগে এই ব্যালট পাঠনো হবে সকল ভোটারদের নিকট। ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা (অস্ট্রেলিয়ান ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম) ভোট গণনা শেষ হবে। আর নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৩ নভম্বের। এইবার আসন্ন এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রথমবারেরমত উল্লেখযোগ্য সংখক বাংলাদেশী প্রার্থিতা করছেন।

ইউসুফ আলী, উইন্ডহ্যাম কাউন্সিলের চ্যাফি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভিক্টোরিয়ার স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ আমাদের সঙ্গে আছেন জনাব ইউসুফ আলী। উল্লেখ্য, ইউসুফ আলী ভিক্টোরিয়ান বাংলাদেশী কমিউনিটি ফাউন্ডেশন (VBCF ) এর বর্তমান সভাপতি। ইউসুফ আলী প্রতিদ্বন্তিতা করছেন উইন্ডহ্যাম সিটি কাউন্সিলের চ্যাফি ওয়ার্ড থেকে। ভিক্টোরিয়া তথা অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে অতি পরিচিত নাম ইউসুফ আলী। ছাত্র জীবন থেকেই জড়িত ছিলেন ছাত্র রাজনীতিতে আর অস্ট্রেলিয়াতেও প্রায় শুরুর দিনগুলো থেকেই জড়িত আছেন কমিউনিটির বিভিন্ন কাজে ও উদ্যোগে। ইউসুফ আলীর কাছ থেকে আজ শুনবো এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পরিকল্পনা নিয়ে কিছু কথা।

প্রশান্তিকা: জনাব ইউসুফ আলী, ধন্যবাদ প্রশান্তিকাকে সময় দেয়ার জন্য। প্রথমেই আপনার নিজের সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে চাই।
ইউসুফ আলী: আমি ইউসুফ আলী বাংলাদেশে থাকাকালীন ছাত্রজীবন থেকেই আমি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, রাজনীতি বা সোশ্যাল ওয়ার্কের হাতেখড়ি সেই ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই। বিগত ১৬ বছর যাবৎ আমি মেলবোর্নে আছি এবং এই পুরোটা সময়ই আমি আমাদের বাংলা কমিউনিটির বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত আছি। ২০১৭ সালে আমি ভিক্টোরিয়ার বৃহৎ সামাজিক সংগঠন ভিক্টোরিয়ান বাংলাদেশী কমিউনিটি ফাউন্ডেশনের (VBCF ) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই এবং বর্তমানে আমি সেই সংগঠনেরই সভাপতির দায়িত্বে আছি। বিগত ৩/৪ বছর আমি আমার সামাজিক কর্মকান্ডের পরিধি আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটির বাইরে বৃহত্তর বা মাল্টিকালচারাল কমিউনিটিতে বর্ধিত করেছি। আমি আমার স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে আমাদের ছোট্ট পরিবার। আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ভিক্টোরিয়ার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমি আমার বর্তমান নিবাস উইন্ডহ্যাম সিটির চ্যাফি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমার জন্য আপনারা সকলে দোয়া করবেন।
একজন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি হিসেবে আমার সৌভাগ্য হয়েছে আমার বাংলাদেশী কমিউনিটির বহুসাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রতিনিধিত্ব করার এবং উইন্ডহ্যাম সিটির বিভিন্ন কর্মকান্ডে আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটির অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব করার। সামাজিক কাজ হিসাবে আমি পারিবারিক বিষয়, পারিবারিক সমস্যা এবং সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধান করেছি ও সবসময় কমিউনিটির পাশে দাড়িয়েছি এবং ভবিষৎতেও কমিউনিটির পাশেই থাকবো।

প্রশান্তিকা: এই স্থানিয় সরকার নির্বাচনে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারন?
ইউসুফ আলী: উদ্দেশ্য তো আসলে একটাই , সমাজসেবার পরিধিকে ব্যাপ্ত করা।  কারণ দেখুন এমন কিছু বিষয় বা ইস্যু আছে যেগুলোতে আমরা চাইলেই কাজ করতে পারিনা বা এডভোকেসি করতে পারিনা, একজন সমাজ কর্মী হিসেবে আমি স্থানীয় নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমস্যা সমাধানের  অগ্রাধিকার ও সঠিক প্রতিনিধিত্ব করার সেই সুযোগটা পারবো।

প্রশান্তিকা: একজন সমাজ কর্মী হিসাবে আপনার মূল উৎসাহ কি ?
ইউসুফ আলী: আমার শুরুটা হয়েছিল ছাত্র রাজনীতি দিয়ে, আর সেই ছাত্র রাজনীতিই আমাকে শিখিয়েছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতে, সমাজের একজন মূখপাত্র হয়ে জনগণের অধিকার ও অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে। আমার এই দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতাই আমার সম্পদ, আর এই অভিজ্ঞতায় আমি বিশ্বাস করি আমার এলাকা উইন্ডহ্যামের জনগণের জন্য আমি তাদের একজন হয়ে তাদের সমস্যা, অভিযোগ ও উপদেশগুলো যেমন কাছে থেকে জানতে ও বুঝতে পারবো তেমনি তাদের সেই বিষয়গুলোর সমাধান নিয়েও কাজ করতে পারবো। ভিক্টোরিয়ান বাংলাদেশী কমিউনিটি ফাউন্ডেশনের (VBCF ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ও বর্তমান সভাপতি হিসেবে আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটির জনগণের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগের সঙ্গে ছিলাম এবং বেশ কিছু কাজ আমার উদ্যোগেই সকলকে নিয়ে হয়েছে। আপনারা জানেন আমরা বর্তমানে উইন্ডহ্যাম সিটি কাউন্সিলের সঙ্গে আন্তর্জান্তিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি, বিভিন্ন সময়ে আমরা নানাধরণের উদ্যোগ নিয়েছি বাংলা কমিউনিটি ও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে, এই কোভিড সময়ে আমরা এখানে পড়তে আসা বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ও বাংলাদেশীদের পাশে দাঁড়িয়েছি, মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছি, কোভিড’এর সময়ে আমরা কোরবানীর ব্যবস্থা করেছি বাংলাদেশীদের জন্য, আমরা অনলাইনে ফাইন্যান্স, ক্যারিয়ার পাথওয়ে, হেলথ ও ওয়েলবিয়িং, ম্যান্স হেলথ, ওমেন হেলথ সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনুষ্ঠান করেছি। আমরা কমিউনিটিতে বিনামূল্যে সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ করেছি, আটকে পড়া বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ানদের ফেরত আনতে যৌথ ভাবে কাজ করেছি এবং যেসকল বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়াতে আটকে পড়েছিলো তাদের দেশে ফিরত পাঠাতে উদ্যোগ নিয়েছি মেল্টন ট্রাভেলকে সঙ্গে নিয়ে। মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাই আমার উৎসাহ ও উদ্দীপনা।

প্রশান্তিকা:  কেনো আপনি আপনাকে একজন যোগ্য প্রার্থী মনে করছেন ?
ইউসুফ আলী: আমি একটা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে তৃণমূল পর্যায়ে সোশ্যাল ওয়ার্ক আর মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং কাজ করছি। আমি নিজেও একজন অন্য আর দশজন সাধারণ অস্ট্রেলিয়ানের মতোই যাকে বলি “অর্ডিনারি এভরি’ডে পিপল”, আর তাই আমি জানি কমিউনিটির পরিষেবাগুলোর ঘাটতি কোথায়, আমি জানি কমিউনিটির সাধারণ মানুষের চাহিদা কি, অভিযোগ কি, সমস্যা কি।  আর তাই আমি জানি কোন বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে, আমি জানি আমাদের সিটি কাউন্সিলের জনগণের বর্তমান চাহিদাগুলো কি। আমি হতে পারবো এই সিটি কাউন্সিলের জনগণের কণ্ঠ।

প্রশান্তিকা:  আপনার নির্বাচনী অঙ্গীকার সম্পর্কে একটু বলুন।
ইউসুফ আলী: অস্ট্রেলিয়া একটি মাল্টিকালটারাল দেশ, আমি আমার সকল কর্মকান্ডে এই মাল্টিকালচারিজমকে প্রাধান্য দিয়ে সামনে এগুতে চাই। আমার নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোও তাই আমাদের এই বহুজাতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়েই।
আমি আমাদের সিনিয়র সিটিজেনদের সমস্যাগুলো নির্ণয় ও তা সমাধান নিয়ে কাজ করতে চাই। নারী স্বাস্থ্য সেবা এবং চাইল্ড কেয়ার ইস্যুগুলো নিয়ে স্টেট গভর্নমেন্টের সঙ্গে লিয়াঁজো ও কাজ করতে চাই। শিশু কিশোরদেড় সমস্যা ও তাদের বিকাশে যথাযথ উদ্যোগ নিতে চাই ও তাদের সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টিতে আরো উদ্যোগ নিতে স্টেট গভর্নমেন্টের সঙ্গে লিয়াঁজো ও কাজ করতে চাই। লোকাল বিজনেস ও কর্মসংস্থানে প্রয়োজনীয় পরিসেবাগুলি নিশ্চিত করতে স্টেট গভর্নমেন্টের সঙ্গে লিয়াঁজো ও কাজ করতে চাই। উইন্ডহ্যাম’এর জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশই অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ান, সেই অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের সমস্যাগুলো, অভিবাসী হিসেবে তাদের জীবনের যে প্রতিবন্ধকতা আছে সেই বিষয়গুলো এবং তাদের অস্ট্রেলিয়ান জীবনে থীতু হতে প্রয়োজনীও পদক্ষেপগুলো নির্ণয় ও তা নিয়ে স্টেট গভর্নমেন্টের সঙ্গে লিয়াঁজো ও কাজ করতে চাই। বহুজাতিক সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক বিকাশে ও তাদের নিজ নিজ সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে চর্চা করতে কাউন্সিলের পরিসেবাগুলোর ব্যাপ্তি আরো প্রসার করতে চাই। আমি সিটি কাউন্সিলের কর জনগণের সাধ্যের মধ্যে রাখার ও কমানোর জন্য জোরালো কাজ করতে চাই। ভিন্ন শপিং সেন্টারে, কমিউনিটি সেন্টারে ও অন্যান্য পাবলিক প্লেসে আরো পার্কিং, ট্যাক্সি রাঙ্ক ও ডিসএবল বৃদ্ধি করতে স্টেট গভর্নমেন্টের সঙ্গে লিয়াঁজো ও কাজ করতে চাই। আমি কাউন্সিলে আপনাদের কণ্ঠ হবো, আপনাদের সমস্যার প্রতিনিধিত্ব করবো, আপনাদের কাজ করব, আসুন আমরা একসাথে উইন্ডহাম বহুজাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিয়ে যাই ।

প্রশান্তিকা:  যদি আপনি নির্বাচিত হন তবে আপনি প্রথম কোন ইস্যুগুলোতে কাজ করবেন বা কোন ইস্যুগুলো সমাধানের জন্য এ্যাভোকেসি করবেন।
ইউসুফ আলী: উইন্ডহাম কাউন্সিলের জনগনের সমস্যা, অভিযোগ ও প্রয়োজন বোঝা এবং তার সমাধানের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও তার নেতৃত্বদানের শক্তি সামর্থ্য আমার রয়েছে। আমি জানি কি করে তৃণমূল পর্যায়ের সমস্যা নিরুপন করা যায় ও সকলকে একসঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা যায়, কাজ করার সুযোগ দিন এবং আমাকে আপনাদের কণ্ঠ হিসাবে নির্বাচন করুন। আমি আপনাদের  সমস্ত সমস্যার জন্য কাজ করতে প্রস্থুত তাই আমাকে আপনাদের প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত করুন এবং আমি আপনাদের  সঙ্গে নিয়ে সমাজের সকলের জন্য কাজ করতে চাই । আপনারাই আমার শক্তি এবং প্রেরণা , আপনারা আপনাদের মূল্যবান  ১ নাম্বর ভোটটি আমাকে দিন। আমি আপনাদেরই একজন এবং আমি আপনাদের আশাভঙ্গ করবোনা, আপনাদের ভোটের সন্মান আমি রাখবো।

প্রশান্তিকা:  জনাব ইউসুফ আলী আবারো অনেক ধন্যবাদ প্রশান্তিকাকে সময় দেয়ার জন্য। প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে রইলো অশেষ শুভকামনা।
ইউসুফ আলী:
আপনাকে এবং প্ৰশান্তিকাকেও অনেক ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে উইন্ডহ্যাম সিটির সকল বাসিন্দাকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments