বাংলাদেশের প্রায় হারাতে বসা লোক সংগীত বা পালাগানকে যে আবার নিজ মর্যাদায় ফিরিয়ে এনেছেন ও সমাজের সর্বস্তরের শ্রোতার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি মাটি ও মানুষের শিল্পী মমতাজ বেগম। নিজ কর্মগুণেই যিনি আপামর বাংলাদেশীর হৃদয়ে নাম লিখিয়ে নিয়েছেন ‘ফোক সম্রাজ্ঞী‘ হিসেবে, নাম লিখিয়েছেন গিনিজ বুকে। পরপর তিনবার জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সাংসদও তিনি।
এই গুণী শিল্পী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া সফর করছেন, প্রথমবারের মতো এসেছেন মেলবোর্ন শহর মাতাতে। গত ২১মে মেলবোর্নের বাংলা কমিউনিটি সংগঠন ‘বাংলাদেশী কমিউনিটি এডভান্সডমেন্ট মেলবোর্ন ‘ বা সংক্ষেপে বিসিএএম এর উদ্যোগে ও আমন্ত্রণে মাতিয়ে গেলেন মঞ্চ ও ভক্তদের। আসছে ২৮ মে সিডনিতেও এক বৈশাখী মেলায় হাজার হাজার দর্শক মাতাবেন তাঁর সুর ঝংকারে। মিষ্টি ব্যবহারের জন্য ‘পাশের বাড়ির মেয়ে‘ হিসেবে তার সুনাম ভক্তদের মাঝে। সেরকমই এক ঘরোয়া পরিবেশে এই ফোক সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন প্রশান্তিকার মেলবোর্ন প্রধান মিতা চৌধুরী। ঘরোয়া আড্ডায় উঠে এসেছে মানিকগঞ্জের মধু বাউলের কিশোরী কন্যা থেকে মাটি ও মানুষের ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ হয়ে উঠার গল্প, যার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো প্রশান্তিকার পাঠকদের জন্য।
প্রশান্তিকা: কেমন আছেন? মেলবোর্নে কেমন লাগছে?
মমতাজ: অনেক ভালো। মেলবোর্নে প্রোগ্রাম করার জন্য এই প্রথম‘ই এসেছি, সব জায়গায় যেয়েই হয়তো বলি খুব ভালো লেগেছে; তবে এখানে ভালো লাগার চেয়েও আর একটু বেশি ভালো লেগেছে। এখানে যারা আছেন তাদের সঙ্গে একটু সময় কাটালাম, সময়টা ভীষণ ভালো লাগছে। সকল মানুষের মাঝে সত্যিকার বাঙ্গালীর যে মিশামিশিটা, যে আত্মীয়তাটা, যে আতিথেয়তা তা সত্যিই খুব ভালো লেগেছে। এখানে এসে আমরা একটু সময়ও পেয়েছি সবার সঙ্গে মিশার যা সচরাচর অন্যখানে সুযোগ হয়ে ওঠে না, মিশতে গিয়েই দেখলাম সকলে কত আন্তরিক। সব ভালো মানুষগুলো এখানে থাকে।
প্রশান্তিকা: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপা, আমাদের সঙ্গ আপনার ভালো লেগেছে। অনুষ্ঠানতো অত্যন্ত সফল হয়েছে দর্শক হিসেবে এটা আমাদের এবং আয়োজকদের মতামত। তো আপনি এই প্রথম মেলবোর্ন পারফরম্যান্সকে কিভাবে বিচার করছেন?
মমতাজ: আমিও আসলে মনে করি অনুষ্ঠান অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমাকে আয়োজকরাও বলেছিলো মেলবোর্নের বাংলাদেশী কমিউনিটি আকারে ছোট, তো সেই হিসেবে আমি বলবো আমাদের প্রোগ্রাম সফল হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো আমিতো আসলে এক শ্রেণীর মানুষের জন্য গান গাই বা মাটির গান যেটা এরকম জায়গায় যারা আসে তারা অনেকেই হয়তো খুব বেশি আমাদের বাউল, পালাগান বা বৈঠকী, মুর্শিদী এই ধরণের গানের সঙ্গে কাছাকাছি না; আমার এরকম একটা ধারণা ছিল। বা কি ধরণের দর্শক পাবো এটা নিয়েও একটু পরিষ্কার ধারণা ছিল না। কিন্তু এখানে আসার পরে আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম যে, এখানের (মেলবোর্নের) দর্শকদের মাঝে সব ধরণের দর্শক আছে। সব ধরণের বলতে এই হিসেবে যে, আধ্যাত্বিক গান পছন্দ করছে, আমি মায়ের গান গাচ্ছি সেটাও পছন্দ করছে, বা আমি একটু বিচ্ছেদের গান বা যেটা বলবো “আগে যদি জানতাম রে বন্ধু‘ বা গাইছি সেটাতো তারা অংশগ্রহণ করছে, আবার “লোকাল বাস” বা “নান্টু ঘটক” এই গানেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। এই যে নানা ধরণের শ্রোতা ও দর্শক আসলে একই মঞ্চে পাওয়া সাধারণত যায় না। আমি দেশে অনুষ্ঠান করলেই দেখা যায় যে মঞ্চে আসা মাত্রই দর্শক ও শ্রোতার মাঝে হৈচৈ পড়ে যায়, লোকাল বাস লোকাল বাস বা মরার কোকিল এরকম। তারপরেও আমরা বিরহের গানগুলো করি একটু ভিন্নতা আনার জন্য, তবে অনেক সময়ই দর্শকের সাড়া কম থাকে। কিন্তু মেলবোর্নে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম যে, যখন যে গান গাইছি দর্শক তাতেই অংশগ্রহণ করছে; লোকাল বাস যেমন হৈচৈ করে গেয়েছে, তেমনি পরক্ষণেই যখন ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু’ গাইতে শুরু করলাম, দর্শক সেই গানের সঙ্গেও অংশগ্রন করেছে। এই যে বিষয়টা, এটা সত্যিকার অর্থে আমাকে মুগ্ধ করেছে।

প্রশান্তিকা: সত্যি দর্শকের সাড়া অনেক বেশি ছিল, সবাই খুবই উপভোগ করেছে। আপনি হয়তো এরই মাঝে খেয়াল করেছেন যে, মেলবোর্নের সামাজিক মাধ্যমে একটা সাড়া পড়ে গিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যরা যারা সেদিন আপনার দর্শক হয়েছিল, তারা আপনাকে ও আপনার পরিবেশনা নিয়ে যে আবেগী কথা লিখছে, তাতে পরিষ্কার আপনাকে নিয়ে তাদের আবেগের জায়গাটা বাংলাদেশের দর্শকদের চেয়ে কম নয়।
মমতাজ: সত্যি বলতে অনেক বেশি। যেটা বললাম যে, এরকম লেখা বা বিভিন্ন রকমের মাধ্যমে যেমন ফেসবুকে যে ছবিগুলো দিচ্ছেন তারা শুধু ছবিটাই দিচ্ছেন না আমাকে নিয়ে তাদের আবেগী লেখাও দিচ্ছেন। এই যে একটা ভিতর থেকে একটা মানুষকে ভালো লাগা বা ভালোবাসা, বা ভালোবাসা তৈরী করা, নতুন করে কিন্তু অনেকেই ভালোবাসা তৈরী করেছেন আমার জন্য। যারা অনেকেই আমার সম্পর্কে জানেন না বা আমার গান ওভাবে শুনেন নাই, আবার আরে কি গান শুনবো এরকম একটা বিষয়ও অনেকের ছিল; এটা থাকে, সবাইতো আর সবার গান শুনে না। তো, আমি এখানে আসার পর দেখলাম যে, সেই মানুষগুলোও যারা কোনোদিন আমার গান শুনেন নাই; তারও বলেছে না গেলে মিস হতো, উনি যে এরকমভাবে গাইতে পারে, বা মানুষকে এভাবে গানে আটকে রাখতে পারে, প্রতিটা গানের পেছনের গল্প বলে কথা বলে সবাইকে তার সঙ্গে তার গানের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে এটা না গেলে কখনো জানতেই পারতাম না।
প্রশান্তিকা: আপনি শুরুতেই বলেছিলেন মাটির গান, আপনাকে তো আমরা মাটি ও মানুষের শিল্পী হিসেবেই জানি। আজ আপনি কোটি বাঙালির ফোক সম্রাজ্ঞী। আমরা জানি আপনি বেশকিছু দাতব্য কাজের উদ্যোক্তা ও জড়িত, তো এই মাটি ও মানুষের যে শিল্পীরা, আমাদের বাউল সম্প্রদায় বা লোক শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে কি কিছু করছে বা করার ইচ্ছা আছে?
মমতাজ : আছে ও কিছুটা শুরুও করেছি। আমরা তো আসলে যারা শিল্পী তারা এই শিল্পের মাঝেই থাকতে চাই, গান গেয়ে যতটুকু সন্মান পাই সেটা নিয়েই হয়তো ভালো থাকি। কিন্তু তারপরেও আমাদের গ্রাম গঞ্জের অনেক শিল্পী আছে যারা শুধু গানকেই ভালোবাসে, এটা যে পেশাও হতে পারে, এ থেকেও যে উপার্জন করতে হবে অনেকেই তা করে না। আমার বাবাও একজন শিল্পী ছিলেন, তাদের সময়ে তারা এটা চিন্তা করেন নাই। এবং তাদের এটা নিয়ে কোনো আফসোসও ছিল না। তবে আমরা এখন এই রকম শিল্পীদের নিয়ে চিন্তা করছি। বাংলাদেশ সরকারেরও কিন্তু বেশকিছু উদ্যোগ আছে জেলা পর্যায়ে বা ইউনিয়ন পর্যায়ে এই শিল্পীদের নিয়ে। আমি নিজে আমাদের পার্লামেন্টে এই বিষয়টা তুলেছি, যে কোনো শিল্পী অবহেলিত থাকবে না, সে যেন চিকিৎসার সুযোগ পায়, ভালোভাবে একটু থাকার সুযোগ পায়। সরকার দুঃস্থ শিল্পীদের জন্যও ভাতার ব্যবস্থা করেছে।
আর ব্যাক্তিগতভাবে আমার একটা বাউল একাডেমি করার খুব ইচ্ছা, সেটা নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। যেমন আমার ‘মধুর মেলা‘ এমনই একটি উদ্যোগ, যা আমার বাড়ি মানিকগঞ্জে হয়ে থাকে। সেখানে একটা মিউজিয়াম করা যেখানে বাউল গান, বাদ্য যন্ত্র এগুলো সংরক্ষণ করা, আবার অনেক অনেক বাউল গান লিখে না রাখার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলো সংরক্ষণ করা, বাউল গানের তালিম দেয়া, এই কাজগুলি করতে চাই যার মোটামুটি ৫০ ভাগই আমরা গুছিয়ে এনেছি। এটা সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব অর্থায়নে। তাই আস্তে আস্তে গুছিয়ে আনছি।

প্রশান্তিকা : বাহ্, চমৎকার উদ্যোগ। অপেক্ষায় রইলাম এই মহতী উদ্যোগটির জন্য। লোকসংস্কৃতি কি আমাদের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বা আমরা এর থেকে দূরে চলে এসেছি?
মমতাজ : আসলে আমরা যে যার জায়গায় আছি সেখান থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ও যেতে হবে। আমি আশাবাদী এই কারণে যে আমাদের ইয়ং জেনারেশন না তরুণ শিল্পীরা কিন্তু আমাদের লোকশিল্পের দিকে ঝুঁকছে। তারা এ নিয়ে ভালো ভালো কাজ করছে। তারা এই গানগুলোকে আবার সবার সামনে তুলে ধরছে; হ্যা তাতে হয়তো ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করছে বা ফিউশন করছে, কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে আমরা কিন্তু কাজ করছি এবং এটাকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কোক ষ্টুডিওর গান গুলোই কিন্তু এর প্রমান। ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে‘ আমরা শুনে আসছি সেই কত আগে থেকে সেই গান এখন বিশ্বব্যাপী মানুষ শুনতে পারছে। তো কাজ কিন্তু হচ্ছে এমং আরো অনেক ভালো কাজ হবে এটাই আমার বিশ্বাস।
প্রশান্তিকা: আপা আরেকটা বিষয় নিয়ে জানতে চাই। আপনি তো পালাগানের শিল্পী, আমাদের লোকগান ও মাটি মানুষের গানের শিল্পী। সেই পালাগান বা ফোকগান নিয়ে আপনি নিজ স্থান করেছেন গিনিজ বুকে। তো আজকের এই ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ যখন তার সেই উঠে আসাটা দেখে এই বর্তমান অবস্থান থেকে, সে কিভাবে তা মূল্যায়ন করে। কারণ এই উঠে আসাটা তো নিশ্চয়ই সবসময় খুব মসৃন বা অনুকূলে ছিল না। সরি আপা এটা বড় প্রশ্ন করে ফেললাম, কারণ আপনি একজন সফল নারীও যে একই সঙ্গে তিনবারের সংসদ সদস্য।
মমতাজ: (হেসে ) না ঠিক আছে। আমি সত্যিই মনে করি এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই অর্জন করা যায় না, যদি আপনি বাধার সম্মুখীন না হন। আমার ভেতরে যে শক্তিটা আছে তাকে যদি আমি কাজে না লাগাই, আমি যদি থেমে যাই তবে কিন্তু ভালো কোনোকিছু অর্জন করা সম্ভব না। আর কিছু অর্জন করতে হলে অনেক কিছুই ত্যাগ‘ও করতে হয় এবং অনেক বাধাকে অনেক প্রতিকূলতাকে পার করেই আসতে হয় । আমি সেরকমই একজন, আমার বাবাও একজন বাউল ছিলেন, আমার বাবার নাম ‘মধু বয়াতী‘. তো এই যে বাবার কাছেই গানের হাতে খড়ি ‘আমি জন্ম নিয়েই দেখতে পেলাম ঘরের কোনে একতারা, শিশুকালে দেখতে পেলাম বাবার হাতে দো‘তারা ‘ (গান গেয়ে ), এই যে গান; এই গানগুলোতে একদম রিয়েল, আমার জীবন থেকে নেয়া। তো এই গানগুলো করেই বড় হওয়া। ওইসময় তো এমন ছিল যে, আমার দাদা একজন চেয়ারম্যান ছিল আবার পরিবারও একটু রক্ষণশীল ছিল। বাবা গান করতো এটা তারা বলতো ঠিক আছে, কিন্তু যখন আমিও শুরু করলাম তারা বললো যে তোমার ছেলেকেও তো শিখাতে পারতে গান মেয়েকেই শিখতে হবে ? তো আমার বাবা বলতো যে, “এটাতো শিখানের বিষয় না ; এটাতো ভিতর থেকে আসতে হবে। কার ভিতর থেকে কোনটা আসতে পারবে এটাতো সে‘ই বলতে পারবে , আমি কিভাবে এটা শিখাবো ? এটাতো আমার শিখানোর না , এটাতো আল্লাহ প্রদত্ত, ওর মধ্যে এটা আছে, ও চায়, আমি দেখতে পাচ্ছি , আমি ওকে বাঁধা দিবো কেন ?”
আমার আব্বা আমাকে সবসময় সাথে সাথে করে নিয়ে যেত এবং খুব উৎসাহ দিতো। তো ওই যে ওখান থেকে আজকের এই পর্যন্ত আসা, এটা অর্জন করতে অনেক কষ্টও গিয়েছে আবার আমার প্রাপ্তিও অনেক বেশি। সেখান থেকে আজকের এইখানে, এই গানের সুবাদে এত মানুষের ভালোবাসা, ওটা আসলে অকল্পনীয়। আমার একজীবনে যে এত প্রাপ্তি, এটা আমি নিজেই মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে পারি না, সত্যি কথা। আমি তিরিশ বছর ধরে টানা একেবারে রেকর্ডিং করছি, গান তো করছি সেই এতটুকু থেকে, সেখান থেকে তিন তিনবারের সংসদ সদস্য এটাতো শুধুই গানের জন্য, আমিতো তো অন্য কোনোভাবে আসি নাই। আমি তো রাজনীতি করি না, রাজনীতিতে পারদর্শী না। আমি শুধু মাত্র গান করি আর মানুষ আমাকে ভালোবাসে ওই ভালোবাসার জন্যই কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এমপি বানিয়েছে যে, ওকে মানুষ ভালোবাসে, আবার ও মানুষের জন্য এত কাজ করে; আমি দুটি হাসপাতাল বানিয়েছি সংসদ সদস্য হওয়ার আগেই আমার গান করার পয়সা দিয়ে। তো নেত্রী তো বঙ্গবন্ধুর রক্ত, উনার মতোই সাংঘাতিক দূরদর্শী, তো উনি বলেছেন যে মেয়েটা নিজের গানের পয়সা দিয়ে এত জনকল্যানমূলক কাজ করে তার কাছে আমার সরকারের এক পয়সার এদিক সেদিক হবে না। তো এইরকম আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে উনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি শুধু চেষ্টা করি ও আল্লাহকে বলি আমি যেন নেত্রীর এই আস্থা বিশ্বাসটা ধরে রাখতে পারি। আমি এটার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই আসলে, আর কোনো চাওয়া আমার নাই।
প্রশান্তিকা: আপনার গানের হাতে খড়ি বাবার হাতে, আপনার জীবনে আপনার বাবার প্রভাব অনেক । আজ আপনি জনপ্রিয়তার শিখরে, প্রাপ্তির কোনো কমতি নেই। বাবাকে কি বলবেন এই বিষয়ে ?
মমতাজ: আমার বাবা একজন সত্যিকারের সহজ সরল মনের মানুষ ছিলেন, একজন সত্যিকারের বাউল বলতে যা বুঝায়। বাবাকে শুধু বলতে চাই, আসলে পরের জন্ম তো আর আমরা বিশ্বাস করি না, তবে যদি পরের জনম বলে কিছু থাকে তবে আমি আবারো মধু বয়াতীর কন্যা হয়েই জন্মাতে চাই। আমি যেন এরকম একটা বাবাই বারবার পাই।
প্রশান্তিকা: বাহ্ , খুবই আবেগী ও গভীর কথা। তো আবার কি আপনাকে আমাদের মাঝে দেখতে পাবো আপা ?
মমতাজ: নিশ্চয়ই ! মেলবোর্নের দর্শক আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছে ও জানিয়েছে অবস্যই আসবো। আমার যারা আয়োজক ছিল তারও চ্যারিটি ও জনকল্যানমূলক কাজ করে, তারাও আমাকে বলেছে তারা আমার সঙ্গে সময় সুযোগ পেলেই আবারো কাজ করবেন একসঙ্গে। আমিও বলেছি, যেকোনো সময় ডাকবেন আমি উপস্থিত হয়ে যাবো। তাদের উদ্যোগগুলোর অংশ হতে পারলে আমার ভালো লাগবে।
প্রশান্তিকা: পরেরবার কি আমরা পালা গান দেখতে পাবো, আপা ?
মমতাজ: যদি আপনারা চান অবশ্যই দেখতে পাবেন। পালা গানের জন্য তো আসলে দুজন শিল্পী লাগে। আরেকজন শিল্পী হলেই আমরা হয়তো আরেকটু লম্বা সময় নিয়ে অনুষ্ঠানটা করতে পারি যেখানে হয়তো প্রথম অংশ থাকলো আমার জনপ্রিয় একক গানগুলো আর পরের অঙ্গে থাকলো পালা গান। আর এটা করতে পারলে খুব ভালো হবে যে, আপনারা ও আপনাদের ছেলেমেয়েরাও এই পালাগান নিয়ে জানলেন ও শিখলো।
প্রশান্তিকা: তো কতদিন আছেন আপা আমাদের এখানে ?
মমতাজ: এই তো ২৬ তারিখ আমরা সিডনি যাচ্ছি সেখানে ২৮ তারিখে শো আছে, সেটা শেষ করেই দেশে চলে যাবো। কারণ দেশে যেয়েই আরেকটা শো তে অংশগ্রহণ করতে হবে কক্সবাজারে। আবার সংসদ অধিবেশনও শুরু হয়ে যাবে।
প্রশান্তিকা: তো এত ব্যাস্ততার মাঝে নিয়মিত গান করার সময় আর সুযোগ কখন পান ?
মমতাজ: (হেসে) ওই যে বলে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।
প্রশান্তিকা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপা, আমার ও আমাদের প্রশান্ত পারের পত্রিকা প্রশান্তিকা থেকে।
মমতাজ: আপনাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ, আর আপনাদের পত্রিকার নামটা খুব সুন্দর। প্রশান্ত পারের পত্রিকা প্রশান্তিকা।
প্রশান্তিকা: ভালো থাকবেন আপা।
মমতাজ: আপনারাও ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা : অর্ণব ফটোগ্রাফি।