আতিকুর রহমান শুভ: সিডনির সব্যসাচী লেখক কাজী সুলতানা শিমি’র প্রথম বই বের হয়েছে। নতুন বইয়ের খবরে তিনি নিজে যেমন আনন্দিত ও আপ্লুত, আমরাও।
শিমি আপা কোথায় নেই ? মুক্তমঞ্চ খুললে শিমি আপা, স্বাধীন কন্ঠের উপসম্পাদকীয়তে তিনি, ভোরের কাগজ বা ইত্তেফাক এবং বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে নিয়মিত লিখছেন তিনি। প্রশান্তিকার প্রিন্ট সংস্করনে তিনি লিখেছেন। এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নিবন্ধ সংকলনের বই ‘শুরু হোক পথচলা’। বইটির আত্নপ্রকাশকে প্রধান বিষয় ধরে আমরা প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছিলাম শিমি আপার। সেই আলাপের চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রশান্তিকা: গল্প, কবিতা না প্রবন্ধ কোনটা লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য লাগে আপনার?
শিমি: প্রবন্ধ, বরাবরই প্রবন্ধ। গল্প, কবিতা লেখার জন্য যে আবেগ ও অনুভূতি লাগে তার’চে আমি প্রবন্ধ লিখতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমার ভাবনা চিন্তা গুলো সাম্প্রতিক নানা অসামঞ্জস্যতা নিয়ে। সেটা প্রবন্ধতেই বলা সহজ বলে আমার মনে হয়।
প্রশান্তিকা: সিডনি বসে লেখালেখি করছেন আপনি, প্রবাসের পাঠকদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
শিমি: অসম্ভব রকম ভালো। আমি এতোটা চিন্তা করিনি। স্বভাবত আমি কিছুটা অন্তমুখী, যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। কিন্তু নানা জায়গায়, নানা ভাবে আমি পাঠকদের যে সাড়া পেয়েছি তা অভিভূত হবার মতো। ডিজিটাল মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন আড্ডায়, নিমন্ত্রণে কিংবা অন্যান্য উপায়ে পাঠকদের আমার লেখার সাথে পরিচিতি বা মতামত জানতে পেরে মাঝে মাঝে বিস্মিত হয়েছি। এমনও হয়েছে আমি চিনিনা কিন্তু পরিচিত হবার সময় বলেছে আমি তো আপনাকে চিনি। আপনার লেখা নিয়মিত পড়ি। সিডনির বাইরে এমনকি হসপিটালেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ কাজী সুলতানা শিমি’র প্রকাশিত বই, ‘‘শুরু হোক পথচলা’’
প্রশান্তিকা: আপনার লেখার বিষয় বস্তু মূলতঃ কি নির্ভর?
শিমি: মূলতঃ জীবন দর্শন, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ নির্ভর। পারিপার্শ্বিকতা, সাম্য-সম্প্রীতি, জীবনবোধ, মানবিক অবক্ষয়, নির্দলীয় দেশপ্রেম, আধ্যাত্মিক, এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহ সমসাময়িক নানা প্রেক্ষাপটও রয়েছে।
প্রশান্তিকা: এজন্মে লেখক পরিচয়ে আপনাকে সবাই চিনে, আবার জন্ম নিলে কি হয়ে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন?
শিমি: দার্শনিক। একাডেমিক পড়াশুনা দর্শন হলেও সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারিনি। আমি চিন্তা করতে পছন্দ করি। দৃশ্যমান জগতের বাইরে অদৃশ্যমান কি আছে সে ভাবনা গুলো আমাকে খুব আগ্রহী করে। প্রাচীন কালের সক্রেটিস থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত যতো দার্শনিকের নাম উচ্চারণ করা হয় তার মধ্যে উল্লেখ করার মত মেয়ে দার্শনিকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। জীবন দর্শন নিয়ে তারা যে ভাবেনা তা কিন্তু নয়। অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন আমাকে খুব অস্থির করে। আরেক জন্মে সে বিস্ময়ের উত্তর পেতে চাই।
প্রশান্তিকা: আপনার প্রিয় গ্রন্থের নাম কি বা কি কি ?
শিমি: রবীন্দ্র নাথের শেষের কবিতা, বিভূতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালি, মৈত্রেয়ী দেবীর ন হন্যেতে, এরিক মারিয়া রেমার্কের অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট এবং সুশান ব্রাউন মিলারের এগিনেস্ট আওয়ার উইল। এছাড়াও অসংখ্য প্রিয় গ্রন্থ আছে যা বলে শেষ করার নয়।
কাজী সুলতানা শিমি বাংলাদেশে দর্শনের শিক্ষিকা হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেছেন। স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন সিডনিতে। একজন প্রগতিশীল কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি সর্বমহলের পরিচিত। তাঁর প্রবন্ধ সংকলন ‘শুরু হোক পথচলা’ এবার অমর একুশে বইমেলায় সব্যসাচী প্রকাশনীতে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া রোববার সিডনির একুশে বইমেলায়ও বইটি পাওয়া যাবে বলে শিমি আপা নিশ্চিত করেছেন।