মাস খানেক আগে প্রতিদিনের শিরোনামে ঠাই জায়গা করে নিয়েছিলো সিলেট, কুড়িগ্রামের বানভাসিদের আর্তনাদ। বর্ষা মৌসুমে অনাকাঙ্খিত বন্যার পানি প্লাবিত হওয়ায় সেসব অঞ্চলের মানুষের জীবন যাপনে দুর্লভ নেমে এসেছিলো। যা এক পর্যায় ভয়াবহ আকার ধারণ করে মাস খানেক স্থায়ী ছিলো।
ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা নানান বেসরকারি সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা একনাগাড়ে ত্রাণ বিতরণ এর মাধ্যমে প্রতিটা পরিবারের কাছে সাহায্য নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলো। খাদ্য কিংবা খাদ্য দ্রব্য এইসবের অভাব মেটাতে সরকারসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের একজোট সহযোগিতায় বানভাসিদের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হয় অসংখ্য লোকজন।
বানভাসিদের কাছে অনেকেই ত্রাণ পৌঁছে দেয়া নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। তবে কেউ তো মেয়েদের মাসিক নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। বন্যায় কি আর মাসিক মানবে! তাই মাসিকের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি ঘরে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে বন্ধু টাইম। বন্ধু টাইম হলো একটি অলাভজনক সংস্থা যা বাংলাদেশের মেয়েদের মাসিকের সময়, সময়মত স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। বন্ধু টাইমের প্রতিষ্ঠাতা রাফসান রোহানের সাথে কথা বলে জানা যায় বানভাসিদের কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেবার যাত্রা সম্পর্কে।
হঠাৎ একদিন রাতে বন্ধু টাইমের জেনারেল ম্যানেজার নুসরাত জাহান রিতু রাফসানকে এসএমএস করে বললো, ‘রাফসান বানভাসিদের কাছে অনেকেই ত্রাণ পৌঁছে দেয়া নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। তবে কেউ তো মেয়েদের মাসিক নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। বন্যায় কি আর মাসিক মানবে! তুই বন্ধু টাইম থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেয়া যায় নাকি দেখ।’
রাফসান নিজেও একটু ভেবে দেখলো সত্যিই তো ঋতুস্রাব কিংবা মাসিক তো আর বন্যার খবর পেয়ে থেমে থাকবে না। তাৎক্ষণিক বন্ধু টাইমের টীমের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইসমত আরা প্রিয়া এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর সানিয়া শামসুন এশা আপুর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে এক রাতেই সব ব্যবস্থা করে ফেলে তারা। শুরুতে এতো প্রচারণা করা কিংবা ফান্ডিং জোগাড় করার সময় হাতে ছিলো না একদমই তাদের। নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই যাত্রা শুরু করতে হয়। দিন দুই যাবার পরপর দেখা যায় অনেকেই এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন। যাক খানিকটা স্বস্তি মেলছে তাদের। কারণ একার পক্ষে সবার কাছে পৌঁছানো দুষ্কর ছিলো দলটির জন্য। হাতে সময় নিয়ে তহবিল সংগ্রহ শুরু করলো তারা। অকল্পনীয় ভাবে এসএমসি লিমিটেড বন্ধু টাইমের উদ্যোগে এগিয়ে এসেছিলো।
পরবর্তীতে সহ প্রতিষ্ঠাতা ফাহমিদা ভূইয়া প্রমা, কৌশিক শুভ্র এবং ইসমত আরা প্রিয়ার পরামর্শে প্ল্যানে একটু পরিবর্তন নিয়ে আসেন তারা। যেহেতু আরো অনেকেই স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাই বন্যার পরবর্তী সময়ে বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো দলটি। এমতাবস্থায় তাদের সাথে বহু সংস্থার ভলেন্টিয়ার কাজ করেছে। যাদের ছাড়া হয়তো বিতরণে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো।
বন্ধু টাইমের এমন উদ্যোগে বাহবা দিয়ে এবং আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে প্রশান্ত পারের বাঙলা কাগজ প্রশান্তিকা নিউজ এর সম্পাদক আতিকুর রহমান। যার ফলে পরবর্তীতে আল্লাহর অশেষ রহমতে বানভাসিদের কাছে বন্যা চলাকালীন সময় এবং বন্যার পরে সফলভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে বন্ধু টাইমের দলটি।