আশ্চর্য অনিবার্য সঙ্গীঃ নবনীতা দেবসেন -শাখাওয়াৎ নয়ন

  
    
পরলোকে নবনীতা দেবসেন

আমাদের আরোগ্য লাভের জন্য আর কেউ কি দিতে চাইবে তাঁর কোজাগরীর চাঁদ? শাদা দেয়ালের ময়ূরকণ্ঠী আলো, পাখির মমতা, কিংবা আগামী বছরের কলাগাছটির স্বপ্ন? আর কেউ কি আমাদের বলবে, কুন্তী নদীর গেরুয়া জলে সবুজ ছায়ার মনের কথা, শেষ হেমন্তের বুড়ো বুড়ো সবুজ পাতাদের স্বপ্ন? কেউ কি তুলসীতলায় প্রদীপ ধরে আমাদের মুখটি আর দেখবে না? কেউ কি আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করবে, আয়না তুমি কার? ইচ্ছে তুমি কার?
চিরকালই কি বিলোল প্রাসাদে সময়ের সঙ্গীত শুনে শুনে তমোহীন, স্বপ্নহীন এক পরিচ্ছন্ন ভোরে, অকস্মাৎ আত্মদ্রষ্টা বীতস্পৃহ সন্ন্যাসীর মতো অনুদ্বিগ্ন পূর্ণচাঁদ, শূন্যহাতে নেমে যাবে জলে? গঙ্গাজলে ব্যর্থচাঁদ ডুবে যেতে যেতে চিরকালই কি শুনে যাবে, বজরা ভরা প্রেমের কল্লোল।

অনেকদিন আগে এক তরুণী কাছে ডেকে বলেছিল- ‘একবার আমার চোখের দিকে তাকাও, আমি তোমার চোখের মধ্যে একটু হাসি। সে-হাসির আদরে তোমার বুক কাঁপুক, তোমার চোখ কাঁপুক’। হ্যাঁ, তাঁর হাসিতে আমার বুক কেঁপেছিল, চোখও কেঁপেছিল। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম-‘তুমি কে?’
‘আমি তোমার আশ্চর্য অনিবার্য সঙ্গী’।
তাঁর পবিত্র করুণ আঁখির অরণ্যে, শ্রাবণের বৃষ্টির মতো তাকিয়েছিলাম। সে চেয়েছিল দৃশ্যাতীতে অতনু প্রশ্রয়। প্রথমবারের মতো জেনেছিলাম, যা কিছু প্রেমময় তাই সুন্দর।
হঠাৎ কেন এমনভাবে বেদনায় মন ছুঁয়ে নয়নে চরণরেনু রেখে, মৃত্যু এসে দাঁড়াল জীবন ঢেকে? তাই বৃষ্টিতে মুখ পেতে আকাশে চোখ তুলে অসংকোচে বলবোই, ‘প্রিয় নবনীতা দেবসেন, কবি… আপনাকে ভুলে যাইনি’।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments