বালক হুমায়ূন তখন পরিবারের সাথে থাকতেন সিলেটের মীরাবাজারে। সময় ও সুযোগ পেলে একা একা শহরে হেটে বেড়াতেন। তার মূল আকর্ষণ সিনেমার পোস্টার। বালক হুমায়ূন একদিন দিলশাদ সিনেমা হলের সামনে দেখেন, সেখানে বক্রাকারে প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়ে কিছু দেখছে। কৌতুহলী হুমায়ূন ভীর ঠেলে কিছুটা ভেতরে গিয়ে দেখেন সেখানে জাদু দেখানো হচ্ছে। অদ্ভুত জাদু। কাঠের একটি বড় তক্তার সাথে গা লাগিয়ে দুইহাত যীশুখ্রীষ্টের মতো ক্রুশবিদ্ধ ভঙ্গিতে এক মায়াকাড়া চেহারার বালিকা দাড়িয়ে আছে। বালিকার দশ বার ফুট দূরে চোখ বাঁধা অবস্থায় জাদুকর দাঁড়িয়ে আছেন। জাদুকরের হাতে ধারালো ছুরি। তিনি বালিকার দিকে ক্ষিপ্রগতিতে ছুরি ছুঁড়ে মারছেন। সে ছুরি বালিকার গা ঘেসে কাঠের তক্তায় গিয়ে লাগছে। অথচ তার গায়ে লাগছে না। পুরো ছুরির বলয় তৈরি হলো বালিকার মুখ ঘিরে। সে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর জাদু। ছোট বেলায় বাবা ও দাদার কাছে ম্যাজিক ও ম্যাজিশিয়ানদের গল্প শুনতে শুনতে বড় হওয়া হুমায়ূন আজ প্রথম স্বচক্ষে অদ্ভুত ম্যাজিক দেখলেন। ম্যাজিক দেখে তো তাঁর অচেতন হওয়ার মতো অবস্থা। ওইদিনই হুমায়ূন ম্যাজিকের প্রেমে পড়েন।
পরবর্তীতে হুমায়ূন পড়তে এসে পথের জাদুকর মুখলেসুর রহমানের কাছে জাদুবিদ্যার হাতেখড়ি নেন। এরপরে নানা সময়ে নানা জাদুশিল্পীর সাথে তাঁর পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি তখন যার কাছে যা পেয়েছেন তাই শিখেছেন। হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “ জাদুর জন্য যে সাধনার প্রয়োজন হয় তার চেয়ে অনেক কম সাধনায় ঈশ্বর ধরা দেন।” তাঁর জাদু শেখার ও জাদুশিল্পী হয়ে ওঠার কাহিনী সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। তিনি টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ম্যাজিক শিখতেন ও ম্যাজিকের সরঞ্জমাদি কিনতেন। তাঁর জাদুভাণ্ডারে ছিলো প্রচুর বই, সিডি ও উন্নত সব ম্যাজিক। যদিও তিনি ছোট ছোট ম্যাজিক দেখাতেন তবুও সকল জাদুতেই তাঁর ছিলো ঈর্শ্বনীয় অভিজ্ঞতা।
আমার সৌভাগ্য বন্ধু হিসেবে আমাকে তিনি কাছে টেনে নিয়েছিলেন। কাছ থেকে তাকে দেখার সুযোগ হওয়ায় ও একান্ত আলাপচারিতায় জাদুবিষয়ক বহু তথ্য তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি। যা আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকলের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে রচনা করি ‘ জাদুশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ’। বইটির ভূমিকাসহ স্কেচ করে দিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই আহসান হাবিব। গত ডিসেম্বরে প্রথমা প্রকাশন বইটি প্রকাশ করেছে। বইটি একই সঙ্গে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র এবং অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে।
বইটির মুখবন্ধে তাঁর ছোট ভাই আহসান হাবিব লিখেন, “ এম এ জলিল হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম জাদুশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। তিনি পাণ্ডুলিপিটি আমাকে পড়তে দিলেন। সেটি পড়ে এবং তাঁর সাথে কথা বলে আমি বড়ভাই হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে অনেক তথ্য পেলাম। এটা ঠিক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। তবে ম্যাজিশিয়ান এম এ জলিলের বইয়ের বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার ধারনা আগ্রহী পাঠকেরা বইটি পড়ে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে নতুন ধারনা পাবেন।”
মহান জাদুশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চ থেকে চিরবিদায় নেন। ১৩ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন। শুভ জন্মদিন প্রিয় হুমায়ূন ভাই। ওপারে ভালো থাকুন।
এম এ জলিল
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
প্রকাশিত গ্রন্থ- গাঁও গেরামের কথা, জাদুশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ।