প্যালেস্টাইন নিয়ে দু’কথা বলেন নি, লিখেননি এমন জানাশুনা মানুষ দুই জেনারেশনে বিরল। আমরা ইসরাইল নামের দেশটাকে নিয়ে নেগেটিভ ছাড়া আর কোনো কমেন্ট করিনা, আমরা বুঝতে চাই না এই দেশেও মানুষ থাকে, মুসলমান বা খ্রীস্টান থাকে, এই দেশেও সূর্য উঠে, চন্দ্রগ্রহণ হয়। ইসরাইল সরকারের কর্মকান্ডে সেই দেশের অসংখ্য মানুষ বিতশ্রদ্ধ, বিরক্ত। শুধু এই দেশের মানুষই নয়, বিশ্বের বহু সনাতনি ইহুদিই ধর্মীয়ভাবে ইসরাইল নামের রাস্ট্রের বিরোধে অবস্থান করছেন। তবু যুদ্ধ চলছে, হত্যা চলছে, যুদ্ধাবস্থায় সত্য কথা বলার লোকও কমে যায়, তবু কেউ না কেউ বলে, কেউ না কেউ ঝান্ডা ওড়ায়।
হারেটজ’কে বলা হয় ইসরাইলের মূল ধারার সবচেয়ে প্রভাবশালি এবং জনপ্রিয় পত্রিকা এবং বেশ ডানপন্থীও (সরকারী চরমপন্থার সমর্থক), সেই পত্রিকার গতকালের হেডলাইন আর খবরে মোটামুটি কেঁপে উঠেছে ইসরাইল। পত্রিকাটি শিরোনাম করেছে ‘This Is the Price of War.’

ইসরাইলি মূলধারার পত্রিকা Haaretz’ সাম্প্রতি গাজা এবং ইসরাইলের মধ্যকার ১১ দিনের যুদ্ধ ও সহিংসতায় প্রাণ হারানো ৬৭ জন শিশুর ছবি প্রকাশ করেছে, যা ইতিপুর্বে আর কেউই করার সাহস দেখায় নি। মূলধারার ইসরাইলি কোনো পত্রিকায় ইসরাইলি বর্বরতার সংবাদ ছাপা হওয়া একটু অভাবিত ব্যাপার। বিভিন্ন আদর্শে অনুপ্রাণিত কোনো কোনো দল, ব্যক্তি বা পত্রিকা বিভিন্ন সময়ে এক আধটু প্রকাশ করতে গিয়ে তুমুল প্রতিবাদ ও সামাজিক-রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সেদিক থেকে বলা যায় এবার Haaretz’ অনেকটা বিপ্লবই করে ফেলেছে।
ইতিমধ্যে অবশ্য আমেরিকার বিখ্যাত পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস ৬৭টি জনের ছবি দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের হেডলাইন ‘They were only children’. Haaretz’ তাদের শিরোনামটিকে আরো আবেদনময় করেছে।
ইসরাইল- প্যালেস্টাইনের মধ্যকার বিরোধের মধ্যেও প্যালেস্টাইনিদের উপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে খোদ ইসরাইলিদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। রাজনীতিকরা, ছাত্ররা বিভিন্নভাবে অনেক আগে থেকে ইসরাইলের দমন নীপিড়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। এবার মূলধারার একটি পত্রিকা দৃঢ় অবস্থান নিয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়ালো। এটি ইসলামী বিশ্ব ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।
করোনার এই মহামারীকালে যেখানে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে এবং যাচ্ছে । এই দু:সময়ে ইসরাইল আর ফিলিস্তিনের যুদ্ধে যে শত শত নিষ্পাপ শিশু কিংবা মানুষরা মারা যাচ্ছে- সেটা কি কোনভাবেই ঠেকানো যেতো না? হয়তো যেতো। তবুও মারা যাচ্ছে শিশুরা। হায়!
আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম
কবি, রাজনীতিবীদ
প্রধান সম্পাদক, মুক্তমঞ্চ
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।