ঈদের খুশি সকলের হোক – আতিকুর রহমান শুভ

  
    

গতরাতে বাংলাদেশের একটি নিউজ টিভি দেখছিলাম। রিপোর্টার একটি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু’র আপডেট দিচ্ছেন। রিপোর্টার কি প্রশ্ন করেছেন জানিনা। এক মা সামনে ছোট নিস্তেজ এক শিশু নিয়ে বলছেন, ওর ডেঙ্গু হয়েছে। কিন্তু নার্সরা সেলাইন ঢুকাতে পারছেনা। মা বলছেন, কষ্ট করে সেলাইন দিতে পারলে আমার বাচ্চাটা বেঁচে যাবে। ও বাঁচলেই আমার ঈদ, হাসপাতালে থাকলেও। আমার চোখ সেখানেই আটকে গেলো। মাও তাঁর চোখে সারাক্ষণ নিস্তেজ শিশুর দিকে চেয়ে আছেন যেনো চোখ সরালেই যেকোন ঘটনা ঘটতে পারে। হয়তো এজন্য মা নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে কেবল বাচ্চার হাত ধরে বসে আছেন।
শুধু ঢাকাতেই ২০ হাজার রোগী ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে রয়েছে। যাদের হাসপাতালে ঠাঁই হয়নি, তারা বাসা বাড়িতে অনিশ্চিয়তায়, আতংকে দিন পার করছেন। বেসরকারী হিসেব মতো এবারের ডেঙ্গুতে এপর্যন্ত শতাধিক মানুষ মারা গেছে।

তবুও আমাদের ঈদ, খুশির ঈদ। প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের পথে। কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা এক ভদ্রমহিলা বললেন, তিনি বাসায় হাড়ি পাতিল ধুয়ে শুষ্ক করে এসেছেন। কমোড ঢেকে রেখেছেন, যেনো কোনভাবেই এডিশ মশা ডিম না পাড়তে পারে। তবু বাড়ি যাবেন তিনি, গ্রামের বাড়ি ! আমার বোন মা ভাই ও তাঁর পরিবার সহ ৯ ঘন্টার চেষ্টায় ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পৌঁছেছে। আর কত ঘন্টা লাগে কাজিপুর পৌঁছুতে সে জানেনা।

অস্ট্রেলিয়ায় আজ ও কাল ঈদ। তথাকথিত চাঁদ দেখা কমিটি বলে দিয়েছে কাল সোমবার হবে ঈদ। চাঁদ গণনার ওপর নির্ভরশীল কমিটি আজ রোববার ঈদ করে ফেলেছেন। প্রবাসে এই দলে খুব বেশি বাংলাদেশী না থাকলেও ইদানিং কিছু মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে আজ ঈদ করে ফেলেছেন।
আমরা যারা দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকি তারা জেনে আসছি, এ দেশের সরকার ঈদ উপলক্ষে একদিন ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণা করতে চায়। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় ঈমাম, নেতা বা মুফতিরা একটা কমন দিবস নির্ধারণ করতে পারছেনা বলেই সরকারও ঝামেলা করে ছুটি দিচ্ছেনা। এই বছর বিষয়টা প্রায় হয়ে আসছিলো, কেননা দুই মতবাদে বিশ্বাসী মুসলমানদের ঈদ উল ফেতর একই দিনেই হয়েছিলো। সেই থেকে আমরা ধরেই নিয়ে ছিলাম ঈদ উল আযহাও একদিনেই হবে। এটাও জানতাম আগের ঈদের ২ মাস ১০ দিন বা এরকম কোন সংখ্যার নির্দিষ্ট দিন পরেই দ্বিতীয় ঈদ আসে। কিন্তু এবার আর হলোনা। চাঁদ দেখা কমিটি একদিন পিঁছিয়ে চাঁদ দেখলেন এবং একদিন পিঁছিয়ে দিলেন যেখানে চাঁদ গণনা কমিটি নির্ধারিত দিনে মানে একদিন আগেই ঈদ উদযাপন করলেন।

যাই হোক দেশে ও বিদেশে প্রশান্তিকার সকল পাঠক, শুভান্যুধায়ী, লেখক ও বিজ্ঞাপনদাতা সহ সকলকে প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক। এই খেরো খাতা যখন লিখে ফেলেছি তখন খবর পেলাম আমার বোন সকাল ৬টায় রওয়ানা হয়ে রাত দুটোয় কাজিপুর পৌঁছেছে।
হাসপাতালে রোগাক্রান্ত মায়ের বাচ্চাটা কেমন আছে জানা যায়নি। তবে কায়মনে প্রার্থনা করি বাচ্চাটি সেলাইন নিতে পারুক এবং সুস্থ হয়ে উঠুক। নির্মম হত্যার শিকার নিরীহ মা রেনুর বাচ্চা দুটিও ভালো থাকুক। সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদ হোক যাত্রা এবং নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করুন।
ঈদ মোবারক।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments