ঈশ্বরকে পাই
তার কব্জির জোরে-
মাথায় কংক্রিট সিমেন্টের ঝাঁপি
পিঠে তার তিনমাসের দুগ্ধপোষ্য
নেই এক বিন্দু অবসর
নোনা ঘামে চন্দন আতরের সুবাস
ঝাঁঝালো রোদ,গলির মোড় বন রুটির দোকান।
ক্ষুধার্ত চোখ পিয়াসায় ধুঁকছে পুরো অবয়ব
আমি পেয়ে গেছি আমার ঈশ্বর
আলোক সজ্জায় রেডিসন ব্লু কিংবা
পেনিনসুলার বারান্দায়
সেন্টমার্টিনের ঝাড়বাতির আলেয়ায়
নিয়নের আলোয় শয্যাসঙ্গীর বুক
মদমত্ত ঈশ্বরের সেবক।
আমি ঈশ্বরকে খুঁজে ফিরি প্যাডেল মারা পায়ে,
জীবন ও জীবিকার ভারে
ন্যুজ্ব হয়ে ছোটে অলি গলি রাজপথ কিংবা
নৌকার বৈঠায়,
বাস, অটোরিক্সার হেল্পারের কণ্ঠযুদ্ধ আর আধপেটা ক্ষুধার যন্ত্রণায়।
বছরের পর বছর আমার সেই ঈশ্বর,
রিক্সা নিয়ে ছোটে চকবাজার,
কাস্টমস, নিউমুরিং এখানে সেখানে
আমি সংশয়ে ঘৃণায় নিজেকে দেখি!
অদ্ভুত এ জীবনাচরণে
আমি কী চাই!
কতটুকু দিয়েছি তোমায় হে ঈশ্বর
অথচ আমি তোমাকেই চাই।
অমিতব্যয়ের চুড়ান্ত রূপ রেখায়
ভুলে ভুলে যাই।
গীতা, কোরান, ত্রিপিটক
কী শেখাচ্ছে আমায়!
দয়া প্রেম ভালবাসা মানুষের পরিচয়।
রাজনীতি, ধর্মনীতি, অর্থনীতি
হতে চায় গরীবের সহায়।
ঈশ্বর,
আমি কী নরকে ভয় পাই?
ঘুষের টাকায় তীর্থে ভ্রমণ,
হা হা হা
তাও যদি তোমায় কেনা যায়
সমাজে লেফাফা দুরস্ত ধার্মিক
সাজবার দায়
হে ঈশ্বর সর্বজ্ঞ শরণাগত, দয়াময়
তোমার সাথে বিবাদ আমার নিশ্চিত, প্রতিনিয়ত
নেই কোন সংশয়।
সবহারাদের ভুখা রেখে
ধর্ম, রাজনীতি, যারা করে
তাদের কেনা গোলাম বুঝি স্বর্গ শাসন করে?
হে ঈশ্বর আমি জেনে গেছি
আরো একবার
বার বার, সহস্র অসংগতি
লুকিয়ে
ক্ষমতাবানের ক্ষমতার লড়াই অর্থমূল্যে কেনে, মন্দির মসজিদ দেবালয়
তার কাছেই তোমার
দুঃসহ পরাজয়।
পক্ষপাতদুষ্ট একচোখা যে ঈশ্বর
সে কখনোই আমার নয়।
০৩/১২/২০২০
অলংকরণ: আসমা সুলতানা মিতা
বিভা ইন্দু:
কবি, গল্পকার ও শিক্ষক। শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। সৃজনশীল কাজ করায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে থেকেও পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। তার সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম মহুয়ারা কাঁদছে সমাজে, প্রজাপতির ডানায় পদাবলী (দুটিই কাব্যগ্রন্থ) ও সিঁথির যত কথা (গল্পগ্রন্থ)।গত ২৮ নভেম্বর কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীতে বন্ধু বিভা ইন্দুকে গল্পকার হিসেবে সমতটের কাগজ গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয়। পৈতৃক নিবাস বরিশাল হলেও জন্মস্থান চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য স্কুল সিলভার বেলস্ স্কুলে প্রায় তিরিশ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন।
গল্পগ্রন্থ: সিঁথির যতো কথা; নির্বাচিত গল্প- সম্পাদক দেবাশীষ ভট্টাচার্য।
কাব্যগ্রন্থ: মহুয়ারা কাঁদছে সমাজে; প্রজাপতির ডানায় পদাবলী।