বাংলাদেশ, আলহামদুলিল্লাহ LDC হতে DC স্তরকে ধরে ফেলেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর হতে, নানা স্তুতি, আলোচনা, বিশেষত অবদানগত পক্ষ-বিপক্ষ সমালোচনার ঝড় বইছে, যা ইতিহাসে একদিন, সঠিকভাবে মূল্যায়িত হবেই। তবে আমার মাথাব্যথা হচ্ছে, কতিপয় ‘খাদক’কে নিয়ে। আমার মতে এদের কারণেই DC তে ঢুকতে এতো সময় লেগেছে এবং দেশটির ধনী-গরীবের দূরত্ব এতো বেড়েছে। অপ্রতিরোধ্য সেই খাদকদের উদ্দেশ্যেই আমার আজকের এই লেখা।
বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ সমূহে, দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। তবে ইদানিং ‘হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট ও পাচার’ এর বিষয়টি, একটু বেশীই আলোচিত হচ্ছে।
“একটু রয়ে সয়ে ঘুষ” কথাটা, বেচারা শিক্ষা মন্ত্রীর মুখে বেমানান হতেই পারে। যেমন বেমানান হয়েছিল এক সময়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মুখে (‘আল্লার মাল… … ‘)! মন্ত্রী বলে কথা।
তবে আমার মনে হচ্ছে, মন্ত্রী মহোদয়ের কথিত ‘ঘুষ খাওয়ার সাফাই’ এর ‘কঠিন সত্য’ অংশকে এড়াবার, তেমন কোনো সুযোগ আসলে নেই।
না আমি ঘুষের পক্ষে, কোনো সাফাই গাইছিনা। তবে পরিষ্কার পানি থাকতে, ঘোলা পানিতে গোসলরত কোনো ব্যক্তিকে, ক্রমাগত ‘রক্ত আর পুঁজের সরবর’ এর দিকে না এগোনোর জন্য সাবধান করা, কতখানি দোষের?
মানুষের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অর্থের ভুমিকা অপরিসীম। যেখানে সুখ আর শান্তি আপেক্ষিক হলেও, ‘সমৃদ্ধির লালসা’ই সম্ভবত, সকল অনাচারের মূল কারণ।
সমৃদ্ধির কোনো সীমারেখা না থাকায়, লোভাতুর ও চতুর (আসলে বেকুব!) মানুষগুলো স্থল, জল, এয়ার সহ সকল স্তরের ব্যবসা আয়ত্তাধীন থাকা সত্ত্বেও প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, রাজনীতি, সব কিছু কব্জা করে, ‘মাফিয়া’ বনে যেতে চান। অনেকে আবার সেই অতৃপ্ত সুখ আর সমৃদ্ধির নেশায় মালয়েশিয়া ও কানাডায় সেকেন্ড হোম সহ বিভিন্ন অফশোরে অর্থ পাচার করে যাচ্ছেন।
এরা রাষ্ট্রীয় ফাঁক ফোকোরের সুযোগে, বিরামহীন অপকর্মের মাধ্যমে, গরিবের সর্বস্ব লুট করে, সরকার সমূহের বদনাম সহ, দুনিয়ার বারটা বাজিয়ে যাচ্ছেন। ওনারা জ্ঞানে, মানে, বুদ্ধিমত্তা ও চাতুর্য সকল বিচারে নিজদেরকে সেরা ভেবে, আম জনতাকে ‘ভেড়ি বাঙ্গালি’ ধরে নিয়ে তাঁদের কল্পনার ‘সুরক্ষিত লোহার ঘর’ তৈরীতে বিভোর হয়ে আছেন। এদের জন্য করুণা ছাড়া, আর কিছু করার আছে কি?
এদেরকে কিভাবে বুঝাই যে সুইস ব্যাঙ্ক, পানামা শোর ইত্যাদির বাইরে আরো সুগঠিত ও সুরক্ষিত বিনিয়োগ ব্যবস্থার গ্যারান্টি থাকলেও:
“বিনিয়োগকারী বা তাঁর ওয়ারীসদের সেই অর্থ ও তার আয়, ‘ভোগের গ্যারান্টি’ দুনিয়ার কোথাও নেই’।
তারপরেও আশাহত না হয়ে,
১) প্রায় সকল ধর্মের মূল আহবান, ‘সততা, সমতা ও সবর’ কে সমুন্নত রাখার স্বার্থ
২) সামাজিক ন্যায়বিচার ও অধিকার রক্ষার স্বার্থ
৩) দেশের সার্বিক স্বার্থ এবং
৪) বিশ্ব স্বার্থ বিবেচনায়
বিশ্ব বিনষ্টকারী আলোচিত আবর্জনাতুল্য, বর্বর সেই তস্করদের বরাবরে, উদাত্ব আহবান:
ওহে চন্ড্রালের দল, জেনে রাখুন আপনার মাসিক চাহিদা যদি ৫ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে আপনি সর্বোচ্চ ৬ কোটি টাকা কব্জা করতে পারলেই, তা হতে মাসে ৫ লক্ষ টাকা আয় করতে থাকবেন। হাজার কোটি টাকা চুরি করার দরকার নেই।
আপনার মাসিক চাহিদা যদি ১০ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে আপনার ১২ কোটি টাকা অর্জিত হলেই মাসে দশ লক্ষ আয় করতে পারবেন। হাজার কোটি চুরি করার দরকার নেই।
একই ভাবে, আপনার মাসিক ক্ষুধা যদি ৩০ লক্ষ তথা দৈনিক লক্ষ টাকাও হয় ৩৬ কোটি টাকা মারতে পারলে, সে আশাও পূরণ হবে। হাজার কোটি টাকা চুরি করার দরকার নেই।
তাতেও না হলে, ‘লোভাতুর!’ আপনি, আপনার সর্বোচ্চ সম্ভাব্য মাসিক ব্যয় নিজে নিরূপণ করে, সেই পর্যন্ত পৌছে হলেও, প্লিজ থেমে যান। অনেক মঙ্গল হবে।
স্মার্ট, শিক্ষিত(?), চতুর, চাটুকার ও আপনার মত চাপাবাজের জন্য হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া নিশ্চয়ই খুব সহজ কাজ। কাজটি ছেড়ে দিন, শত-সহস্র গরিবের উপকার হবে, আপনার ইহকাল শান্তিময় হবে এবং পরকালও নিষ্কন্টক হবে ইনশাল্লাহ।
বলি কি? যদি ভোগ করতেই না পারেন। তাহলে কষ্ট করে, গরীব জনগণের হাজার কোটি টাকা মেরে সুইজ ব্যাংক, মালয়েশিয়া, কানাডা, ইত্যাদি দেশে অর্থের পাহাড় গড়ে, লাভ কি?
আপনি কি জানেন ? সেই টাকার কত অংশ আপনার মত নির্বোধরা ভোগ করতে পারেন? কারণ ভোগের গ্যারান্টি, শুধুই স্রষ্টার কাছে, বুঝতে পারছেন কিছু?
স্রষ্টার দোহাই, হাজার কোটি দুরে থাক, ৫০ কোটির অধিক পরিমাণ অর্থের, স্বাভাবিক আয়ও এদেশীয় একটি পরিবারের পক্ষে, খরচ করে শেষ করা সম্ভব নয়।
আপনি এবং আপনার ওয়ারিশগণ মিলে ভোগ করে, যা কোনোদিন ফুরাতে পারবেননা। আপনার মৃত্যুর পর জমানো অর্থের কি হবে, তাও জানেননা। শুধুই ‘অবাস্তব স্বার্থ’ চিন্তায়, দারিদ্র পীড়িত দেশের কোটি কোটি মানুষের মুখের সেই গ্রাস, জীবনের ঝুকি নিয়ে, দিয়ে আসছেন বিশ্ব বাটপারদের ব্যাঙ্ক বা ব্যবসায়! আপনি মানুষ না পশু?
প্লিজ থামুন, আপনি নিশ্চয়ই পশু বা ‘বোকা মানুষ’ কোনোটাই নন?
যেকোন একটি সাজেশন মেনে, পারলে আল্লাহর ঘরে বা প্রার্থনাগারে গিয়ে তওবা করে আসুন। আপনার ‘নিজ বিবেচনায় নির্ধারিত’ অর্জনে সবর এনে, প্লিজ আয়ের সকল ‘বক্র পথ’ পরিহার করুন।
অবিশ্বাস্য মনে হলেও দেখবেন, সরল জীবন-যাপনের মাঝেও অপনার প্রায় ‘সকল ইচ্ছাই’ ক্রমাগত পূরণ হয়ে চলেছে। আর আপনি মনের অজান্তেই ঘোলা পানি ছেড়ে, স্ফটিক স্বচ্ছ সুখ সরবরে ভাসছেন।
শুধু ১-৪ স্বার্থ গুলোর দিকে, ‘একটু খেয়াল’ করে, প্লিজ থেমে যান, দেখবেন ইনশাআল্লাহ, মহান শ্রষ্টার কৃপায় আপনার ললাটে কেবল পরকাল নয়, ইহকালের সুখ সমৃদ্ধি ও শান্তি এসে ভিড় করছে।
প্রার্থনা:
হে দয়াময়, দেশ ধ্বংশী ঐ ‘দিবা স্বপ্নবাজদের দিবা ঘুম’ ভেঙ্গে দিয়ে, তাদের দিলে ‘স্বস্তি’ ও ‘সবর’ দান কর এবং অভাগা এ দেশটাকে রক্ষা করো।
এস এম আলী আকবর
লেখক ও প্রৌকশলী
ঢাকা, বাংলাদেশ।