এই করোনা ভাইরাসই কি উপন্যাসের উহান-৪০০ ভাইরাস?

  
    

[ প্রায় একমাস আগে ভাইরাল হয়েছে আমেরিকার বেস্ট সেলার লেখক ডীন কুন্টজ’র উপন্যাস দ্য আইস অব ডার্কনেসের প্রচ্ছদ এবং উহান-৪০০ ভাইরাস সম্পর্কিত দুটি পৃষ্ঠা। প্রশান্তিকার অনেক বন্ধু ও পাঠক ইমেল বা মেসেঞ্জারে পাঠিয়েছেন। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কিভাবে সম্ভব প্রায় ৩০/৪০ বছর আগে ভবিষ্যত বাণী করা? সেই তাড়না থেকে আমরা রিপোর্টটি করতে চেয়েছি। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ায় বইটি খুঁজেছি, পাইনি। নামকরা অনলাইন বুকশপ ABE Books এবং Depository book shop এ শুধুমাত্র অডিও কপি পাওয়া যাচ্ছে, মূল প্রিন্ট কপি নেই। হঠাৎ অস্ট্রেলিয়ান এসোসিয়েট প্রেস (AAP) একটি রিপোর্টে বিষয়টা তুলে এনেছে। আপাতত: আমাদের রিপোর্টের সোর্স এটাই]

আতিকুর রহমান শুভ: করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি হয়েছে চীনের উহান নামক স্থান থেকে। উহান থেকে প্রথমে চীনের অন্যান্য এলাকা তারপর বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এটি। অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে।
১৯৮১ সালে প্রকাশিত আমেরিকান ঔপন্যাসিক ডিন কুন্টজ তার দ্য আইস অব ডার্কনেস উপন্যাসে উহান-৪০০ নামে একটি ভাইরাস যাকে পারফেক্ট উইপেন বলা হয়েছে, যেটি কেবল মাত্র মানুষ থেকে মানুষের মাঝেই ছড়িয়ে পড়বে। সেখানে পরিস্কার বলা হয়েছে, শক্তিশালী নিউমোনিয়ার মতো একটি অসুখের উদ্ভব হবে যাতে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হবে এবং যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে এবং যার কোন চিকিৎসা নেই। হঠাৎ এই ভাইরাসের প্রকোপ থেমে যাবে এবং ১০ বছর পরে ২০৩০ সালে আবার উদ্ভব হবে। এমনকি সেই উপন্যাসে চীনের যে চিকিৎসক লী প্রথম করোনা ভাইরাসের কথা বলেছিলো এবং সরকারের রোশানলে পড়ে তার মৃত্যু হয় তার নাম উপন্যাসে লী চ্যাং হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। অনেকেই বইটিকে রহস্য জনক বলছেন। বইটি সম্পর্কে প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট আসে ২১ শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ সালে। তারপর থেকে বইয়ের কাভার এবং উহান সম্পর্কে দুটি পেজ ভাইরাল হয় এবং সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ এটি শেয়ার করে।

ভাইরাল হওয়া বইটির প্রচ্ছদ এবং বেস্ট সেলার লেখক ডিন কুন্টজ।

গত ২ মার্চে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান এসোসিয়েট প্রেস (AAP) তাদের একটি ফ্যাক্ট চেক রিপোর্টে জানাচ্ছে, এই বিষয়টা কেবলই কাকতালীয়। বইটির ঔপন্যাসিক ডিন কুন্টজ এর সাথে যোগাযোগ করেও তারা কোন সাড়া পাননি। ১৯৮১ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় যেখানে ভাইরাসটিকে বলা হয়েছে Gorki-400. সেসময় রাশিয়া বা সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোল্ড ওয়ার বা শীতল যুদ্ধ চলছিলো। গোর্কি হলো রাশিয়ার একটি স্থানের নাম যেখানে লেখক কল্পনা করেছেন সেই বায়োলজিক্যাল উইপেনের উদ্ভব হওয়ার। ১৯৮৯ সালে বইটি নতুন সংস্করণ করে প্রকাশিত হয়। তখন রাশিয়ার শীতল যুদ্ধ শেষের দিকে। নতুন সংস্করণে গোর্কি- ৪০০ পরিবর্তন করে লেখক একে উহান-৪০০ নাম দিয়েছেন। গোর্কি থেকে উহান নামটা দেয়া ছিলো সম্পূর্ণ কাকতালীয় বিষয়। ডিনের বইতে ভাইরাসটির উদ্ভব হয় ল্যাবরেটরীতে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এটির উদ্ভব হয়েছে বাঁদুর জাতীয় প্রাণীর কাছ থেকে, যদিও সেটা উহানে।

ডিন কুন্টজ ছাড়াও আরেক বেস্ট সেলার লেখক সিলভিয়া ব্রাউনি তার উপন্যাস “The end of days: predictions and prophecies about the end of the world” বইটিতে ২০২০ সালে নিউমোনিয়ার মতো একটি মহামারী অসুখের কথা বলা হয়েছে। সিলভিয়া ব্রাউনিয়া ২০১৩ সালে মারা যান। তার আগে তিনি প্রায় ৪০টি বই লিখেছেন। ১৯৯২ সালে সিলভিয়ার এরকম ১১৫টি ভবিষ্যৎ বাণীকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। যা পরবর্তীতে একটাও প্রমাণিত হয়নি বলে AAP জানাচ্ছে। ১৯৯২ সালেই তাকে ফ্রড বা প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ভাইরাল হওয়া পোস্টে ডিন কুন্টজের বইটির প্রকাশকাল ভুল রয়েছে। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত বইটির প্রথম সংস্করণে উহান সম্পর্কে বলা হয়নি, হয়েছিলো রাশিয়ার গোর্কি সম্পর্কে। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালের সংস্করণে উহানের বিষয়টা সংযুক্ত করা হয়। ভাইরাল হওয়া পোস্টে ১৯৮১ সালের পরিবর্তে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত লেখা থাকলে নিদেনপক্ষে যুক্তিযুক্ততা থাকতো।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments