একগুচ্ছ কবিতা । বদরুজ্জামান আলমগীর

  
    

 

ভাতের দানা

থালার একপাশে খানিকটা ব্যঞ্জন ; মনে হয়,

ক্ষেতের এককোণায় জবুথবু মুনিশ মৈজুদ্দিন

বিলাতি বাসনে সাদা সাদা ভাতের মোহর

প্লেটে সাজিয়ে রাখা অবহেলার ধন

কেবলই ভোগ্যপণ্য- বার্গার, পাস্তার তুলনায়

আলিশান হোটেলে এসে দ্বিতীয় শ্রেণীর খাবার

ভাত, আহা ভাতের দানা

উঠে এসেছে পাঁচতারা হোটেলের ডাইনিং রুমে

স্নেহ চায় ভাতের দানা, চুড়ির টুংটাং চায় ভাতের দানা

পরিবেশনকারীর অতি সৌজন্যে

থালা থেকে ছলকে মেঝেতে পড়ে যায় ভাতের দানা

বরতনে থাকলে ভাত, মাটিতে পড়লে আবর্জনা

বড় দুনিয়ার এমনই সংক্ষিপ্ত কথাসারাৎসার

ধানের থোরে দুধ এলে ক্ষেতের আলের পাশে

বাতাসের প্রশ্রয়ে এমনিই বসেছিল আমার বাবা

কেউ তোলে না আর ধানের ঘনীভূত দুধ আনমনা-

ট্রেশ হয়, আবর্জনা হয়ে যায় ভাতের দানা।

 

লকডাউন

আমি তো ভুখের কাছে সারাজনমই লকডাউন, আমারে মারতে বন্দুক দাগাও- কিন্তু আমি কই- আমি কেউ না, কিছু না- আমি খালি একটা ক্ষুধার নাম!

আমি ভূমিহীন, আমি রাস্তার ছেলে- হাড়ের ভিতরে মজ্জা।

আমিই নসিব, আমি দগদগে ভাতের পেরেক।

যারা আজ কর্মহীন মধ্যবিত্ত- তাদের মেন্দিপাতার জীবন- কায়ক্লেশে, মানে সম্ভ্রমে, লজ্জায় উপরে টেনে রাখে সবুজ রঙ, কিন্তু ভিতরে ক্ষরণ- তীব্র গলগলে ক্ষত।

আমি রক্তাক্ত স্নেহ, আমি দিনমজুর মেয়ে- মরতে চাই-

কিন্তু মরি না, আমি সাফা মারওয়া, ক্ষুধার ছুটে আল্লার আরশের দিকে দৌড়ে যাই শনশন হাওয়া,

আগুন লাগানো সুন্দরবনে আমি বাঘ- তোমার লকডাউনের যৌনকর্মী, ক্ষুধা!

 

ময়নাবাজি

জন্মান্ধ শিকল বাউল- কথাটি ভাবা মাত্রই

জালালি কবুতর উড়ন্ত রাত্রিও জন্মান্ধ হয়ে ওঠে।

অন্ধ হলে ধূলা ও জল একাকার হয়

কাঠামোর বাইরে একটি কলবের তাজমহল

নির্মিত হয়ে ওঠে- গন্ধের তাজমহল।

মাইজভান্ডারি গানের পাখায় কবরের ভিতর

উড়তে থাকে শিকল বাউল।

লোকগুলো নাচে, আর নাচে আয়নার ভিতরে ময়না

পুরো মজমায় নাই, কোন বিজ্ঞানী নাই

সবাই যোগালি, একা ও একসঙ্গে দূরের রেললাইন

তারা সকলে মিলে গাঁইতিতে দেহ ভাঙে

বাড়ি চুনকাম করে- অন্ধ নগরে আনে বাঁশঝাড়ের মর্মর।

 

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments