একগুচ্ছ কবিতা । মানিক বৈরাগী

  
    

নির্বাসিত হও দিকশুন্যপুরে 

চেতন রাজ্য ও রাজনে বোধবিহীন বাণিজ্যে
সুভাষ -ফরহাদ, শরিফ চেয়ারম্যান, অবিনাশ স্যার
নগ্ন পায়ের পড়েনা পদচ্ছাপ আর।

তাঁদের পায়ে পেরেক ঠুকে পরমাত্মাকে করেছি বন্দি
রাজনীতির যাদুবাক্সে।

শহীদ আব্দুল হামিদ, এনাম সাবেরের নামে গড়পরতা
চেতনসভার আয়োজক আমরাই

তোমাদের কাছে আমরা পরম ঋণী
তোমাদের পুঁজি, তোমাদের স্মরি ,
তোমরাই মোদের লুটের হাতিয়ার,
তোমরাই মোদের আখের গোছারি।

মুজিবের ডাকে তোমাদের মহৎ আত্মদান
আমরা ভুলে গেছি তার সরল অনুবাদ
লোভ ও লালসার কালিক ছলনায়।

ভালো থেকো হে বীর শহীদ, ভালো থেকো মহাকালে
তোমাদের রেখে যাওয়া প্রজন্ম আজ
বানরের পিঠা ভাগে বড্ড চেঁচামেচি করে।

করুক তারা চেঁচামেচি হে বীর শহীদান,
অভিশাপ দাও ,
তোমাদের পবিত্র আত্মা থেকে বর্ষণ করো
তাদের উপর লানৎ।

আমরা যারা মুজিবমন্ত্রে, দেশপ্রেমে
মিনারে, স্বাধীনতা মঞ্চে আমাদের বক্তৃতায়
তোমাদের স্মরণ করি।

উতল অভিমানে আমরা স্বেচ্ছানির্বাসিত আজ
যোজন যোজন দূরে দিকশুন্য পুরে।

মধ্যযুগীয় পিরিতি

পারিনা এড়াতে আড়ালে গলিতে কানা-ঘুষা চলে, মরি লাজে ওহ সুখযন্ত্রনা সহি নিরবে নিরবে। তবুও করি যাপন দুঃখবিলাশ, কলিজায় নিয়াছ ঠাঁই। মধুর বসন্ত বহিছে তোমার আঙ্গিনায়, বসন্ত জলে জ্বলি অনঙ্গ অঙ্গে। তিলে তিলে অনুভবে অংগার হতে কতদেরি? ওগো রাণী বাসন্তি, আ হা এমোনি অমন আনমনা হেয়ালি কর হে মধুরিমা
জপমালা গুনণে অঙ্গুরি অনিমাতে চাট হতে হতে পাথর হলো, নখ হলো ছুরি। নিজ নিজ আঁচড়ে করি অঙ্গহত, শুধু তোমার জন্য পরান পিয়াসি। লাজ্ব ফেলে বংশলতিকা ছিড়ে, অন্দর বন্দরে ঘুরে ঘুরে এসেছি গো তোমারি দুয়ারে। তুলে নাও পরমপিয়াসে। আমি গো তুমি বিহনে জ্বলি।


খোশরোজ মহল

তেমন কেউ আসেনা এখন এ বসন্ত তলে
তবুও সৌরভ কমেনা বসন্ত বৃক্ষের, পুষ্প বাহারে মুখরিত পথঘাট
সুরভিত পুষ্পমঞ্জরির ঘ্রাণে কেউ কেউ আসে পরম ভালোবাসার টানে
বনফুলের মৌতাতে মনফুল রাঙাতে, তরুণীর কুন্তল সাঁজাতে  আসে
ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষ সচলরয় মৌ মৌ খুশবো সমারোহে
আজকাল
বাসন্তীর বসন্তবাউরিতে উন্নয়নের চাপে জলবায়ু পরিবর্তনে
বিশ্বায়নের বিশ্ববাজারে গোলকায়নের ভার্সুয়াল আগ্রাসনে
মমতাজ মাজারে
ভাটার টান, মনমরা আহবান ঋতুরীতির অস্বাভাবিক আচরণে
তারা সান্ধ্য মজমার কাওয়ালী আসরে, সুফির শায়েরিতে
ইসকে আশেকীরাও আসেনা, সুফিয়ানায় সুফিরা কবিরের ভজনে মজেনা
খোশরোজ মহলে নওরোজের গোলাপ ফুটে আশায় আশায়।

কষ্টকানন 

আমি তো দুঃখেরই দুর্বৃত্ত
কষ্টযন্ত্রের ফলায় দুঃখের জমিনে
যন্ত্রণার চাষকরি বেদনা ফোটাবো বলে
দুঃখের চুল্লিতে পুড়ে পুড়ে কলিজা খানা
ঝামাইট।
ঝামাইটে হয়না বাঁধন যায়না গড়া প্রেমের কানন।

অ কারিগর কি করি এখন
এ দেহমন যন্ত্রণারই রসুইঘর।

না বুঝে না শুনে যারা “নিন্দের কাঁটা বিধিল গায় ”
তাদের তরে বলি ভণে
কষ্ট লাগে বড্ড কষ্ট লাগে
নষ্ট হতেও যোগ্যতা লাগে।

পুড়ে চুরুট জ্বলি আমি 

জেগে থাকি রাতভর, আশায় আশায়
কুয়াশাভোর, পোড়া তামাকের গন্ধমাখা হিমেল বাতাস
ধীরে ধীরে কুয়াশার যোনি ভেদ করে আলোর কোলাহল
পাখির কলরোলে দিনমণি ধীরে ধীরে জাগে মানুষপ্রাণী
গন্ধরাজের সুভাষ নিতে ভ্রমর গুঞ্জরিছে ফুলমালি আসে
সবিতার কিরণে সবিতা আসেনি।

পূর্ব দিগন্ত রেখায় অলৌকিক রঙমহলে হাসির ফোয়ারার হলাহল
ভোর কুয়াশায় কি অদ্ভুৎ সুন্দর অপসারী হাসে
সবিতা তুমি কি তেমন হাসো কুয়াশার আলো-আঁধারে?
আশায় আশায় পুড়ে যায় চুরুট, জ্বলে যাই আমি
এভাবেই আলোকিত অন্ধকারে ঘুমিয়ে পড়ি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments