তানিম হায়াত খান রাজিত। একজন সরোদ শিল্পী, কম্পোজার এবং গায়ক। তানিম হায়াত খান এর সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি বিশ্ব বরেণ্য সংগীত ঘরানা সেনিয়া মাইহার ঘরানার একজন সদস্য। পারিবারিকভাবে এই পরিবারে ৪/৫ বছর বয়স থেকে বাদ্য যন্ত্র তুলে দেয়া হলেও তানিমের সরোদের শুরু অনেক দেরিতে। বেশ দেরিতে – ২২ বছর বয়সে। সেই শেখার মাঝেও একটা বিরাট ছেদ পড়ে যখন তানিম স্থায়ী ভাবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চলে যান। তারপরেও এই স্বল্প সময়েই তানিম নিজেকে একজন উদীয়মান সরোদ শিল্পী হিসাবে পরিচিত করে তুলেন।
তানিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্ব বিখ্যাত সন্তান উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের ছোট ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক উপমহাদেশ খ্যাত সুরবাহার শিল্পী উস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সাহেবের নাতি। এছাড়াও তানিমের আরেক দাদু ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁও ছিলেন ১৮৬০ এর দিকে খুব নামকরা আর প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। সেনিয়া মাইহার ঘরানা থেকে বের হয়ে এসেছে তানিমের পরিবারের অসংখ্য শিল্পী যাঁরা বিশ্ব সংগীতের দরবারে একেকজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁরা হলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, উস্তাদ আয়েত আলী, উস্তাদ আলী একবার খাঁ, উস্তাদ বাহাদুর খাঁ, পন্ডিতায়ন অন্নপূর্ণা দেবী , পণ্ডিত রবি শংকর , উস্তাদ আবেদ হোসেন খাঁ , উস্তাদ আশীষ খাঁ , উস্তাদ খুরশিদ খাঁ , উস্তাদ খাদেম হোসেন খাঁ , উস্তাদ মীর কাশেম খাঁ , উস্তাদ শাহাদাত হোসেন খাঁ , উস্তাদ বিদ্যুৎ খাঁ , উস্তাদ কিরীট খাঁ , রীনাত ফওজিয়া, পন্ডিত নিখিল ব্যানার্জী, পন্ডিত তেজেন মজুমদার এবং আরও অনেকে।
মা সঙ্গীতশিল্পী ফওজিয়া ইয়াসমিনের সাথে ছোট্ট তানিম
তানিম সংগীত বিশেষজ্ঞ মোবারক হোসেন খান আর ৬০ এর দশকের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ফওজিয়া ইয়াসমিনের কনিষ্ঠ সন্তান। তানিমের বাবা মোবারক হোসেন খান দীর্ঘ্ দিন বাংলাদেশ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরী করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।
মায়ের দিকে তানিমের খালারা বাংলাদেশের সংগীত জগৎ আলোকিত করে রেখেছেন ׀ তাঁরা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন, নিলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন।
তানিম তার সংগীত জীবন শুরু করেন তবলার মাধ্যমে ׀তিনি তিন বছর পণ্ডিত মদন গোপাল দাস এর কাছে তবলাতে তালিম নেন। এরপর তানিম পশ্চিমা সংগীতের সাথে পরিচিত হন , হাতে তুলে নেন গিটার। মিউজিক ডিরেক্টর সজল দাসের কাছে তিনি কর্ড প্রোগ্রেশন আর বেজ গিটার শিখেন।
১৯৯৮ সালে তানিম সরোদ হাতে তুলে নেন। ওনার সরোদে হাতে খড়ি ওনার চাচাতো ভাই উপমহাদেশখ্যাত সরোদিয়া উস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান এর কাছে।
সিডনিতে লোকমেলায় বাজাচ্ছেন রাজিত
২০০৩ সালে তানিম উচ্চ শিক্ষার্থে অস্ট্রেলিয়া চলে যান এবং সিডনিতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা শুরু করেন ওনার সরোদ শিক্ষনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় সিডনিতেই। তানিম এর সাথে পরিচয় হয় ডক্টর আড্রিয়ান ম্যাকনিলের। ডক্টর আড্রিয়ান ম্যাকনিল হলেন হেড অফ কনটেম্পোরারি মিউজিক ডিপার্টমেন্ট, মোনাশ ইউনিভার্সিটি। আড্রিয়ান ম্যাকনিল নিজে দীর্ঘ্ ৮ বছর ভারতের কাশিতে থেকে সরোদ শিখেছিলেন পন্ডিত অশোক রায়ের কাছে। পন্ডিত অশোক রায় ছিলেন তানিমের চাচা উস্তাদ আলী আকবর খাঁ সাহেবের শিষ্য। গুরু শিষ্য পরম্পরায় তানিমের তালিম চলতে থাকে আড্রিয়ান ম্যাকনিলের কাছ থেকে ২০০৮ সাল থেকে। এর মাঝে যখনই তানিম বাংলাদেশে আসেন, তখনই গুরু পরম্পরাতে উস্তাদ শাহাদৎ হোসেন খানের কাছ থেকে তালিম নিতে থাকেন׀ দেশে আসলে তানিম ntv, rtv ও মাছরাঙা টিভি চ্যানেলে নিয়মিত সরোদ পরিবেশন করেন।
সিডনী তে তানিম একজন ব্যস্ত সরোদ শিল্পী এবং সংগীত শিল্পী। সিডনীতে বসবাসরত দুই বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ওনার অবাধ যাতায়াত।
২০১৮ কমনওয়েলথ গেমস’র ইকসট্যাটিক্ট কনসার্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তানিম
সরোদ এর পাশাপাশি তানিম একজন মিউজিক কম্পোজার ও সংগীত শিল্পী। ২০১৮ তে রাজিতের অডিও অ্যালবাম “তুমি যদি চাও ” রিলিজ হয়েছে , যেখানে রাজিতের গানের পাশাপাশি সরোদের ফিউশনও রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে কলকাতার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী শিল্পী সৃজনী দানের সাথে ডুয়েট ׀ এই অ্যালবামের সবগুলো গান রাগ ও মেলোডি ভিত্তিক। তানিমের নিজের কম্পোজ করা গানও আছে এই অ্যালবামে।
এছাড়া ২৬ মার্চ ২০১৮ স্বাধীনতা দিবসে রাজিতের সুরে apspcae You Tube চ্যানেলে অবমুক্ত হয় ‘মা আমার মা ‘ গানটি। গানটি মুক্তির একদিনের মধ্যেই শ্রোতাদের মাঝে বিপুল সারা ফেলে দেয়। গানটির গীতিকার শ্রদ্ধেয় কল্পনা সরকার , মিউজিক ডিরেক্টর এজাজ ফারাহ ׀ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন শান , এজাজ ফারাহ , রাজিত , তাজরীন গওহর , পল্লবী রায় ও ফাহাদ ফাহিম।
তানিম ও তার পরিবার
শিক্ষাগত ভাবে তানিম একজন MBA ׀ অস্ট্রেলিয়ার University Of Technology (UTS) থেকে উনি প্রফেশনাল একাউন্টিং এ MBA করেছেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট এর উপর BBA করেন।
পেশাগত ভাবে তানিম একজন accountant। সিডনি তে চার্টার্ড ফার্মে বেশ কিছুদিন কাজ করে তানিম এখন হেড অফ একাউন্টিং এন্ড ফাইন্যান্স হিসাবে TAFE Digital, ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং, নিউ সাউথ ওয়েলসে কর্মরত আছেন।
প্রশান্তিকা তানিমের উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করছে। দেশে বিদেশে তানিম তার সঙ্গীত প্রতিভা দিয়ে আমাদের দেশকে আরো উজ্জ্বল করবে সে প্রত্যাশা রইলো।