ভাষা মানবজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সম্পদ। সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক ভাব বিনিময়ে ভাষা একটি উন্নত মাধ্যম। ভাষার ভিত্তিতে মানুষের ক্রমবিকাশের ধারাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি আদিম সমাজ, যাদের লিখিত ভাষা নেই। অন্যটি হলো লেখা আবিষ্কারের পরের সভ্য সমাজ। একটি মানসম্পন্ন ভাষার সাথে যে প্রত্যয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো হলো ভাষানীতি, ভাষা পরিকল্পনা, ভাষা কাঠামো ও শৃঙ্খলা। ভাষা নিজে একটি রাজনৈতিক প্রসঙ্গ। কারণ শাসনক্ষমতার ওপর একটি ভাষার মর্যাদা নির্ভর করে। বাংলা ভাষার রয়েছে দীর্ঘ পথপরিক্রমা, অথচ আধুনিকতার নামে বর্তমানে বাংলা ভাষার প্রতি চলছে যথেচ্ছাচার। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধের উদ্দেশ্য উৎসুক নবীন পাঠক, যারা একুশ শতকের প্রযুক্তিগত সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়বে এবং মাতৃভাষাকে গৌরবান্বিত করবে।
মনের ভাব প্রকাশের প্রথম ও প্রধান মাধ্যম হলো ভাষা। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার ইতিহাস জাতিকে গৌরবান্বিত করে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মাহেন্দ্রক্ষণে ‘ভাষা আন্দোলন’ ৬৯তম বছরে পদার্পণ করছে। এই শুভক্ষণে ভাষাশহিদ ও মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদান, ভাষানীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ আবশ্যক। ‘মধ্যম আয়ের দেশ’-এর মর্যাদা অর্জন এবং ২০৩০ সালের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামোর পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা। দূর করতে হবে শিক্ষা-দারিদ্র্য ও শিক্ষা-বৈষম্য। এ ক্ষেত্রে যে মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন হবে, তাতে মাতৃভাষার যথার্থ প্রয়োগ ও নীতিমালা থাকতে হবে। ভবিষ্যতে বাংলা ভাষাও হবে অর্থনীতির ভাষা- এমন স্বপ্ন শুধু কল্পনা নয়, বাস্তবেও সার্থক হতে পারে। পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোর মতো প্রদেশভিত্তিক ভাষা বৈচিত্র্য বাংলাদেশে নেই, সে কারণে ভাষানীতি বা ভাষা পরিকল্পনা প্রণয়ন তুলনামূলকভাবে সহজ।
একুশে ফেব্রিয়ারি বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় বলেই মাতৃভাষার গুরুত্ব অনুধাবন বাঙালির গুরুদায়িত্ব। ভাষা একটি সামাজিক শক্তি। কারণ, ভাষার সাথে রাজনীতি, অর্থনীতি, আগ্রাসন, সাম্রাজ্যবাদ, সমাজ কাঠামো, সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস ইত্যাদি প্রত্যয়গুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার মতোই মাতৃভাষার মান অক্ষুন্ন রাখাও জরুরি এবং অবশ্য কর্তব্য। তাই ভাষার ইতিহাস, গতিপথ, পরিবর্তন, বিবর্তন অনুধাবন করে একটি সুচিন্তিত ভাষা পরিকল্পনা প্রণয়ন সময়ের দাবি।
ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে নানা মতবাদ ও মতভেদ রয়েছে। নৃতাত্ত্বিকদের মতে, মানুষের ভাষা সৃষ্টিতে পশু শিকার পদ্ধতির প্রবর্তন ক্রিয়াশীল ছিল। আবার মার্ক্সীয় সমাজদর্শনে বলা হয়, ভাষা সমাজ কাঠামোর অন্যতম উপাদান। কারো কারো মতে, ভাষা সংস্কৃতির অঙ্গ। মানুষ একই সঙ্গে প্রকাশ আর বিকাশধর্মী জীব। সেই অর্থে ভাষাই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাষার বিকাশধারা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, “নদী যেমন অতিদূর পর্বতের শিখর থেকে ঝরনায় ঝরে ঝরে নানা দেশের ভিতর দিয়ে নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পৌঁছয়, তেমনি এই দূর কালের মাগধী ভাষা আর্য জনসাধারণের বাণী ধারায় বয়ে এসে সুদূর যুগান্তরে ভারতের সুদূর প্রান্তে বাংলাদেশের হৃদয়কে আজ ধ্বনিত করেছে, উর্বরা করেছে তার চিত্তভূমিকে।”
খ্রিস্টপূর্ব ৮০০-৪০০ অব্দ পর্যন্ত কথ্য লিখিত ভাষাকে প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা বলা হয়। পণ্ডিতদের অনেকেই মনে করেন, সংস্কৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। অনেকের মতে, প্রাকৃত ভাষা থেকেই বাংলা ভাষার উদ্ভব। প্রাকৃত ভাষা হচ্ছে সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষা।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, দশম শতকে মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম। সেই হিসাবে বাংলা ভাষার বয়স এক হাজার এক শ বছর। ‘চর্যাপদ’ হচ্ছে এই প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত একগুচ্ছ গান। এরপর মধ্যযুগে রচিত হয় ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’।
ভাষার ধর্মই হচ্ছে বদলে যাওয়া। বাংলা ভাষাও বিভিন্ন যুগে পরিবর্তিত হতে থাকে। ১৮০১ সাল থেকে শুরু হয় আধুনিক বাংলা ভাষা। সঙ্গত কারণে উনিশ শতকের বাংলা আর বর্তমান বাংলার মধ্যে অনেক অমিল রয়েছে। বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধিশালী। সুকুমার সেনের মতে, বাংলা ভাষার শতকরা ৯৬টি মৌলিক বা বাংলা শব্দ। তন্মধ্যে শতকরা ৫২টি তদ্ভব ও অর্ধতৎসম শব্দ। শতকরা ৪৪টি তৎসম শব্দ। পৃথিবীর কোনো ভাষাই কেবল নিজস্ব শব্দভাণ্ডার সর্বস্ব নয়। সব ভাষাই অন্য দেশের ভাষা গ্রহণ করে। পরিভাষা যেকোনো ভাষার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু পরিভাষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
সংস্কৃতিকে সামাজিক উত্তরাধিকার বলা হয়। ভাষা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ধারক ও বাহক। যেকোনো সমাজের এক যুগের আদর্শ-অভিজ্ঞতা, আশা-আকাক্সক্ষা, আনন্দ-বেদনা অন্য যুগে ভাষার মাধ্যমে বাহিত হয়। তাই কোনো জাতির ভাষা ও সাহিত্যই হচ্ছে জাতিটির চিন্তার ভাণ্ডার। এই চিন্তার অনগ্রসরতায় নবচেতনার বিকাশ হয় না।
পৃথিবীর সব ভাষারই একটি শৃঙ্খলা অর্থাৎ নির্দিষ্ট ব্যাকরণ, অভিধান, শব্দভাণ্ডার, উচ্চারণরীতি, ভাষা ব্যবহার বা প্রয়োগরীতি থাকে। এটি সমাজের যৌথ সম্পদ। ভাষা কোনো শ্রেণি বা গোষ্ঠীর সৃষ্টি নয় বলে মনের ভাব সহজে প্রকাশ করার জন্যই ভাষার শব্দসংখ্যা বাড়ে। শব্দের বানান ও উচ্চারণ পরিবর্তিত হলেও ব্যাকরণ ঠিক থাকে।
মানুষের স্বাধীনতার অন্যতম সূচক হচ্ছে ভাষা। কারণ, ভাষা নিজেও স্বাধীনতাপ্রত্যাশী। ভাষার সঙ্গে রাজনীতি, অর্থনীতি ও জাতীয়তাবোধ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যেমন রোমান সাম্রাজ্য বিস্তৃত হওয়ার ফলে লাতিন সমগ্র ইউরোপের সর্বজনীন ভাষায় পরিণত হয়। কিন্তু রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর সেই সর্বজনীনতা বিনষ্ট হয়।
যেকোনো ভাষা বিকাশের জন্য প্রয়োজন জাতীয় চেতনা। একটি জাতি যখন বোধ করে যে এই ভাষা তাদের, তখনই বিকশিত হতে থাকে ভাষাটি। জাতীয়তার অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে ভাষা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল অনুপ্রেরণা হচ্ছে মহান একুশে; এবং আমাদের জাতীয়তাবাদের অনিবার্য ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন ব্যর্থ হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ইতিহাস অন্য রকম হতে পারত। সেই সাথে বাংলা ভাষাও লুপ্ত হয়ে যেত। যেমন ভাষা সম্প্রদায়ের অভাবে বা রাজনৈতিক কারণে পৃথিবী থেকে বহু ভাষা হারিয়ে গেছে।
আজ একুশে ফেব্রæয়ারি বাঙালি জাতির আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মবিশ্লেষণের দিন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে জনসাধারণের মনে প্রকৃত শ্রদ্ধা ও মূল্যবোধ জাগ্রত এবং সেই সাথে বাংলা সাহিত্যের পাঠক সম্প্রদায় সৃষ্টি করতে হবে। এ ভাষার মাধুর্য ও স্বকীয়তা রক্ষার্থে সর্বস্তরে শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার, সঠিক বানানরীতি ও উচ্চারণচর্চা প্রয়োজন। কারণ, অনুশীলনই ভাষাকে যুগের সাথে সূত্রায়িত করে। তাই ভাষা পরিচর্যার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শুদ্ধভাবে ভাষা পরিচর্যা করলেই ভাষা উন্নয়ন সম্ভব। ভাষার উন্নয়নে মানুষের ভুমিকা সর্বত্র অপরিহার্য। বিভিন্ন ভাষা সম্প্রদায় ভাষার উন্নয়নের জন্যই ভাষা একাডেমি বা ভাষা কমিটি বা কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
সাম্প্রতিককালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা অভিধান, বানান রীতি নিয়ে যে বিতর্ক ও বিভ্রান্তিগুলো দেখা যাচ্ছে, আগামী প্রজন্মের স্বার্থে সেগুলো অতিসত্বর দূর করে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন অতি জরুরি।
বাংলাদেশে ভাষানীতি বলতে আমরা বুঝে থাকি বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা। বাংলাদেশের সংবিধানেও তা লিপিবদ্ধ আছে। ভাষানীতি অনেক বিস্তৃত ব্যাপার। এর কয়েকটি স্তর বা ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন এক. উচ্চশিক্ষায় ভাষাটি ব্যবহার; দুই. উচ্চ আদালতে ব্যবহার; তিন. দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে কি না। এই তিন ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার দেখলেই বাংলা ভাষার মর্যাদা অনুমান করা যায়। শিক্ষা পদ্ধতিতে মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃভাষার জ্ঞান যথার্থ হলেই একজন শিক্ষার্থী অন্যান্য যেকোনো ভাষা সহজেই শিখতে পারে।
আগামী প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে মাতৃভাষাসহ দু-তিনটি ভাষা জানতেই হবে Ñ এটি বাস্তবতা। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও সর্বজনীন স্বার্থসংশ্লিষ্ট সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন ও উচ্চশিক্ষায়, বিজ্ঞানচর্চায়, আদালতের রায়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে দেশব্যাপী একুশের চেতনা জাতীয় চেতনায় রূপান্তরিত হয়নি।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ভাষা ব্যবহারের বিচারে (স্টেট অব আর্ট অর্থাৎ ভাষা পরিস্থিতি) বাংলা ভাষার উচ্চারণ ও শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে একপ্রকার স্বেচ্ছাচারিতা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন : ছ/স, র/ড়, ব/ভ, গ/ঘ, ই/য়, /িী-এর ভুল ব্যবহার।
বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞার ক্ষেত্র ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দাপ্তরিক কাজ, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহের নামকরণ, টিভি সম্প্রচার কেন্দ্রের নাম, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বড় রাস্তার নাম, দোকানের নাম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এমনকি সন্তানের নামও বিদেশি শব্দে (ইংরেজি, আরবি) রাখা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলা নামকে হিন্দুয়ানি মনে করা হচ্ছে। অধুনা আরবি শব্দের জয়জয়কার চলছে। পাশাপাশি সমান তালে চলছে অদ্ভুত ধরনের উচ্চারণ বিকৃতি। ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভ‚মিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এফএম রেডিওসহ বিভিন্ন চ্যানেলের নাটকে আঞ্চলিক ভাষার ব্যাপক ব্যবহার এবং অশুদ্ধ উচ্চারণ প্রমিত বাংলাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যেমন বর্তমান প্রজন্ম আধুনিকতার নামে ‘র’ ও ‘ড়’-এর উচ্চারণগত পার্থক্য ভুলে যাচ্ছে। রেডিও হয়ে যাচ্ছে ড়েডিও, আমাদেড় (আমাদের) আবার যেখানে ড়-এর প্রয়োজন, সেই উচ্চারণ হচ্ছে র দিয়ে। রেডিও ও টিভি উপস্থাপকের বাংলা উচ্চারণ বিকৃতি, প্রতিটি বাক্যে অকারণ ইংরেজি শব্দ ব্যবহার রীতিমতোভাবে ভীতিকর অবস্থায় পৌঁছেছে। অথচ মানুষের আনুগত্যের মধ্যেই ভাষার বসতি।
ভাষা স্রোতের মতো। এই স্রোতের সঙ্গে অনেক ময়লা-আবর্জনা, শ্যাওলা ভেসে আসে। জনপ্রিয়তার কারণে অনেক শব্দ টিকে থাকে। যেগুলো ভেসে যাওয়ার মতো, সেগুলো ভেসে যাবেই। ভাষা নিজের গতিতেই চলে। ভাষা শাসন মানে না।
আশার কথা হলো, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা ভাষার আধিপত্য চলছে। যদিও তরুণদের একটি অংশ এখনো রোমান হরফে বাংলা লিখছে। শহুরে তরুণরা বাংলা শব্দের অদ্ভুত সংক্ষিপ্তরূপ ব্যবহার করছে; ‘মন চায়’কে লেখা হয় ‘মুঞ্চায়’; ‘আপনি’কে লেখা হয় আপ্নে। আবার মনের আনন্দে তরুণরা উচ্চারণ করছে আজিব, পুরাই অস্থির, জিনিস, প্যারা (ঝামেলা বোঝাতে) জটিলস, অসাম, সে…ই রকম, হাইস্যকর ইত্যাদি শব্দ। আবার কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলে বলে, খেলতাম না, খেলুম না। পাত্তা দিতে না চাইলে মনের ভাব প্রকাশ করছে, বেইল নাই, গুণলাম না, ব্যাপার না, কিংবা অফ যা শব্দগুলো। আবার একটু অবাক হলে লিখছে, কেমনে কী, মাইরালা, ক্যামনে ম্যান, কী এক্টাবস্থা ইত্যাদি। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে মজা করে কথায় কথায় বলছে, ফইন্নি, ইউ হ্যাব টু বুঝতে হবে, উই উইল বি ফিদা। আজকাল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের আড্ডায় শোনা যায় এসব মজার ও জনপ্রিয় বাংলা শব্দ। বাংলার সাথে কিছু কিছু ইংরেজি শব্দের ভিন্নার্থ ব্যবহারও দেখা যায়।
সম্প্রতি কম্পিউটার, মুঠোফোন, খুদেবার্তা তথা ইউনিকোডে বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অন্তর্জালে (ইন্টারনেট) বাংলা ফন্ট চালু হয়েছে; এবং বাংলা ভাষায় হয়েছে উইকিপিডিয়া। এসব থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে সচেতনভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার, ভাষা পরিকল্পনা গ্রহণ করে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করা হলে স্বীয় শক্তিতেই বাংলা ভাষা সব প্রতিক‚লতা পেরিয়ে অগ্রসর হবে।
অমর একুশের ৬৯তম উদযাপনকালেও একটি সুনির্দিষ্ট ভাষাবোধ, ভাষানীতি ও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। বর্তমানে বাংলা ভাষার প্রতি আবেগের তুলনায় প্রয়োগ অল্প। এটাই ভাষার সমস্যা। আমরা বাংলাকে মনে করি আবেগের এবং ইংরেজিকে প্রয়োজনের বিষয়। বিশেষ কাজের প্রয়োজনে কোনো বিশেষ ভাষাকে কৃত্রিম উপায়ে স্বীকার করা চলে। যেমন ইংরেজি ভাষাকে করেছি। এ প্রসঙ্গে ভাষাবিদ ফিশম্যান উল্লেখ করেন, এটি অহংকারের বিষয় নয়, এটি ব্যবহারের বিষয়। আত্মপ্রকাশের জন্য ভাষার একটি অকৃত্রিম প্রয়োজন আছে। সুতরাং আমরা যদি বাংলাকে প্রয়োজনের বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্বল ভাষাকে গ্রাস করে নিচ্ছে বলে অনেকেই ইংরেজি ভাষাকে বলছেন সর্বগ্রাসী ভাষা। বাংলা ভাষার মতো ঐতিহ্যবাহী ভাষাও এর হুমকি ও আগ্রাসনের শিকার। আগ্রাসন ও হুমকি প্রতিরোধে দরকার সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো নয়া ঔপনিবেশিক চাপের মুখে বহুজাতিক বাণিজ্যিক সংস্থার কাছে তাদের বাজার খুলে দিতে বাধ্য। মুক্তবাজার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, গণমাধ্যম ও ভাষাকে তারা সুকৌশলে কাজে লাগাচ্ছে।
একুশ শতকের পরিবর্তিত বিশ্বে বাঙালি পরিচয়কে ঊর্ধ্বে রাখার স্বার্থেই মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাটা শিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে একাধিক ভাষা শেখা যেতেই পারে। কিন্তু কিছুতেই বাংলার বিকল্প ইংরেজি হতে পারে না। কারণ, পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যারা মাতৃভাষা বাদ দিয়ে দ্বিতীয় কোনো ভাষা ব্যবহার করে উন্নতি করেছে।
জিনাত আরা হক
সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ, বাংলাদেশ।
আসসালামু আলাইকুম, ম্যাম ?
বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষার বিকৃত হচ্ছে বেশি।
ম্যাম, আমি আপনার লেখাটি পড়লাম, আপনি বাংলাদেশে সামষ্টিকভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে কিছু লেখেননি। আশা করি, বাংলা ভাষার ব্যবহার ও গুরুত্ব নিয়ে সামনে লিখবেন।