রাফসান রোহান: নতুন কিছু শিখতে কিংবা শিখাতে ভালোবাসেন ফয়েজ আহমেদ প্রান্ত। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হবার পরপর অবসর সময়টাতে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখা শুরু করলেও ধীরে ধীরে প্রেমে পড়ে যান। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে স্নাতকে কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তবে গ্রাফিক্স ডিজাইনের নেশাটাকে ভুলতে পারেন নি। তাই সবকিছু ছেড়ে এটাকেই বেছে নিয়েছেন ফয়েজ আহমেদ প্রান্ত।
গ্রাফিক্স ডিজাইন জগতের মোটামুটি সব বিভাগেই পদচিহ্ন থাকলেও ব্র্যান্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়া এডভার্টাইজিং পোস্টার ডিজাইন এবং উআই উএক্স ডিজাইন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কাজের মধ্যে ভিন্নতা, মাধুর্যতা এবং নান্দনিকতা বেশ পছন্দ তার। ফয়েজ আহমেদ প্রান্তের ভাষ্যমতে কাজের মধ্যে ভিন্নতা এবং মাধুর্যতা না থাকলে হয়তো সে টিকেতেই পারতো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক দশটিরও বেশি প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে নিজের কাজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। বর্তমানে দেশের বৃহৎ টেক এডুকেশনাল প্ল্যাটফর্ম টেন মিনিট স্কুলের ক্রিয়েটিভ টীমের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যুক্ত আছেন। বরাবরের মতো আড়ালে থেকেই কাজ করতে ভালো লাগতো তার। তবে টেন মিনিট স্কুলে যুক্ত হবার পর নিজেকে লোক সমাজের সামনে নিয়ে আসতে অভ্যস্ত হোন তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে নতুনদের সাহায্য করতে এবং আগ্রহীদের পাশে দাঁড়াতে এক টাকার কোর্স চালু করেছেন ফয়েজ আহমেদ প্রান্ত। যেখান থেকে অতি সহজেই ডিজাইনের খুঁটিনাটি কিংবা সফটওয়্যারগুলোর কলাকৌশল শিখতে পারবে যে কেউই।
২০১৬ তে ফয়েজ আহমেদ প্রান্ত তার এসএসসি পরীক্ষার পর অবসর সময়টা কাজে লাগাতে বন্ধু-বান্ধবের সাথে যুক্তি পরামর্শ করে পড়াশোনার বাইরে একটি দক্ষতা অর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরটি বেছে নিয়েছেন তিনি। ঠিক তখনই উচ্চ মূল্যের কোর্স হওয়ায় এবং সঠিক প্রদর্শক না পাওয়ায় তার বাকি বন্ধু-বান্ধবেরা হাল ছেড়েছে। তৎকালীন সময় পরিবারের সহায়তা পেয়ে তিনি এগিয়ে গেলেও বাকিদের হাল ছেড়ে দেয়া মেনে নিতে পারেন নি। শুধু সেই গুটি কয়েক বন্ধুবান্ধব নয় এমন আরও অনেক প্রতিভার আলোই মাঝ পথে নিভে যাচ্ছে যথার্থ পরিচর্যার অভাবে। বিষয়গুলো ফয়েজ আহমেদ প্রান্তকে ভীষণ ভাবাতো। পথে অনেক বাঁধা পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। শুধু তাই নয়, বহু জোট ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে। মোটকথা নিজ জীবনের পূর্ণ অভিজ্ঞতা থেকেই নব্য আসা প্রতিভাবান মানুষের পাশে থাকতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। তাই এক টাকায় স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি কোর্স মডিউল সাজিয়েছেন। যেখানে থাকছে আপনি কিভাবে এবং কেনো গ্রাফিক্স ডিজাইনের দক্ষতা অর্জন করবেন। কি কি টুলস ব্যবহার করতে হবে। টুলসের কলাকৌশল। প্রাথমিক পথ থেকে যাত্রা শুরু করে পেশাদার পর্যায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ডিজাইনার কমিউনিটি দৃঢ় করতে এবং প্রতিভার লোকজনদের যথার্থ সাহায্য পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক বাজারে এবং দেশের ভেতরে কাজ করার জন্যে সকল স্তরের ডিজাইনারদের উৎসাহী করে তুলতে নানান সময় নানান উদ্যোগ নিতে দেখা যায় ফয়েজ আহমেদ প্রান্তকে। অভিজ্ঞদের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে একটি কমিনিউটি গঠন করেছেন তিনি। যা বিডি ডিজাইনারস নামে পরিচিত। ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’, ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহ.) এর প্রবাদটি তার কাজের অনুপ্রেরণা।
পরিকল্পনা অনুসারে বিশ্বব্যাপী নিজেদের খ্যাতি ছড়িয়ে দিতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতেও এক পাও পিছুপা হবেন না সে। গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে আগ্রহী হলেও সঠিক পরিচর্যা ও প্রদর্শক না থাকায় অনেকেই মাঝ পথে ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে। তার লক্ষ্য সফল হলে সামনে এমন ঘটনা আর ঘটতে দেখা যাবে বলে আশা করছেন তিনি। বর্তমানে অনেক ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে ফ্রীতে কিছুটা হলেও শিখা যায়। তবে সেই শিক্ষাটা অনেকেই গা ছাড়া বলে মনে করেন। কারণ গুরুদক্ষিণা ছাড়া দৃঢ় প্রত্যয়ে কেউই শিখতে বসবে না। তাই ন্যূনতম একটি গুরুদক্ষিণা বেঁধে দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
পরিবার সবসময় তার কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। বাবা মায়ের অদম্য বিশ্বাস রয়েছে তার উপর। ফয়েজ আহমেদ প্রান্তও তাদের বিশ্বাস অটুট রাখতে পেরেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজাইনের খুঁটিনাটি দক্ষতাকে আরো ঝালাই করতে সময়কে বিশদভাবে কাজে লাগিয়ে আসছেন তিনি। বর্তমানে অর্থাৎ ২০২২ এর শেষ অর্ধেকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাপ্তি বর্ষ। তাই একটু চাপে থাকলেও ডিজাইন চর্চার সময়টা হাত ছাড়া করছেন না। কোভিড-১৯ এর সময়টায় লক ডাউন চলাকালীন অনেকটা নিজেকে সময় দিয়েছেন তিনি। সে সময় ছিলো তার জন্য গোল্ডেন আওয়ার। প্রতিটি সেকেন্ড হিসেব করে পা ফেলতেন সেকালে। যার ফলে বৃথা যায় নি সময়গুলো। ডিজাইন প্রিন্সিপাল নিয়ে দুইটি বইও লিখেছেন তিনি যা পাওয়া যাবে তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে।
বাংলাদেশের গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে এক অলৌকিক পদচিহ্ন রেখে যেতে চান এই অদম্য স্বপ্নবাজ ফয়েজ আহমেদ প্রান্ত।