এস এম তারিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা

  
    

১৯৭১ সাল। রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের যুদ্ধে বীর বাঙালী মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত করেছিলেন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এই যুদ্ধে আমরা হারিয়েছি ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রম ও আত্মত্যাগ এবং অসংখ্য বুদ্ধিজীবির প্রাণ। ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই পাক হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসর ঘাতকদের। বিজয়ের এই মাসে আমরা প্রশান্তিকায় শ্রদ্ধা জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
আজ প্রশান্তিকায় থাকছে বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম তারিকুল ইসলামের কথা। আমাদের জানামতে তাঁর কথা এর আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি।

এস এম তারিকুল ইসলাম 

জন্ম: ১৯৫৬ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখ। বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুরের চর পানাগাড়ী গ্রামে।

এস এম তারিকুল ইসলাম তখনও মেট্টিক পাশ করেননি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি দেশ মুক্তির সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন। ট্রেনিংয়ের উদ্দেশে দার্জিলিং রওয়ানা হন। ভারতের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির পানিঘাটা নামক স্থানে তিনি অস্ত্রের ট্রেনিং করেন।
এরপর যুদ্ধকালীন সময়ে ৭ নম্বর সেক্টরে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেন।

যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতা বলতে যেয়ে তাঁর চোখ চকচক করে উঠে। তিনি বলতে থাকেন, “সেদিন ছিল ডিসেম্বরের ২ তারিখ ১৯৭১ সম্ভবত মঙ্গলবার, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সকাল বেলা পাটাগ্রাম খুকশিয়া থেকে রওনা হই কাজিপুর থানা আক্রমণ করতে। থানার পশ্চিম পাশেই শাউট্টালা গ্রাম তার পশ্চিমে ওয়াবদা বাঁধ। গ্রামের ভেতর দিয়ে আমরা কমান্ডার আব্দুস সাত্তার ভাইয়ের নেতৃত্বে থানার দিকে অগ্রসর হই এবং নির্দেশ মোতাবেক সবাই পজিশন নিই। সাথে সাথে যার যার হাতিয়ার গর্জে উঠে, বিপরীত দিক থেকেও গুলিবর্ষণ শুরু হয়। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ চলে। পাক-হানাদারদের যুদ্ধবিমান আক্রমণের পূর্বাভাস পেয়ে আমরা গ্রামের পেঁছনে চলে যাই। সেদিন আমাদের দুইজন সহযোদ্ধা শহিদ হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। আমার গ্রুপের দুইজন আমজাদ ও কাসেম গুরুতর আহত হন। তাদেরকে স্থানীয় টেংলাহাটা দাতব্যশালায় ডাঃ ফজলার রহমানের কাছে চিকিৎসা দেয়া হয়। উল্লেখ্য, হানাদার বাহিনী আমাদের ত্রিমুখী আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং রাতারাতি তারা পালিয়ে যায়। বেশ কয়েকজন পাক-হানাদার নিহত হয় এবং কাজিপুর শত্রুমুক্ত হয়।”

ঢাকার স্থানীয় স্কুল থেকে ছাত্র ছাত্রীরা এসেছিলো তাঁর কাছে যুদ্ধদিনের কথা শুনতে।

এস এম তারিকুল ইসলাম বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকে চাকুরী জীবন শেষ করে এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। সংসারে রয়েছে স্ত্রী, দুই কন্যা ও নাতি। নিজের জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে যে দেশকে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন সেই দেশ আপনাকে কি দিয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বড় কঠিন প্রশ্ন। আমরা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সিরাজগঞ্জের ছাএনেতা আমির হোসেন ভুলু ভাইয়ের নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর নির্দেশে আমরা যুদ্ধে যাই। দেশ স্বাধীন হবে, দেশের মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে পাবে।যেখানে থাকবেনা কোন হানাহানী মারামারী কাটাকাটি, সকলের সমান অধিকার থাকবে। দেশের প্রতিটা গ্রাম হবে আদর্শ গ্রাম। প্রতিটা মানুষ হবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত। স্বাধীনতা পরবর্তী ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে এবং ৩রা নভেম্বর ৭৫ এ চার নেতার হত্যার পর দেশের শাসনব্যবস্থা সামরিক বাহিনীর হাতে চলে যায় ফলে স্বাধীনতার কাংখিত আশার আলো নিভে যায়। জননেত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দারিদ্র্যমুক্ত ক্ষুধামুক্ত হতে চলেছে। এখন দেশকে সন্ত্রাস ও দূর্নীতিমুক্ত করতে পারলেই শহীদের রক্তভেজা স্বাধীনতার সুফল দেশবাসী ভোগ করতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।”

প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে এস এম তারিকুল ইসলামের মতো নাম জানা ও নামহীন অজ্ঞাত অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments