করোনাবুদ্ধি । পিয়ারা বেগম

  
    
পিয়ারা বেগম

                      রম্যগল্প (১)

জ্যোষ্ঠের ভ্যাপসা গরম। শহরের মিনি গলির একজন বাসিন্দা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বাসার সামনের উঠোনে চেয়ার নিয়ে বসলেন। হাতে তালপাখা।
দেশে তখন করোনা-আতঙ্কিত মানুষ দিশেহারা। তাই করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার কারফিউ জারি করছে। বিদ্যুতও নেই। তবে চাঁদিমার ফকফকা জোছনায় মোটাসোটা ভদ্রলোক বেশ ঘুমঘুম আয়েশী মদিরতায় চাঁদ-জোছনা উপভোগ করছিল। হঠাৎ দুইজন পুলিশ এসে বললেন, এ কি কারফিউর মধ্যে আপনি আরাম কেদেরায় বসে তালপাখায় বাতাস খাচ্ছেন? ভদ্রলোক চটপট চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। তাঁদেরকে সালাম দিয়ে বললেন,
জ্বি!!
জ্বী মানে? আপনি জানেন না এখন কারফিউ?
জ্বী স্যার, জানি!
কারফিউর সময় ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ এটা জানতেন না?
জ্বি স্যার, জানতাম।
এর শাস্তি কী জানেন? আপনাকে গুলি করারও নির্দেশ আছে।
জানি, স্যার!
জেনেও আপনি বাইরে এসে বসলেন?
জ্বী স্যার!
আপনাকে আমরা এখন এরেস্ট করতে পারি এটা আপনি জানেন?
জ্বী স্যার!
কী, বার বার জ্বী স্যার, জ্বী স্যার বলছেন?
জ্বী স্যার!
আবারো জ্বি স্যার?
সরি, স্যার!
আপনি এখন এরেস্ট!
ইয়েস স্যার!
বেশ তো, চলুন তাহলে?
ওকে স্যার।
স্যার, আমি তাহলে চেয়ার আর পাখাটা ঘরে রেখে আসি। আর আমার স্ত্রীর কাছে বিদায় নিয়ে আসি।
ঠিক আছে, যান।
পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট পরেও লোকটি ঘর থেকে বের না হওয়ায় পুলিশের সহকারি দরজায় কড়া নাড়ল। ভেতর থেকে উত্তর আসে কে?
পুলিশ বললে, কে মানে? এই তো আমরা আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বের হয়ে আসুন।
স্যার, কারফিউর সময় ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। তাই না স্যার? তাই এখন আমি বের হতে পারবনা স্যার?
হ্যাঁ, তাই তো!
ইয়েস স্যার, গুড নাইট স্যার!

পুলিশরা লোকটির বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হলো। লোকটিকে ক্ষমা করে দিল এবং হাসতে হাসতে চলে গেলেন।

              রম্যগল্প ( ২ ) 

লোকটি ভাবছে, আজ আর পুলিশ আসবেনা। তাই আধা ঘন্টা পর লোকটি এবার মাদুর- বালিশ নিয়ে উঠোনে বসে রইল। হঠাৎ তিনজন পুলিশ এসেই লোকটিকে পিঠে লাঠি দিয়ে মারল একখান। লোকটি লাঠির ঘা খেয়ে ধড়ফড়িয়ে ওঠে দাঁড়াল। একজন বলল, কারফিউর সময় বাইরে বসে থাকা? তোকে গুলি করা উচিত। আরেকজন বলল, ঠিক আছে, গুলি করে মেরে লাভ নেই। এরেস্ট কর। আরেকজন বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে, আপনি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দিন। আমরা আপনাকে ছেড়ে দিব।
লোকটি তাদের বেশভূষা এবং কথা বলার ধরণ দেখে বুঝেছে এরা নকল পুলিশ। মানে বাটপার পার্টি। তাই সে মনে মনে ফন্দি এঁটে বলল, আমার সাথে বাটপারি? দেখাচ্ছি মজা! তখনি সে কাঁদো কাঁদো হয়ে বড় পুলিশের দু’পা জোরসে জড়িয়ে ধরল। বলল, স্যার গো, গতকালই আমার করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। আর আমার স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঘরেই আছে। আপনারা জনগণের বন্ধু। আমরা দুইজনে হাসপাতালে যেতে চাই। এই বলে ভদ্রলোক আরো জোরে পুলিশের দুই পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে। আর বলছে – স্যার, আপনে আমাদের বাঁচান স্যার!  নকল বড় পুলিশ অফিসার বলল, কী? কী বললে? ক, ক, করো, করোনা?
জ্বী স্যার, করোনা! এই জন্যই তো আপনার পায়ে ধরছি স্যার।
ও রে বাপরে! বলে কী?  আরে পা ছাড়ো, ছাড়ো বলছি। আরে ছাড়ো না? ওরে বাবারে! করোনায় ধরলে রে!! বাকী দুই পুলিশকে বলছে, তোরা আমারে বাঁচা ভাই। করোনার কথা শুনে বাকী দুই নকল পুলিশ লাঠিসোটা ফেলে, বড় পুলিশেকে রেখেই ভোঁ দৌড়! বড় পুলিশ কোন রকমে লোকটির সাথে ধস্তাধস্তি করে, বেল্ট-প্যান্ট ছেড়ে সেও দৌঁড়! হায় রে দৌঁড় কারে কয়? দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আইজ দৌঁড়, কাইল দৌঁড়, পরশু দিন দুপুর পর্যন্ত দৌঁড়!! দৌঁড় আর শেষ হয় না!!
লোকটি বেল্ট-প্যান্ট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে শুধু বলল, হায় রে বাঙালি! করোনায়ও মানুষ হলি না!

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments