করোনা পরীক্ষায় পিছিয়ে বাংলাদেশ । পলাশ বসাক

  
    
পলাশ বসাক

জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা অনেক কম হচ্ছে। আর গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আর্থ-সামাজিকভাবে প্রায় একইরকম দেশ ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশ ভীষণ রকমভাবে পিছিয়ে আছে।

চিত্র ১. বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামে প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষার পরিমাণ।

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা ওয়েব সাইটে (https://ourworldindata.org/) প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, ২৪ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ২৩ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। একই সময় ভারত পরীক্ষা করেছে প্রতি লাখে প্রায় ৩৯ জনকে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম পরীক্ষা করেছে লাখ প্রতি প্রায় ১৯২ জনকে। চিত্র ১ থেকে মার্চ মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারত ও ভিয়েতনামের তুলনায় পিছিয়ে আছে। প্রথম রোগী ধরা পরার ৫১ দিনের মাথায় অস্ট্রেলিয়া তার প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় ৬৫৯ জনকে পরীক্ষা করেছিল।

বাংলাদেশে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৩,১১৩ জনকে পরীক্ষা করে ৪,৯৯৮ জন করোনা রোগী খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে। এপ্রিল মাসের শুরুতে প্রতিদিন মাত্র ১৫০টি পরীক্ষা হলেও এখন দৈনিক পরীক্ষা করা হচ্ছে ৩,০০০ হাজারেরও বেশি নমুনা। সবচেয়ে বেশী পরীক্ষা করা হয় ২৪ এপ্রিল (৩,৬৮৬ টি) (চিত্র ২)।

চিত্র ২. এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে দৈনিক করোনা পরীক্ষার ও নতুন রোগীর সংখ্যা। 

গতকাল (২৫ এপ্রিল) আই.ই.ডি.সি.আর. (রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) যে প্রকাশিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে ৩০৯ জন নতুন রোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। এই রোগীগুলো খুঁজে পেতে পরীক্ষা করা হয় ৩ হাজার ৩৩৭ টি নমুনা। দেখা যাচ্ছে আগের দিনের তুলনায় গতকাল কম সংখ্যক পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দিনের তুলনায় আনুপাতিক হারে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক রকম কম দেখা যাচ্ছে। এমন মনে করার কারণ হলো যে এপ্রিল মাসের প্রতিদিনের করোনা পরীক্ষার সংখ্যা এবং নতুন রোগী পাবার সংখ্যার মধ্যে উচ্চমাত্রার আন্তসম্পর্ক (high correlation) রয়েছে (চিত্র ৩)। সংখ্যাতাত্বিক বিচারে এমনটি হওয়া অসম্ভব না হলেও অস্বাভাবিক।

চিত্র ৩. বাংলাদেশ দৈনিক করোনা পরীক্ষা ও নতুন রোগীর সংখ্যার আন্তসম্পর্ক।

দেশে করোনা মহামারী যে তীব্র আকার ধারণ করেছে তাতে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসার প্রধান উপায় হলো যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরীক্ষা করে সনাক্ত করতে হবে এবং তাদেরকে সুস্থ মানুষদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। টেষ্ট কিট বা জনবলের অভাব থাকলে বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা নিয়ে তা বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, মার্চ মাসের ৮ তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী খুঁজে পাওয়া গেছে। মার্চ মাসের ১৫ তারিখে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ জনে। তবে মাত্র ৪১ দিনের মাথায় বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা পাঁচ থেকে পাঁচ হাজারের ঘরে পৌঁছে গেছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৯ টিতেই করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে।

তথ্যসূত্রঃ
Total COVID-19 tests per 1,000 people
https://ourworldindata.org/grapher/full-list-cumulative-total-tests-per-thousand?year=2020-04-25

পলাশ বসাক
পিএইচডি রিসার্চার, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া।
জিআইএস সুপারভাইজার, উইনজ্ ক্যারিবি শায়ার কাউন্সিল, নিউ সাউথ ওয়েলস।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments