করোনা মহামারীতে গরীব মানুষের জন্যে কিছু করুন

  
    

আবুল হোসেন জিয়া, পার্থ থেকে: ‘জীবে প্রেম করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর’। মনে ও প্রাণে ধারণ করি অমোঘ এই বাক্যটি। যার পরিক্রমায় আমাদেরও প্রচেষ্টা এই করোনা মহামারীতে। আমার জীবনে এই প্রথম আমরা রয়েছি দু’শ পরিবারের জন্যে একটু বড় পরিসরে ত্রাণের কাজ সম্পন্ন করার পথে। আজ সেটাই বলতে এসেছি। আমার এই লেখা যদি এক জনকেও অনুপ্রাণিত করে, তবেই স্বার্থক হিসাবে ধরে নিব।

আমি প্রত্যন্ত গ্রামের সন্তান। আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা মানিকগঞ্জের এক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নদী ভাঙনে জর্জরিত এক গ্রামে। আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম, তখন আমাদের ঘরবাড়ি জমি জমা সব নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আনুমানিক ১৯৯১ সাল থেকে আমাদের গ্রামের মানুষ নদীর সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছে। বহুবার আমাদের ভিটে বাড়ি নদীতে ভেঙে গেলেও এক অজানা মায়ার কারণে মাতৃভূমির টানে নদীর পাড় ঘেষেই আমাদের বারংবার গৃহ নির্মাণ। যমুনার গর্ভে মাঝে মাঝে চর জেগে উঠে – মানুষ আশা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করে। বছর দুই এক না যেতেই আবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তবু মানুষ ভিটে ছাড়ে না – নতুন করে চর জাগ্রত হওয়ার আশায়। যতই সমস্যা থাকুক, বাপ দাদার এলাকা ছেড়ে কেউ কি সহজে অন্যত্র যেতে চায়! তারপরেও অনেকেই জীবিকার তাগিদে শহরে পাড়ি দিয়েছে কিন্তু যারা বৃদ্ধ অসহায়, পরিবারের হালধরার কেউ নেই, যাদের মাটি কেটে দুবেলা অন্ন জুটতো তারা আজ অত্যন্ত মানবতার দিনযাপন করছে।

মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু হয়েছে ত্রাণ কার্যক্রম

করোনা ভাইরাসের কারণে চলমান দীর্ঘ লকডাউনে অধিকাংশ মানুষ কর্মহীন, ঘরে খাবার নেই। সরকারের রিলিফ ছাড়া আমাদের এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম নেই বললেই চলে – চোখে পড়বে না। সরকারের রিলিফ, সেটা তো সীমিত লোকদের জন্যে এবং এর পিছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। অনেক সময় শুনেছি টাকা দিয়ে সেই কার্ড কেনার কথা, চেয়ারম্যান মেম্বারদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কথা। যাহোক আমরা কি করতে পারলাম, সেটাই আসল।

স্কুল বন্ধুদের সাথে আমি আলোচনা শুরু করলাম, এই সময়ে আমাদের কিছু করা উচিত এলাকার লোকদের জন্যে। আশেপাশের কতজন কত জায়গায় সাহায্য করছে। আমরা কেন পারবোনা? বন্ধুদের পজিটিভ সাড়া পেয়ে আমরা মাঠে নেমে গেলাম। অতি দ্রুত আমাদের টার্গেট একশ’ জনের টাকা উঠে এলো। যেহেতু প্রচুর অভাবী লোক আছে আমাদের এলাকায়, তাই টার্গেট বাড়িয়ে দ্বিগুন করলাম। আমাদের ফান্ড কালেকশও চূড়ান্ত পর্যায়ে। এখন দুশ’ লোকের জন্যে অর্ডার করে সেটা সুষ্ঠু বন্টনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ, রমজানের ১০ রোযার আগেই আমরা উপযুক্ত গরীব মানুষের ঘরে সহযোগিতা পৌঁছে দিতে সক্ষম হব।

স্কুলের সেই বন্ধুরা, যাদের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে গরীব মানুষকে সাহায্য করার কাজ

আমরা ফান্ড কালেকশনের জন্যে বিকাশ, রকেট ও একটা ডেডিকেটেট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করি। দোয়া চ্যারিটি নামে আমাদের একটা গ্রুপ তৈরি করা হল। লোকজন সাহায্য করতে চায়, দরকার শুধু তাদের কাছে আপনার মহৎ কর্মের কথা পৌঁছে দেওয়া। যোগাযোগ করার বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শুরুতে আমরা সবাইকে আমাদের উদ্দেশ্যের কথা জানাই। দানের প্রচার নিয়ে দ্বিমত থাকলেও নিয়ত ঠিক থাকলেই হয়। দাতাগনের সম্মতি নিয়ে যতটুকু প্রচার করা যায়, তাতে আপনার গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে ও ধীরে ধীরে সাফল্য আসতে বাধ্য।

আমাদের স্কুল বন্ধুদের নিয়ে ছোট্ট একটা সংগঠন আছে, যেটি আমাদের এই ত্রাণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। কোন ধরনের লোকসমাগম ছাড়াই উপযুক্ত ব্যক্তিদের ঘরে ঘরে ত্রাণ আমাদের দোয়া টিমের সদস্যরা পৌঁছে দিবে। এই জন্যই এলাকার উপযুক্ত ত্রাণ গ্রহীতাদের নির্ভুল বন্টন লিস্ট তৈরির কাজ চলছে। যাচাই বাছাই করে, লিস্ট চূড়ান্ত করে প্রত্যেককে একটা করে টোকেন দেওয়া হবে। টোকেন ধরে পরবর্তীতে সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরনের মাধ্যমে আমাদের কাজ সম্পন্ন হবে ইনশাল্লাহ। আশা করছি, আমাদের টিম যদি এলাকায় পৌছাতে পারে,ইনশাল্লাহ মে মাসের ২ / ১ তারিখের মধ্যে আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম সম্পাদন করিতে পারবো। পরিশেষে বলব, সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে গরিব মানুষের জন্যে কিছু করার জন্যে চেষ্টা করুন, মাঠে নামলে অনেককেই আপনার পাশে পাবেন, দেখবেন কেউ আপনার পাশে একাই এসে দাঁড়িয়ে গেছে। শুধু সাহস নিয়ে আপনাকেই আগে পা বাড়িয়ে দিতে হবে – এমন মহৎ কর্মে আপনার বিজয় সুনিশ্চিত। ধন্যবাদ সবাইকে।

আবুল হোসেন জিয়া
পার্থ এয়ারপোর্টে কর্মরত
পার্থ, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments