এই লেখাটি প্রকাশ কালে করোনার আক্রান্ত ও মৃত্যুর সর্বশেষ তথ্য:
বিশ্ব: মৃতের সংখ্যা ৪১,৪৯৪; মোট আক্রান্ত ৮ লাখ ৪৬ হাজার ১৫৬, সুস্থ ১লাখ ৬৬ হাজার।
অস্ট্রেলিয়া: মৃতের সংখ্যা ২০, মোট আক্রান্ত ৪৮০৪; গতকাল ৯৫ বছর বয়সীর মৃত্যু। নিউ সাউথ ওয়েলসে আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি ২১৮২।
স্পেন: ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ৮৪৯, মোট মৃত্যু ৮১৮৯ জন।
বাংলাদেশ: মৃতের সংখ্যা ৫, আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন রোগী ২ জন। (সূত্র: আইইডিসিআর এবং জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি)
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশান্তিকায় লিখছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সচেতন নাগরিক এবং নিয়মিত লেখকেরা। আজ থাকছে সিডনি প্রবাসী লেখক ও কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্তের এই লেখাটি।

করোনা আতঙ্ক যুদ্ধের চাইতেও ভয়াবহ। যুদ্ধ হয় দু’একটি দেশের মধ্যে। কিন্তু করোনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। কেন, কি কারণ বা কি জন্য এসব প্রশ্ন এখন অবান্তর।
জিজ্ঞাসা অনেক। কিন্তু মানব সভ্যতা এমন ভীতিকর পরিস্থিতি সামলাতে পারবে তো? শুরুতেই মানুষজন যে হারে জিনিসপত্র কিনছিলো, তাতে ভয়ও হয়েছিলো। এসব খাবার খাওয়ার জন্য বাঁচাটাও তো জরুরী।
আমরা একটি সভ্য উন্নত দেশে বাস করি এ কথাটা মাত্র ১০ দিন আগে বন্ডাই বীচ নাকচ করে দিয়েছে। এমন উন্মাদনা আসলেই মারাত্মক। সরকার তবুও লকডাউন করেনি।বীচগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। একজনের বেশি দু’জনের সাথেও চলা যাবেনা। সোশাল ডিস্ট্যান্সিং, জরিমানা, জেল সব মিলিয়ে বিরাজ করছে ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।
মুক্তি কোথায় কে জানে? এমন সংকট যে দেবালয় উপাসনালয়ও দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে মানুষ?
সাধারণের ভেতরেই থাকে অসাধারণ মানুষ। যাদের আমরা অসাধারণ বানিয়ে মিডিয়ার পাদ প্রদীপের আলোয় রাখি তারাই কি সব? দেশের অভিভাবক নেতারা জীবন নিয়ে মশকরা করেছিলেন, বলেছিলেন, তারা করোনার চেয়েও শক্তিশালী। সাধারণ মানুষ তখন বসে নাই।
এক বাড়ীওয়ালী ভদ্রমহিলা এই দূঃসময়ে ভবিষ্যৎ শঙ্কা মাথায় রেখে তাঁর ভাড়াটেদের ভাড়া নেয়া বন্ধ করেছেন। সভ্য দেশে সরকার যা করছে আমাদের দেশে তা করছে বিবেকবান বিবেকবতী মানুষেরা।
এক ভদ্রলোকের খবর পড়লাম, আশীষ তাঁর নাম। নামের মতোই মানব কল্যাণে আশীষ হয়ে এসেছেন। নিজের ফ্ল্যাট বাড়ীর চাবি তুলে দিয়েছেন যাতে এয়ারপোর্টের কাছে স্বেচ্ছা নির্বাসনের জন্য ব্যবহার করা যায়।
ঢাকার রাস্তায় ন্যায্য দামে মুখোশ বা মাস্ক বিক্রি করা লোকটি ছিলেন দরিদ্র। তিনি গুলশান বনানীর দোকানদার না। দেশ পরিচালকেরা যখন মাক্স না পরার ঝুঁকি নেন তখন ইনি হয়ে ওঠেন অনুকরণীয়।
পড়লাম স্বপ্নার কথা। আমি, আমরা কেউই চিনিনা কে তিনি। মার্ক এন্ড স্পেন্সার এর নাম জানি। দুনিয়ার অন্যতম সেরা পোশাক বায়ার কোম্পানি। তার বড় পদে থাকা এই নারী কি করেছে জানেন? সরকার মিডিয়া ও সুধী গবেষকরা যখন ডাক্তারদের জরুরী নিরাপত্তা মূলক পোশাক নিয়ে চিন্তা তর্ক ও সমাধানে অস্থির, ইনি দায়িত্ব নিয়ে কাজটি শুরু করেছেন। নিরাপত্তা মূলক লাখ লাখ পোশাক বিনামূল্যে দেবে এঁরা।এই স্বপ্না ভৌমিকেরা আছেন বলেই আমরা আশার আলো দেখি। অনুজ বাদল সৈয়দ জানালেন এই উদ্যোগে পে ইট ফরোয়ার্ড পথিকৃৎ, তাদের অনুরোধ বুয়েটের সহযোগিতা মিলে স্বপ্নাদের স্বপ্নপূরণ। কেউ যখন এগিয়ে আসেনিনি তখন স্বপ্না ভৌমিক এগিয়ে এসেছেন এই মহতী কাজে।
আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন দুনিয়ার বড় বড় সব উপাসনালয় বন্ধ। ঈশ্বরের দুয়ারেও যখন তালা ঝুলছে তখনই মানুষ নামের দেবদূত এসে দাঁড়ায় দুয়ারে।
এঁদের স্যালুট কুর্ণিশ প্রণাম জানানোর চাইতেও জরুরী এঁদের পথ অনুসরণ করা। সবাই মিলেই ভালো থাকতে হবে আমাদের।
সময় খুব করুণ এবং খারাপ। প্রিয় পাঠক, করুণ এই সময়ে লেখা একটি ছড়া আপনাদের জন্য।
করোনা শিক্ষা
জীবন এখন বদলে গেছে
বদলে গেছে সবার
আপাতত নাই প্রয়োজন
সেমিনার বা সভার।
নাই প্রয়োজন দেখা হবার
গায়ে তে গা ঘেঁষার
একা থাকাই বাঁচায়, সময়-
নয়তো মেলামেশার।
যুগের পর যুগ ইচ্ছে মতো
ভেবেছো খুব স্বাধীন
যা খুশী তা করে গেছো
চুকাও এখন ঋণ।
এই পৃথিবী একা তোমার
তোমারই রাত দিন?
এখন দেখো বেরিয়ে এলো
বাঘ, সিংহ হরিণ।
তোমার ভয়ে পালিয়ে থাকা
পশু পাখির দল
বাগান জুড়ে আকাশ জুড়ে
করছে কোলাহল।
মাছেরা আজ কাটছে সাঁতার
জগত তো রঙিন
তুমি যখন গৃহবন্দী
সাগরে ডলফিন।
ভুলে গেছো, ক দিন আগেই
কেমন স্বার্থপর?
নিন্দা ঘৃণা ঝগড়াঝাটি
পরশ্রী কাতর।
এর ওর মুখ দেখবেই না
শপথ ছিলো মনে
এখন ভাসো চোখের জলে
একলা গৃহকোণে।
আত্মসাৎ আর লোক ঠকানো
স্বভাবে হামবড়া
ভাইরসে সব মুছে এখন
বড় বাঁচা মরা।
যে তুমি হও বড় ছোট
লেখক কবি যন্ত্রী
নেতা অভিনেতা কিংবা
ধনী গরীব মন্ত্রী।
সবাইকে আজ এক করেছে
একেই বলে সাম্য
যদিও চাই করোনা যাক
করোনা নয় কাম্য।
ঘরে থাকো বাঁচাও বাঁচো
নইলে হবে ফটো
বুঝতে পারো মানুষ তুমি?
মূলত খুব ছোট।
শিক্ষা তবু রেখে যাবে
থাকলে পরে হুঁশ
তৃণের চেয়েও তুচ্ছ তুমি
দাম্ভিক মানুষ।
অজয় দাশগুপ্ত
কবি, লেখক ও কলামিস্ট
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।