বিশ্বের সেরা বিশ্বকাপ হচ্ছে কাতারে, এটা কাতারে যারা খেলা দেখতে এসেছেন তাদের মন্তব্য। কাতার একটি চমৎকার আতিথেয়তা পরায়ন দেশ। বিশ্বকাপ ফুটবলের কারণে কাতারের প্রতি মানুষের ধারণা পাল্টে যাবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
আমি নিজে ১২ বছর এখানে থেকে দেখেছি কাতারের বেড়ে উঠবার যাত্রা, মানুষ এবং দেশের আমুল পরিবর্তনের মাত্রা। অভিনন্দন জানাই যেকোনো পরিস্থিতিতে অটল থাকবার অসাধারণ শক্তি ধারনকরা এই দেশটিকে। সারা বিশ্বে কাতার ধনী দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থএবং আরব দেশগুলোর মধ্যে কাতার হচ্ছে সবচেয়ে ধনী দেশ। এইবিষয়টা এই কারণেই এখানে আনতে হল, কারণ এই এতো ছোট একটা দেশ কী করে এতো ধনী হল এ নিয়ে অন্য দেশগুলোর মাথাব্যাথার শেষ নেই, সেই সাথে হিংসারও কমতি নেই। আর সেই কারণে ফুটবল শুরু হবার আগে থেকে নানা রকমের গুজব ছড়াবার চেষ্টা করেছে মানুষ। এই গুজব অবশ্য শুরু হয়েছিলো আরও আগে থেকেই, যখন সিদ্ধান্ত হল কাতারেই হবে ২০২২ এর বিশ্বকাপ, তখন থেকেই মানুষের মনে নানা প্রশ্ন, কৌতূহল এবং নিন্দা ছড়াবার প্রবণতা।
কাতারের আমির নিজে বলেছিলেন এই বিশ্বকাপ ফুটবল যেন শুধু খেলাতেই সীমাবদ্ধ না থাকে। আবার কবে আরব অঞ্চলে এই সুযোগ আসবে তা বলা যাচ্ছে না, তাই এই সময়টাতে পৃথিবীর মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্বন্ধে যত নেতিবাচক মানসিকতা আছে তা যেন ইতিবাচকে পরিনত হয় সে চেষ্টা তারা করবে। কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল হচ্ছে এটা মানসিকভাবে মেনে নেয়া অনেকের কাছেই কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে কাতার তার সবটুকু সাধ্য, সামর্থ্য এবং ভালোবাসা ঢেলে দিয়েকাতারকে তৈরি করেছে যেন বিশ্বকাপ ফুটবল সম্পুর্ন সফলতা পায়। মদ্যপান নিষেধ করাতে গুজব ছড়ানো হল, কাতার মুসলিম দেশ বলেই এমন নিয়ম করেছে । অথচ এর আগে রাশিয়াতে বিশ্বকাপফুটবলে এবং ফ্র্যান্সে ইউরো কাপে, স্টেডিয়ামের ভেতরে মদ্যপানের নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছিল । সেটা হয়তো মানুষ ভুলে গেছে, তাই সব কিছুতেই ধর্ম নিয়ে টানাহেঁচড়া করাটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। কাতারে স্টেডিয়ামের বাইরে মানুষ মধ্যপান করেছে, fan zone এবংনিজস্ব গণ্ডিতে মানুষের মদ্যপানের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু খুব একটা মাতাল লোক দেখা যায়নি, কোন অশান্তিরও সৃষ্টি হয়নি। বাইরের মানুষও এই দেশের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই চলাফেরা করছে।
বিভিন্ন জায়গায় একটা বার কোড দিয়ে লেখা আছে “knowledge leads to understanding”, এই কোডে ফোন দিয়ে স্ক্যান করলে কোরআনের বিভিন্ন ছোট ছোট আয়াতের অর্থ জানতে পারা যায়। যারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ তারা চট করে খুব সহজেই ছোট একটা বিষয় জেনেযেতে পারে। ধর্ম সম্মন্ধ্যে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণাগুলোর অবসানঘটার প্রচুর সুযোগ রয়েছে । এছাড়াও কাতারের মানুষের ব্যবহার, এবং আতিথেয়তার ভূয়সী প্রশংসা করছে সবাই। মাঝে মাঝে হঠাৎ কোন স্টেডিয়াম থেকে বের হলে দেখা যায় কয়েকজন কাতারি দাঁড়িয়ে ফ্রি চা কফি, সাথে বিস্কিট বিতরণ করছে, অপ্রত্যাশিত এমন ভালোবাসা কার না ভালো লাগে!
খুব ছোট একটা দেশ কাতার, মাত্র ১১,৬২৭ স্কয়ার কিলোমিটার তার আয়তন। এই ছোট দেশটার পাতালপুরীতে যখন মেট্রো লাইন বানানো শুরু হল তখন মানুষ ভেবেছিলো এই ট্রেনে কে উঠবে? কারণবেশীরভাগ মানুষই গাড়িতে চলাফেরা করে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবার মানুষ নেই এখানে। ২ বছর লেগেছে সব টানেল শেষহতে। ট্রেন চালু হবার পর কেউ কেউ সপ্তাহ শেষে শখ করে ট্রেনে চড়ে ঘুরতে গেছে, শুধু মাত্র ট্রেনে চড়ার শখ মেটাবার জন্য। কিন্তুবিশ্বকাপের সময় দৃশ্যটি সম্পুর্ন ভিন্ন, মানুষের ঢল নেমে পড়েছে স্টেশনগুলোতে। ট্রেনে বসবার জায়গা নেই, দাঁড়িয়ে যাচ্ছে অসংখ্যমানুষ। কাতারের এমন চেহারা কেউ কল্পনা করেনি। আরেকটি বিষয়হল এই যে এতো হাজার হাজার মানুষ দিনে শতবার ট্রেনে উঠছে, নামছে – এটা সম্পূর্ণ ফ্রি। একবারের জন্যেও কোন বাস বা ট্রেনে টাকা দিয়ে চড়তে হয়নি। প্রত্যেকটা স্টেডিয়ামের আশেপাশের রাস্তাতে চলাচল বন্ধ করে দেয়ার কারণে খেলা দেখতে গিয়ে ‘ফিজিক্যালিফিট’ হতে বাধ্য হচ্ছে কাতারে বসবাসরত মানুষ। বাইরের মানুষদের তবু অভ্যাস আছে মেট্রো ব্যাবহার করবার, কিন্তু এখানকার মানুষবরাবরই খুব আরামপ্রিয়। যত কম খাটুনিতে জীবন পরিচালনা করা যায়, এ ব্যাপারে নিত্য নতুন কৌশল বের করতেও তাঁদের তুলনা নেই। কিন্তু এবার বিশ্ব কাপ ফুটবল খেলা বা অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখতে মানুষকে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে অনেকদুর। অনেক রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যাওয়া নিষেধ তাই পায়ে হেঁটে বিভিন্ন খেলা বা অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে স্থানীয় মানুষের জন্য। যদিও এখন প্রায়শীতকাল, তবুও পুরোপুরি ঠাণ্ডা পড়েনি। মৃদুমন্দ বাতাসে হাঁটতেখারাপ লাগার কথা না, কিন্তু অভ্যাসের বাইরে যে কোন কিছুইআমাদের গ্রহন করতে একটু সময় লাগে। তাই খেলা দেখতে কাতারিমানুষের চেয়ে বিদেশীদের পরিমাণই বেশি।
স্টেডিয়াম ছাড়াও ভক্তদের জন্য রয়েছে অনেক রকমের বিনোদনেরব্যবস্থা এবং সেইসাথে ফ্যান জোনগুলোর তো কোন তুলনাই হয়না।সব খেলা স্টেডিয়ামে যেয়ে দেখা সম্ভব নয় তাই ফ্যান জোনগুলোতেজমে উঠেছে ভক্তদের আনাগোনা এবং উল্লাস। ব্রাজিল এবং সর্বিয়ারখেলা দেখতে গিয়েছিলাম ফ্যান ফেস্টিভ্যালের ফ্যান জোনে, সেখানেলোকসংখ্যা ছিল ৩৩,০০০। এই ফ্যান জোনে বসার কোনো ব্যাবস্থানেই, মানুষ দাঁড়িয়ে কিংবা মাটিতে বসে খেলা দেখেছে। এই খেলাটাসেদিন যেই স্টেডিয়ামে হয়েছিলো, সেই স্টেডিয়ামের নাম ‘লুসাইল’ স্টেজিয়াম। এটি ৮টি স্টেডিয়ামের মধ্যে সবচেয়ে বড় , সেখানে সেদিনদর্শকসংখ্যা ছিল ৮৩,০০০ । অন্য ফ্যান জোনের দর্শকসংখ্যা কতহয়েছিল আমার জানা নেই তবে এরকম বেশ কয়েকটা ফ্যান জোনরয়েছে। বাকি হিসেব আপনাদের কল্পনার ওপরে ছেড়ে দিলাম।বৃহস্পতিবার রাত, পরের দিন অফিসে যাবার তাড়া নেই। মানুষেরস্রোতে ভেসে যাচ্ছিল দোহার মেট্রো স্টেশন এবং রাস্তা। মনে হচ্ছিলমানুষের পায়ের নীচে পড়ে মারাও যেতে পারি আমরা, কিন্তু সবকিছুঅত্যন্ত সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ওখানকার সিকিউরিটি।মানুষের আনন্দ দেখার একটা অন্যরকমের ভালোলাগা আছে, আমিএর প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি।
এবার বলি আরেক ফ্যান জোনের গল্প, সেদিন গিয়েছিলাম অ্যারাবিয়ান ভিলেজে খেলা দেখতে। শহর থেকে একটু দূরে। গাড়িপার্ক করে কয়েক কদম হাঁটতেই পোঁছে গেলাম মেলার মতো পরিবেশে।সেখানে অসাধারণ সব বসার ব্যাবস্থা রয়েছে, পুরো জায়গাটা জুড়েরয়েছে শ’খানেক খাবারের স্টল যা অন্য জায়গাগুলোতে নেই।খাবারের স্টল ছাড়াও রয়েছে, জামা কাপড়, বা অন্যান্য সামগ্রিরসমারোহ। কমেন্ট্রি হচ্ছে আরবীতে। একেবারেই আরব পরিবেশ।আমরা খুব আয়েশ করে খোলা আকাশের নীচে নরম গদিতে বসেখেলা দেখলাম। কয়েকটা ফযান জোনে শুনেছি, এইসব গদির পাশেশীশারও ব্যাবস্থা রয়েছে, কল্পণা করুন খোলা আকাশের নীচে নরমগদিতে বসে শিশা টানছেন আর বিশ্বকাপ ফুটবল দেখছেন। এটাকাতারেই সম্ভব।
৬৪টি ম্যাচ দেখবার জন্য ৮টি স্টেডিয়ামের মধ্যে ৭টিই নতুন করেবানানো হয়েছে। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম, আল খোরের আলবায়েত স্টেডিয়াম ( এটা সবচেয়ে দূরে, এই মাঠে কাতারের আমিরেরবাবা ছোট বেলায় ফুটবল খেলতেন, সেকারণে এই জায়গাটা বেঁছেনেয়া হয়েছে, এই স্টেডিয়াম অপূর্ব সবুজ বাগান দ্বারা পরিবেষ্ঠিত ), আল ওয়াখরার আল জানুব স্টেডিয়াম, আহমেদ বিন আলিস্টেডিয়াম, খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আল রাইয়ানেরএডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, স্টেডিয়াম 974 ( ৯৭৪টি জাহাজেররিসাইকেল কন্টেইনার দিয়ে বানানো হয়েছে এই স্টেডিয়াম, যা আবারখুলে ফেলা যাবে এবং পরবর্তীতে অন্য কোথাও ব্যাবহার করা যাবে), এবং আল থুমামা স্টেডিয়াম। সবগুলো স্টেডিয়াম ৫৫ কিলোমিটারেরমধ্যে অবস্থিত। এমনও হয়েছে, মানুষ একটা খেলা দেখে মেট্রো ধরেআবার পরবর্তী খেলাও দেখতে পেরেছে। এই সুবিধা আর কোথাওআছে কিনা আমার জানা নেই।

লুসাইল স্টেডিয়ামে আমরা আর্জেন্টিনা এবং মেক্সিকোর খেলা দেখতে গিয়েছিলাম ২৬শে নভেম্বর, শনিবার। স্টেশন থেকে মানুষের উল্লাসশুরু, দল বেঁধে যে যার দলের গান জোরে জোরে গাইতে গাইতে হাঁটছে, ট্রেনে উঠে মেক্সিকোর সাপোর্টারদের দেখলাম একসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে গান করছে “ মেহিকো, মেহিকো” । অন্যদিকে আমার পাশে একদল ইয়াং আর্জেন্টিনার সাপোর্টার ছেলে মেয়ে বসে যাচ্ছে খেলা দেখতে। দেখি একটা মেয়ে তার নখে আর্জেন্টিনার ফ্ল্যাগ, বল ইত্যাদিদিয়ে নেইল পলিশ করেছে। কৌতূহলের বসে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “এগুলো তুমি কোথায় কিনেছ? মেয়েটি বলল “এগুলো আমি নিজেই করেছি” আমি মুগ্ধ হয়ে বললাম, “বাহ, খুব সুন্দর। আমি কি তোমার হাতের ছবি তুলতে পারি? “। মেয়েটি আনন্দের সাথে মেলে ধরল ওর হাত, আমি ছবি তুললাম। সবার মধ্যেই মিশে যাবার বা বন্ধু হবার প্রবণতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আর্জেন্টিনা জিতে যাবার পর মেক্সিকোর একজন তার ফ্ল্যাগ উপহার দিল আর্জেন্টিনার সাপোর্টারকে, ফেরার পথে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে নাচালো ঘানার একটি শিল্পী দল। এমন করেই হৃদ্যতা বেড়েছে বহু মানুষের সাথে অচেনা মানুষের।
এই খেলায় লুসাইল স্টেডিয়ামে সেদিন ৮৮,৯৬৬ দর্শক ছিল, বর্ণনাতীত উত্তেজনা সবার মধ্যে কিন্তু কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। সব দর্শকই ট্রেনে করে গিয়েছে স্টেডিয়ামে, যাওয়ার সময় সবাই বলছিলো আর্জেন্টিনা হারবে, মেক্সিকোর আত্মবিশ্বাস ছিল আকাশসমান। পথে এবং ট্রেনে ওদের উল্লাসও ছিল অনেক বেশি, কিন্তু ফেরার সময় আর্জেন্টিনা জিতে গিয়ে প্রবল উল্লাসে ফেটে পড়লেও মেক্সিকোর সাপোর্টাররা কোন ঝামেলাই করেনি। ৮৮,৯৬৬ মানুষস্টেডিয়াম থেকে বের হওয়া সহজ কথা নয়, ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছাতেসময় লেগেছে ২ ঘন্টার মতো। একটা লম্বা লাইন না করে, ঘুরিয়েঘুরিয়ে, ভাগ ভাগ করে মানুষগুলোকে ছাড়ছিল সিকিউরিটি এবং ভলায়ন্টিয়াররা, যেন একসঙ্গে অনেক মানুষের চাপ না বেড়ে যায়। এতো সুন্দর করে হাজার হাজার মানুষ ম্যানেজ করা যায় এটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। এর মধ্যেই ভলান্টিয়াররা থেকে থেকেই গান গেয়ে উঠছে। মেট্রোর ডিরেকশন দিচ্ছে যারা তারা সবাই মোটামুটি গান বানিয়ে ফেলেছে কয়েকটা শব্দ দিয়ে “ মেট্রো মেট্রোমেট্রো, দিস ওয়ে দিস ওয়ে দিস ওয়ে। মেট্রো দিস ওয়ে” । এতে তাদেরও কাজে উৎসাহ বাড়ছে এবং যারা এতো লম্বা সময় নিয়ে ধৈর্য্যের সাথে নিয়ম মেনে হেঁটে চলছে তাদেরও বিরক্তি কমছে।
স্টেডিয়াম থেকে বের হবার সময় জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন দলের গান কিংবা নাচ চলছে, দর্শকেরা একটু থেমে তাঁদের গান শুনছে কিংবা নাচছে । মানুষের এমন অভাবনীয় উৎসব দেখতে পেরে নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে হয়েছে। খেলা ছাড়া আরও যেসব বিনোদন দোহাকে সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। আল বিদ্যা পার্কে রয়েছে সবচেয়ে বড় Fan zone ফ্যান ফেস্টিভ্যাল (৪০ হাজার মানুষেরক্যাপাসিটি সেখানে), এটা দোহা শহরের মধ্যমণি । এখান ৩ টা বড়স্ক্রিনে খেলা দেখানো ছাড়াও বিভিন্ন ব্যান্ড এবং বিদেশ থেকে আগত শিল্পীদের কনসার্ট হয়েছে। কাতারা–দি কালচারাল ভিলেজ এবং পার্লেহয়েছে ওয়াটার শো, আলোকসজ্জা, এবং কার্নিভাল। কাতারে পুরো পরিবার নিয়ে কয়েক ঘন্টা সময় খুব সহজেই উপভোগ করতে পারে এমন ব্যাবস্থা রয়েছে। ডানে বাঁয়ে চারিদিকে বিভিন্ন রকমের বিনোদনে মুখরিত একটা জায়গা। মিনা ডিসট্রিক্ট, সমুদ্রেরধারে একটি খুবই আনন্দদায়ক জায়গা , সেখানেও রঙের মেলা বসেছে, এবং আরও অনেক চমক রয়েছে যা মানুষকে বার বার টেনে নিয়ে গেছে। লুসাইল বুলেভার্ডেও ম্যাজিক্যাল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
৩৫টি ট্রেন এবং ৫,০০০ বাস কিনেছে মানুষের চলাফেরার সুবিধার জন্য, যা শতভাগ সফলতার সাথে কাজ করছে। ৩টি এমএসসি ক্রুসআনা হয়েছে দর্শকদের থাকবার জন্য, বিশাল বড় বড় ক্রুস রাসআ্যবৌ আ্যবৌদ বিচে দাঁড়ালে দেখা যায়। এই বিচের পাশেই স্টেডিয়াম974, তার পাশেই রয়েছে খোলা আরেকটি Fan zone । বিচের ধারে চেয়ারে বসে বড় স্ক্রিনে মানুষ খেলা দেখছে। আশে পাশে বাচ্চাদের অনেক খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বকাপ দেখবো এমন স্বপ্ন কখনোই দেখিনি। কাতারে ১২ বছর থেকেছি, এবং সবচেয়ে আবেগের জায়গা হলো, আমার হাসবেন্ড একদম শুরু থেকেই কাতার মাস্টার প্ল্যানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। এই ৭টি স্টেডিয়াম , রাস্তা ঘাট, পার্কবাসস্থান সবকিছুতেই তার স্পর্শ, কাতারকে বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য তৈরি করার পেছনে তার অংশগ্রহণ একটি আবগের জায়গা। সারাজীবনে আর কখনো এমন সুযোগ আসবে কিনা জানি না, তবে একটা দেশ মাত্র ১২ বছরে এতো বেশি ( অনুমানিক ৩০% থেকে ১০০%) এগিয়ে গিয়ে বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হয়ে সমস্থ পৃথিবীর কাছে নিজেকে তুলে ধরা একটি সহজ কথা নয়। এরমধ্যে যথেষ্ট প্রতিকূলতাও ছিল, প্রতিবেশী দেশগুলো ব্লকেড দিয়ে রেখেছিল লম্বা সময় নিয়ে। কাতারকে স্যালুট জানাই এমন একটি অসাধ্য সাধন করবার জন্য। পুরো বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছে, আকারে ছোট হলেই কাজে ছোট হয় না, শত ঝড়ঝাপটাতেও কাবু হবার দেশ নয় কাতার। অত্যন্তসহনশিলতা, ধৈর্য্য এবং প্রতিজ্ঞায় অটল একটি দেশ এবং জাতি। অসাধারণ অভিজ্ঞতা এবং রোমাঞ্চকর একটা অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফিরবো। বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে আসার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম, এটা আমার অভাবনীয় প্রাপ্তি ।
শিল্পী রহমান: কাউন্সেলর, লেখক। ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া।