কাদম্বিনী ও কিটি – মুনা মুস্তোফা

কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিলো যে সে মরে নাই
কাদম্বিনী ঘর হইতে বাহির হইলোনা,
ঘর তাকে বন্দি করিয়া রাখিলো।
কাদম্বিনী পরিয়া পরিয়া মার খাইলো, উঠিলোনা।
কাদম্বিনী পড়াশুনার গুষ্ঠি কিলাইলো, মুখ নিচু করিয়া মাটির চুলায় ভাত রাধিলো।

অত:পর কাদম্বিনী সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে মানিয়া লইয়া জীবন কাটাইতে লাগিলো। আজকাল কাদম্বিনী হইয়া গেছে কিটি ; কাদম্বিনী আর কাদম্বিনী নাই; কিটি বডড স্ট্রেট কাট ,বডড কাটখোট্টা, জ্বলিয়া উঠিতে চায় সে সূর্যের মত, যখন তখন সে সমাজের মুখে লাথি মারিতে চায়।
আগুন , ছাইভস্ম সে চারদিকে ছিটাইয়া দেয়। কিটি অপেক্ষায় থাকে, আবার থাকে না, ভালোবাসায় মজিয়াও মজে না।
হাজার যুগের জ্বালা যন্ত্রনা জুড়াইতে কিটি ইচ্ছে মত নাচে গায়;
কাদম্বিনী বাঁচিতে চায় কিটি হইয়া।
কাদম্বিনী এখন আর হারিতে চায় না।
সদা সর্বদাই জিতিতে চায়, তার যা করিতে মন চায় সে তাহাই করে।
জীবনকে সে চুমুকে চুমুকে পান করিতে চায় । বিলুপ্ত বনস্পতির ছায়া খোঁজে সে একাকিত্বের অরণ্য, ভীষন ক্ষোভে তার চোখ অগ্নিগোলকের মত ঘুরিতে থাকে, গভীর ভালোবাসায় সে মোমের মত গলিয়া যাইতে থাকে।
কিটির কেন যেন স্মৃতিভ্রম হয়;
বহু যুগ আগে হইতে তার উপর অত্যাচারের স্মৃতি হা হা করিয়া তার চারিদিকে ঘুরিতে থাকে ; চিৎকার করিতে থাকে অব্যক্ত বেদনাগুলি।
জীবন তাকে কি কি শিক্ষা দিল , শিখিতে শিখিতে এইবার সে নিজেই নিজেকে শিখাইতে চায়। নীলকন্ঠ ব্যথার মত প্রেত নদীর পাড়ে সে একা দাঁড়াইয়া থাকে। কিছু সন্ধির স্বাক্ষর তার অপেক্ষায় থাকে, সে বিশ্বাস করিতে পারে না জগৎ কে।
মহাব্যাধির শৃংখলে অনুভূতিহীন প্রাণের মেলায় হাপিয়ে উঠে সে।
উত্তপ্ত দ্বিপ্রহর পেরিয়ে গোধূলির লাল রঙের দিকে দুচোখ ভরা অভিমান নিয়ে সে অভিযোগ তোলে ঈশ্বরের দিকে।
ঠিক তখনই একটি শিশুর কান্না তার কানে বাজিতে থাকে। শিশুটিকে বুকে জড়াইয়া ধরিয়া সে তার কোটি কোটি বছরের ক্ষোভে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ শুনিতে পায়।
স্রোতের তোড়ে পাড় ভাঙার শব্দ ক্ষিণ হয়ে আসে।শিশুটি তাকে মা বলিয়া ডাকিয়া উঠে; সহসাই সে বুঝতে পারে সে নিজে, হ্যা সে নিজে এই বিপুলা পৃথিবী; তাকে ঘিরিয়া চলেছে জীবনের রহস্য মিলেমিশে একাকার হয়ে।
সেই পৃথিবী, সেই নারী, সেই জীবন।
কিটি বাঁচিয়া প্রমাণ করিল
সেই বিপুলা পৃথিবী, সেই নারী, সেই জীবন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments