কুমেরুবৃত্তের কবিতা
ভূমিকা ও অনুবাদ- মোশতাক আহমদ
এন্টার্কটিকা: পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে, বরফ ঢাকা বিশাল মহাদেশ। গ্রীষ্মকালে জনসংখ্যা হাজার পাঁচেক আর শীতকালে হাজারখানেক- যাঁদের অধিকাংশই বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিয়োজিত। এন্টার্কটিকা নিয়ে কবিদের একটা কবিতা প্রদর্শনী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতে। কবিরা ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবি, কর্মব্যপদেশে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য তাদেরকে এন্টার্কটিকা মহাদেশে গিয়ে থাকতে হয়েছে।
কয়েকজন কবির মধ্য থেকে আমি দুজনের কবিতা পছন্দ করেছি।
ক্লেয়ার বেনন তেমনি একজন। লেখক ও শিল্পী সত্তার পাশাপাশি তিনি একজন গবেষক। জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়, বেড়ে ওঠা আর কাজকর্ম নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিনে। জীবন তাঁর নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ভরপুর। এন্টার্কটিকায় দু’ দুটি গবেষণাকাজে দুটি গ্রীষ্ম সেখানে অবস্থান করে নতুন বিশ্ববীক্ষ্যা লাভ করেছেন।

অন্যদিকে স্টিভ স্মার্ট, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরের কবি সংগঠনের নেতা, বর্ণাঢ্য কবিতাময় জীবন তার। মঞ্চ উপস্থাপনায় পারদর্শী ; উৎসব ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। সিডনি অপেরা হাউসে অনুষ্ঠান করেছেন, এন্টার্কটিকাতেও তো বটেই।
এন্টার্কটিকায়, স্বচ্ছন্দে
ক্লেয়ার বেনন
এখানে নীরবতারও আছে নিজস্ব ভাষা –
মহাদেশের মতো বিস্তৃত,
কেউবা বলে তার জায়গা উন্মাদনার চূড়ায়, কেননা নীরবে
গুন গুন করে আর তোতলায় কখনোবা।
এখানে, বিশ্বের শেষ প্রান্ত;
না-থাকা বা অজানার ভেতরে তার উপস্থিতি ।
দূরত্ব জুড়ে ধূলিকণা –
আমাদের নিদ্রিত পৃথিবী
তার পাতলা বরফের নীল মুখোশ-পরা স্বপ্ন দেখছে।
প্রিয়জনের মুখের সারিগুলো বড় হয়ে দেখা দেয় এইখানে
হাসিমাখা প্রিয় মুখগুলোর স্মৃতি
আর নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসে।
এখানে নস্টালজিয়া, পীড়িতকে ঘুরায় নীরবে
ধীরে ধীরে – ঈষদুষ্ণ পানির মতো স্বচ্ছ হাতে;
রাত্রিগুলো পলকা আর দীর্ঘ
বাতাসের ঘাড়ে তার ছায়া।
সময় পেরিয়ে যায় লক্ষণরেখা – থামে সে
আইসবার্গের বরফ-হৃদয় গলিয়ে দিয়ে যায়।
নিদ্রাও সহজ নয় এইখানে –
যেখানে সারা রাত সূর্য শিয়রে জেগে
আর নীরবতারও আছে নিজস্ব ভাষা।
মেরু অভিযান
স্টিভ স্মার্ট
কে তুমি এই নামহীন দেশে?
আগন্তুক নাকি শরণাগত?
কোনো বিস্মিত প্রথম পুরুষ কিংবা মহিয়সী ইভ?
কে তুমি এই প্রাণহীন দেশে?
কৌতূহল কিংবা অস্থায়ী জীবনের খোঁজে?
তুমি কি ভিনগ্রহী নাকি সদ্যোজাত সংক্রমণ?
এই পাথরহীন পিরামিডে কে এলে তুমি?
তাঁবুর ত্রিভুজেও জিইয়ে রাখছ হাসি?
তুমি কি কোকুনবন্দি অপরিণত কোনো গুটিপোকা?
যেখানে রাত্রি নেই সেখানে সময় কত?
পা রেখেছ কি ঘড়িহীন শাদা জগতে?
তুমি কি এখনো জেগে আছ বাপু, নাকি স্বপ্নে অটল?
মোশতাক আহমদ
১৯৮৯ সালে দিনরাত্রি প্রকাশনী থেকে মোশতাক আহমদের প্রথম কবিতার বই ‘সড়ক নম্বর দুঃখ / বাড়ি নম্বর কষ্ট’ প্রকাশিত হয়। বইটি তরুণদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছিল। ১৯৯৪ সালে ‘পঁচিশ বছর বয়সে’র পর দীর্ঘ বিরতির পর ২০১০ সালে পাঠসূত্র থেকে প্রকাশিত হয় ‘মেঘপুরাণ’। এই কবিতাবিরতির অবকাশে তিনি কিছু ছোট গল্প লিখেছিলেন, সেগুলো ২০১৮ সালে ‘স্বপ্ন মায়া কিংবা মতিভ্রমের গল্প’ নামে প্রকাশিত হয়। সমুদ্র আর পাহাড়ের কবিতাগুচ্ছ ‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’ প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। মোশতাকের কাব্য ‘বুকপকেটে পাথরকুচি’ বের হয় ২০১৭ সালে। মৌলিক কবিতা ছাড়াও বিভিন্ন দেশের কবিতা অনুবাদ করেছেন- অনূদিত কবিতার পাণ্ডুলিপির নাম ‘যাই ভেসে দূর দিশে’। মোশতাক বেশ কিছু কবিতা বিষয়ক গদ্য লিখেছেন এবং পাশাপাশি সাহিত্যের বই পড়ার স্মৃতিকথাও লিখে থাকেন- এ বিষয়ে এ বছরে তার বই ‘ অক্ষরবন্দি জীবন’ প্রকাশিত হয়েছে । এ বছর ‘ ডুবোজাহাজের ডানা’ নামে মোশতাকের একটি নতুন কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে।
কবি মোশতাক ‘মূল্যায়ন’ পত্রিকার আয়োজনে মূল্যায়ন সাহিত্য সম্মাননা লাভ করেন ২০১১ সালে। তৃতীয় নয়নের মতো কিছু সাহিত্যপত্র সম্পাদনাও করেছেন।
কবি পেশাগত জীবনে উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেন – বিষয় পাবলিক হেলথ।