কোন এক ভোরে জানবো মানুষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে এই ভাইরাস -সালেহ জামী

  
    
সালেহ জামী

আমি এক বাক্যে ভীত ও শংকিত। অজানা শঙ্কা আর ভয় ভর করেছে শরীর ও মনে। বারবারই মনে হচ্ছে এই বুঝি আক্রান্ত হলাম ভয়াল এই ভাইরাসে। বৈশ্বিক এই মহামারীর ছোবলে আজকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১৬ হাজার ৫০০ এর উপরে মানুষ। আরো ১২ হাজার মানুষ সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। সাড়ে ৩ লক্ষাধিক মানুষ এরই মধ্যে আক্রান্ত। যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে আরো লক্ষাধিক মানুষ। এটা ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসে। কেননা এখনো কোনো প্রতিষেধক তৈরী হয়নি। এই ভাইরাস নির্মূল করার ঔষধ এখনো মানুষের আয়ত্বের অধীন নয়। মানুষ অপেক্ষা করছে ভালো কোনো গবেষণার ফলাফলের আশায়। হয়তো মানুষ পারবে একটা কিছু নিরাময়ের উপায় উদ্ধার করতে। অনেকের মতন আমিও সেই দলে যাঁরা হতাশ না হয়ে আশায় বুক বেঁধেছে এই বিপদের মধ্যে। কিন্তু স্বস্তি তৈরী হচ্ছে না। হয়তো অচিরেই একটা ভালো কিছু শুনবো। এক ভোরে জানবো মানুষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে এই রোগের বিস্তার, করতে পেরেছে আবিষ্কার এর প্রতিষেধক।

এসব অতি আধুনিক জীবাণু সম্পর্কে হুট করেই কোন কিছু বলা দুষ্কর কেননা বিষয়টিই একেবারে আনকোরা। কেউই হলফ করে উৎস বা বিস্তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানে না। কি দিয়ে কি হলো তা নিয়ে নানান গুঞ্জন আছে। অফিসের দুই সহকর্মী যাঁদের সাথে আমাকে ঘর শেয়ার করতে হয় তাঁদের দুজনের দুই রকম ধারণা। একজন সার্বিয়ান অজি আর অন্যজন চাইনিজ অজি। কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণার কুফল হিসাবে দেখলেও পাল্টা যুক্তিতে উহান প্রদেশের মানুষের অখাদ্য ভক্ষণের কারণেই এই ভাইরাসের শুরু এমনটাই মনে করেন। আমি এই মতামতগুলোর পক্ষ না নিলেও একটা পুরোনো ধারণা মাথার মধ্যে বসে আছে। সে আর নাই বা বললাম। আবার ভাবি, প্রকৃতি কি নিষ্ঠুরভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনের? অসম উন্নয়নের? সীমাহীন অনাচারের? মানুষের কল্যাণ হয় এমন সব খাত বাদ আপনারে লয়ে ব্যস্ত হওয়ার খেসারত কি এসব রোগ ব্যাধি, জীবাণুর বিস্তার? আরো সব ঝঞ্জাবিক্ষুদ্ধ প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেলেও বেশিদূর যেতে পারছি না নৈমিত্তিক প্রয়োজনে। যেহেতু কোন কিছু মজুত করিনি তাই সামনে ভোগান্তি আছেই। শুধু একটাই প্রার্থনা যেন আর কেউ নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়। সেই আশায় সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছি এক মনে। হয়তো তিনিই মানুষের মাধ্যমে আমাদের উদ্ধার করবেন।

একজন থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ।

এই বিপদেও মানুষের মতন মানুষ যেমন দেখা মিলছে তেমনই দেখা দিচ্ছে শুকনার মধ্যে মাছ ধরার কৌশল জানা (অ)মানুষদেরও! নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব সামগ্রী দেশীয় দোকান থেকে নিতে হয় তার বেশিরভাগেরই দাম চড়া। খুব দুঃখজনক এহেন আচরণ। অবশ্য দোকানিদের পক্ষ থেকে ব্যাপারটার একটা সুনিপুণ ব্যাখ্যা আছে নিশ্চয়ই। আশা করি তারা ধনু শেখ বা রমজানের মতন আচরণ করবেন না। এদিকে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সাহেবা আর প্রধানমন্ত্রী সাহেব তাঁদের হটকারী আচরণে পুরোনো কিছু মানুষকে মনে করিয়ে ছাড়ছে প্রতিদিন। দেখে মনে হচ্ছে ওঁরা নকল করে পাশ করা কেউ যাঁদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করা শিক্ষক উত্তর গোলার্ধ থেকে কোনো নতুন চোথা সাপ্লাই দিলে পরেই ওদের হুশ ফিরবে আর জনসাধারণের কল্যাণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন। নিউ সাউথ ওয়েলসে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মহামারির আকার নিতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই।

আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা কি বলবো? তাঁর সামনে বিশাল এক সুবর্ণ সময় এসেছিলো বঙ্গবন্ধুকে ছোঁয়ার বা কাছাকাছি যাওয়ার। করোনা ভাইরাসের এই বৈশ্বিক ক্রান্তি লগ্নে তিনি দেশের মানুষের জন্য আরো অনেক বেশি কঠোর ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে পারতেন। এক হিসাবে তিনি হেলায় সেই সুযোগ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে এখনো কোনো যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শক্তহাতে নেতৃত্ব দিতে পারেননি তাঁর মন্ত্রীবর্গ। বাংলাদেশের মানুষ এখনো জানে না এই ভাইরাসের আক্রমণে কিভাবে হারিয়ে যাবে হাজার হাজার মানুষ। কোটি কোটি মানুষ ভয়ানক এক ভবিষ্যৎকে আলিঙ্গনের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে! এসব ভাবতেই মাথাটা ঘুরে উঠে। বিপদে আমাদের রক্ষাকারী কোনো নেতৃত্বই এখন সংহত নয়।

সমাজে আজ খুব বেশি দরকার জাস্টিন ট্রুডো আর জেসিন্ডার মতন রাজনীতিকদের যাঁরা যত না রাজনীতিবিদ তার চাইতে অনেক বেশি মানবিক।বিশ্ব এমন সব নেতার অপেক্ষায়ই থাকে যাঁরা বিপদে নিজেদের জাত চেনায়। ব্যবসায়ীদের নয়!

সালেহ জামী
লেখক, সংগঠক
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments