কোভিড পরবর্তী অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার বড় সুযোগ

  
    

মিতা চৌধুরী: প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমায় দেশের বাইরে। উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের অন্যতম পছন্দের তালিকার দেশ (পছন্দের তালিকায় ৩য়)। আর অস্ট্রেলিয়ার সামাজিক পরিবেশও ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য বেশ ইতিবাচক ও পরিবেশবান্ধব। প্রায় প্রতিটি ইনস্টিটিউট ও ইউনিভার্সিটি অফসোর স্টুডেন্টদের আকৃষ্ট করতে সব সময়ই নিয়ে থাকে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা যা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের নজর কাড়ে প্রায় প্রতিটি ইনটেকে। আর অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এই ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের আছে এক বিশাল অবদান। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় আয়ের একটি বিরাট অংশই আসে এই শিক্ষা খাত থেকে।

ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজী, মেলবোর্ন।

২০২০ সালে যদিও কোভিড-১৯ বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই, যা শুধু স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে নয় বরং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেই। বাংলাদেশ তাই এর ব্যাতিক্রম নয়। ঠিক এরকম একটা সময়ে বাংলাদেশ থেকে যেসকল স্টুডেন্ট উচ্চ শিক্ষা নিতে দেশের বাইরে পড়তে যেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি ও ইনস্টিটিউটগুলো বর্তমানে বিভিন্ন  সুযোগ সুবিধা অফার করছে এবং সেই সঙ্গে সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা যেন নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের সাবজেক্ট বা কোর্স বেঁছে নিতে পারেন সে লক্ষ্যে নিয়েছে বেশ কিছু ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ। অনেক ইনস্টিটিউট ও ইউনিভার্সিটিই অফার করছে বেশ কিছু স্কলারশিপ। আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা সেই বিষয়গুলোই বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

সমগ্র অস্ট্রেলিয়া জুড়েই বেশ কিছু ইউনিভার্সিটি ও ইনস্টিটিউট বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদান করছে বেশ কিছু বৃত্তি, যা কোনো বিষয় ও প্রতিষ্ঠান ভেদে ১০০% পর্যন্ত এই বৃত্তি। অনেক সময়ই শিক্ষার্থীরা যোগ্যতা ও সুযোগ থাকার পরেও এই বৃত্তিগুলোর সুবিধা নিতে পারেনা শুধুমাত্র সঠিক তথ্য ও নির্ধারিত সময়ে আবেদন করতে না পারার কারণে। অস্ট্রেলিয়াতে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যা বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র আমাদের উপমহাদেশীয় দেশগুলোর জন্য কিছু বিশেষ বৃত্তি চালু করেছে যেন এতে করে উপমহাদেশীয় শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়াতে আরো বেশি আগ্রহ ও সুযোগ পায় উচ্চশিক্ষার।

ভিআইটি’র জেনারেল মার্কেটিং ও এডমিশন ম্যানেজার জনাব আব্দুল মামুন।

অস্ট্রেলিয়ার এমনি একটি প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি বা ভিআইটি। প্রশান্তিকার প্রতিবেদক এই প্রতিষ্ঠানের জেনারেল মার্কেটিং ও এডমিশন ম্যানেজার জনাব আব্দুল মামুনের সঙ্গে কথা বলেন তাদের প্রস্তাবিত শিক্ষা বৃত্তিগুলো নিয়ে। ভিআইটি গত ২০ বছর ধরে মেলবোর্ন ছাড়াও সিডনিতেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে । জনাব মামুন জানান ভিআইটি’র শিক্ষার মান অস্ট্রেলিয়ার অন্য যেকোনো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমপর্যায়ের কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে অন্তত ২০-১৫% খরচ কম। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো ইনস্টিটিউট বা ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ব্যায় বাংলাদেশের যেকোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষা খরচের চেয়ে প্রায় ৩০%-৪০% বেশি, সেক্ষেত্রে ভিআইটি একটি সঠিক ও সাশ্রয়ী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ।

জনাব মামুন জানান, তাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ASQA/TEQSA অনুমোদিত এবং প্রতিটি বিষয়ে তাদের আছে উন্নত কারিগরি ও প্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, অডিও ভিজ্যুয়াল ও সর্বাধুনিক ওয়ার্কশপ এর ব্যবস্থাও আছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য। প্রতিষ্ঠানের স্টাফ ও শিক্ষকেরা ছাত্র ছাত্রীদের অনেক বেশি সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। কোর্স শেষে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করলে এই প্রতিষ্ঠানের যেকোনো ডিগ্রী’র পয়েন্ট অন্য যেকোনো  ইউনিভার্সিটির সমান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যেই সহস্রাধিক বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী কোর্স শেষ করে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে ও কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। চাকুরীর বাজারেও প্রতিষ্ঠান থেকেই শিক্ষার্থিদের ইন্টার্নশীপ বা প্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।

বর্তমানে প্রায় ৩০০০ এর অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এই প্রতিষ্ঠানে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের শিক্ষার্থীদেরই সমাগম আছে এই প্রতিষ্ঠানে। জনাব মামুন জানান প্রায় ৮০% শিক্ষার্থীই এসেছে পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে এবং সাশ্রয়ে মানসম্মত শিক্ষা লাভের কারণেই শিক্ষার্থীরা পছন্দ করছে ভিআইটি’কে। শিক্ষার্থীরা যেন যেকোনো সময়ই তাদের প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ও শিক্ষকদের সংঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা পেতে সক্ষম হয় সেই লক্ষ্যে তারা “এনগেজ ৩৬০” নামে একটি App চালু করেছে।

জনাব মামুন জানান সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী সময়কে মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ভিআইটি তাদের বর্তমান ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছে বেশ কিছু বৃত্তি। এসকল বৃত্তির মধ্যে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ ১০০% বৃত্তির কিছু সুযোগ আছে, যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দিচ্ছেনা। আর অনেকে ভবিষৎতে অস্ট্রেলিয়াতে পড়তে আসা শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরা এই বিশেষ বৃত্তির সুযোগের বিষয়ে অবগত নয়। এই রিপোর্টটির মাধ্যমে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির বিষয়ে আরো আগ্রহী হবে বলে আশা করছেন। উল্লেখ্য, করোনাকালীন সময়ে যখন সবকিছু বিশেষ করে আর্থিক সংকট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় তখন ভিআইটি, তাদের অনেক শিক্ষার্থীর টিউশন ফী মওকুফ সহ অন্যান্য আর্থিক সহযোগিতাও শিক্ষার্থীদের প্রদান করে ,যা বহু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখে। জনাব মামুন বলেন , আমরা শুধু মাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নিজেদের আবদ্ধ রাখতে চাই না , আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্ভরতার ও সহযোগিতার হাতও হতে চাই যেখানে তারা যেকোনো সমস্যায় আমাদের তাদের পাশে পাবে।

স্টাডিনেট মেলবোর্নের টিম লিডার নাদেরা সুলতানা নদী।

বিদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এডুকেশন, হেলথ ইনস্যুরেন্স, প্রফেশনাল ইয়ার এবং মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করছে এমনই একটি প্রতিষ্ঠান স্টাডিনেট।  যারা বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার  ব্রিসবেন, মেলবোর্ন ও সিডনী থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্টাডিনেট মেলবোর্ন অফিসের টীম লিডার নাদেরা সুলতানা নদীর সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেলো তাদের প্রতিষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা যেখানে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের মাতৃভাষায় তাদের প্রয়োজনীয় সমস্যার আলোচনা করতে পারেন অভিজ্ঞ এডুকেশন কাউন্সেলরদের সাথে। পেতে পারে বিস্তারিত স্কলারশিপ তথ্য যে যে বিষয়টি নিয়ে পড়তে আগ্রহী।

নাদেরা সুলতানা আরো জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ার টপ ইউনিভার্সিটি, টেইফ ইনস্টিটিউট সহ অন্যান্য বেশ কিছু কলেজে ভর্তি, ভিসা ও বৃত্তি সহযোগিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি চালু করেছে যা অনেকেই জানেনা।
তিনি StudyNet এর www.studynet.com.au ওয়েব সাইট থেকে যেকোনো অফিসেই যোগাযোগ করলে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা এবং বিশেষ করে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তিগুলোর বিষয়ে পাবে সঠিক দিক নির্দেশনা ও তথ্য। আর বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ বাংলা ভাষী, ভিসা ও তথ্য সহকারী।

এবং সব শেষে তিনি যোগ করেন, যে বিষয়টি সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অস্ট্রেলিয়াতে পড়ালেখা শেষ করে প্রায় সকল শিক্ষার্থীই চান পারমানেন্ট রেসিডেনশীপ এর জন্যে আবেদন করতে। আর মাইগ্রেশন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি স্টেট এর আছে আলাদা আলাদা এন্ট্রি রিকোয়ারমেন্ট। এবং প্রতি বছরই এইসব নিয়মাবলীতে আনা হয় রদ বদল। শিক্ষার্থীদের যেকোন সাবজেক্ট বেঁছে নেয়ার আগে এই বিষয়ে পূর্ব ধারণা নিয়ে নিলে তাঁদের স্টাডি টাইমটা মাইগ্রেশনের জন্যে সহায়ক হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়াতে আছেন এমন বাংলাদেশী যারা তাঁদের পরিবার বন্ধু পরিজন স্বজনদের কারো জন্যে স্টাডি ইন অস্ট্রেলিয়া নিয়ে ইনফরমেশন চান বা হেল্প করতে চান তাঁদের জন্যে আশা করছি যে বা যারা কাজ করছে তাঁদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে সঠিক নির্দেশনা নিয়ে আগাতে পারেন আজই।

প্রয়োজনীয় কিছু লিংক দিচ্ছি এই রিপোর্টে।

https://scholarships.unimelb.edu.au/awards/melbourne-international-undergraduate-scholarship
https://www.vu.edu.au/study-at-vu/fees-scholarships/scholarships/international-scholarships
https://www.swinburne.edu.au/study/international/scholarships/

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments