চুপকথাতেই আমরা বরং
একেক একেক সময় মনে হতো
তোমায় পাওয়া অসাধ্য খুব!
সবাই কি আর নাগালের ধন,
তাসের সাথে তাস মিলান্তি!
রূপকথা তো রূপকথাই-
বাস্তবতার ভূমি ছেড়ে স্বপ্নভ্রমণ
চুপকথাতেই আমরা বরং
ঢেকে রাখি বিপন্নবোধ!
একেক একেক সময় মনে হতো
ইচ্ছে করলেই সব পাওয়া যায়-
চেষ্টা করলেই মেলে সিঁড়ি, বামনের চাঁদ
আরাধ্য মেঘ, তুমুল খরায় বৃষ্টি নামায় বিরান মাঠে!
এমনকী তুমি, এমনকী তোমায়-
অনেক ইচ্ছে সেলাই করে, স্বপ্নে গেঁথে মায়ার শহর
আমার মতো বাসবে ভালো, কে আছে আর ভূ-ভারতে?
তামাম গ্রহে এরচে’ বেশি, টানবে কাছে সাধ্যটা কার?
একেক একেক সময় মনে হতো
তুমিবিহীন বেঁচে থাকা অসম্ভবই,
না দেখলে মুখ, গ্রহজুড়ে নামবে অসুখ
চন্দ্র-সূর্যের পরিক্রমা যাবে থেমে!
পৃথিবীতে আসবে নেমে ব্ল্যাকহোলের ঘন আঁধার-
তাও দেখো এই, তোমায় ছাড়াই, আছি তো বেশ-
খাচ্ছি-দাচ্ছি, গল্প করছি,
অক্ষমতার-অযোগ্যতার স্মৃতি আঁকড়ে
হৃদয়পোড়া দীর্ঘশ্বাসের কাব্য লিখছি!
আছি তো বেশ, একলা-একক পরিপাটি-
সেই কবেকার নিভে যাওয়া শুকতারাটি
খুঁজছে কে আর! খুঁজছে কে আর
সেই কবেকার হারিয়ে যাওয়া চুপকথাটি!
তবু ছুটি, খুনসুটি
আর সেই তুমি-আমি আজো, মাঝখানে ক্লিশে নীরবতা-
সে কী প্রেম! কী নিবিড় ভালোবাসা- লেখা আছে প্যাপিরাসে!
বিষবৃক্ষের বিকৃতি ঢাকে, অনুভবের অবুঝ কথা!
পড়তে কে চায় মন, প্রত্ন খনন, প্রত্যাশা পরিহাসে!
কারো সঙ্গ নিয়ত দংশন, এর চেয়ে ভালো আত্মাহুতি-
মনে হয় ছেড়ে দিই হাল-বৈঠা, বাঁচার ব্যাকুল খাঁচা!
দখলের স্বত্ব পেষে দুর্বৃত্ত, অন্তঃস্রোতের অনুভূতি!
জবরদস্তির এই যাপনের ভিত—বড় নড়বড়ে, কাঁচা!
আহা কী জীবন, জনারণ্যের নৈঃসঙ্গ্যে তড়পাতে থাকি
যেন স্বর্গ— শিরদাঁড়াহীন জেলিফিশ কিংবা এ্যামিবার-
সেঁটে থাকা স্বজন-সোহাগ, প্রেম-পরাকাষ্ঠা—সব ফাঁকি!
তবু ছুটি, খুনসুটি, জীবনের মায়া- মোহে দুর্নিবার!
এমত খর্বুটে বোধ ভেঙে, কে বানাবে মাইলফলক?
কে-জানে কতোটা আছে বাকি, নিভে যেতে দিনের ঝলক!
সুবর্ণ শহর
অনেকই তো হলো চৈত্রযাপন,
শীতার্ত যাত্রার স্যাঁতসেতে ষড়যন্ত্র-
এবার না হয় বিদগ্ধ বাতাসে ভর করুক নদীর ঘ্রাণ,
ভাঁজ খোলো নিঝুম নগরী-
তৃষ্ণার মরুতে বেজে উঠুক মেঘমল্লার
শ্রাবণের সুযোগ্য সিমফোনি–
শুনেছি বিস্তর অমরার আখ্যান, প্রতিটি পরতে প্রাণের প্রণোদনা
পরস্পর শর্তহীন সমর্পণে সুলগ্ন শান্তির ধারা
দিশেহারা সময়ের ধসে পা-রেখে পেয়েছি কেবলই অন্ধকারের ছোবল আর বিনিদ্র রাত্রির তড়পানি–
অজস্র চেষ্টার ধ্বনি ঠিকানা হারিয়ে বোহেমিয়ান এখন!
ক্রমশ অধীর হয়ে যাচ্ছে রোদ আর ঋতুর হিসেব,
ভরা জোয়ারের গোন হাত ছাড়া হওয়ার আগেই
স্বর্গ-শুশ্রুষার স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসুক সে সুন্দর,শিউলিগন্ধা শ্বাসে।
অবেলার অতৃপ্ত শরীরে পেখম মেলুক সৃষ্টির নিখুঁত আদিমতা প্রশান্তি প্রাঞ্জল;
আমরা আবার খুঁজে বের করি,আস্থা হারানো ভালোবাসার সুবর্ণ শহর।
ভরসাযোগ্য একটি ছায়ার আকাল বড়
একই দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে রোজই, যদিও ঘুম ভাঙার পরই হারিয়ে ফেলছি, মনে-রাখতে পারছি না সবটা ঠিকঠাক। অতিকায় এক হিমঘর- যার ছোট ছোট খুপড়ির প্রতিটিতে এক একটি মানুষ, কিংবা অসংখ্য মৃতের সারি! অনেক লাশের ভিড়ে দিশেহারা যেন বা আমিও তার বিমর্ষ সদস্য এক-
মা কোথায়- সান্ত্বনার বুক খুঁজতে বেরোই যদি, কার কাছে যাবো?
কার কাছে গেলে ঘুচে যাবে সমস্ত যন্ত্রণা?
ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে মানুষের নির্ভরতা!
নদী ভাঙনের মতো একদিন শেষ হয়ে যায় সব!
কতোকাল, কতোকাল ধরে এই পায়ের তলায় খুঁজে যাচ্ছি মাটি!
গ্রহজুড়ে এতো এতো মানুষ, অথচ ভরসাযোগ্য একটি ছায়ার আকাল বড়! অর্থহীন মনে হচ্ছে বিষয়বাগান!
এই স্বরচিত তিমিরে কে হবে খড়কুটোর আশ্বাস,
ভ্রমণের একাকিত্বে ভরসার কাঁধ?
বাঁধ ভাঙা অশ্রুর প্লাবন থামানোর মানবিকতা কোথায় পাবে তুমি আজ এই কংক্রিটের কারাগারে?
ভোরের দরোজা কতো দূর,
ঊষর-উজান ঠেলে কতোটা এগুতে হবে আর?
ডুবে যাচ্ছি, অতলে তলিয়ে যাচ্ছি-
মগজের কোষগুলো হারিয়ে ফেলছে আশা!
এ সংকটে কে বাঁচাতে পারে, কে তুলতে পারে টেনে তীরে?
তুমি কি জানো তা হে আপন, ভালোবাসা?
আমার সালাম পাবেই তুমি-হে প্রজ্ঞাবান
কম-বেশি পাগলামি সবার মধ্যেই থাকে!
যাকে যেমনটি দেখায় বাইরে থেকে
ভেতরটা তার তেমনটি না-ও হতে পারে!
হাড়ে হাড়ে বদমাশ বলে যাকে ছুঁড়ে ফেলো দূরে
আছে তারও হয়তো সবুজ একটা মন,
যতোটা দুর্জন বলে দিয়েছ সনদ তাকে, হে সুজন
যোগ্য কি আসলে তুমি তার!
মেধা ও মনন খুঁজে নেওয়ার চোখ বা আছে কজনার?
খুঁড়ে দেখ গভীর-গোপন, তোমার ভেতর-বার, নিরপেক্ষ তুলাদণ্ডে,
এই ব্রহ্মাণ্ডে যে পরিচয়ে আছো মাথা তুলে
প্রকাশ পেলে-তা আলোয়, থাকবে কতোটা অটুট?
নাকি স্যুট-বুট খুলে তোমাকেও ছুঁড়ে দেওয়া হবে আস্তাকুঁড়ে?
ভবঘুরে থাকা ভালো যদি থাকে উঁচু মাথা, অক্ষুন্ন সম্মান!
কেউ কেউ চালুন স্বভাবী- অজস্র ছিদ্রতে যার গড়াই ভুবন
ভুলে গিয়ে সেইসব ছেঁদার কাহিনী সুঁইয়ের সমালোচনায়
লেগে থাকো দিনরাত! রেখে হাত বুকে দাঁড়াও দর্পণে
আসবে বেরিয়ে নিজেদের বীভৎস অন্ধকার –
নিজের বিচার নিজেই করতে পারো যদি
নিরন্তর-নিরবধি আমার সালাম পাবেই তুমি-হে প্রজ্ঞাবান।