গোষ্ঠগানের দিন ও বোবা কাহিনী । বদরুজ্জামান আলমগীর

  
    

গোষ্ঠগানের দিন

সময়ের তাড়া থাকে, আমরা থাকি বড্ড
সাত পাঁচ চৌদ্দর ভিতর;
ধমকের শিরোনাম,শাসনের ঘোড়া দৌড়ে হাঁপাই বড়,
আমাদের সময় কোথায়- সময় বেজায় করার?

কাঁচা ভোরের উন্মিলনের হাত থেকে লেফট রাইট
আমাদের বহুদিনের প্রভাতফেরিকে একলহমায়
সরিয়ে আনে রাত বারোটা এক মিনিটের
সরকারি সওদায়।

এই অদলবদলের ছাড়পত্রে আমাদের পরামর্শ করার
কথা ছিল ঘরছাড়া নিমাইয়ের সাথে,
নিমাই চল করেছিলেন এই কাঁচা সবুজ ভোরের নুনে
গোষ্ঠগানের লীলা ও রৌদ্রস্নানের সংকেতে।

কৃষ্ণ গোচারণে যাবেন প্রত্যুষের কালে
আমরা যে তাই গৃহস্থ মাটিবউ রাখালিয়া
মোহর বাজায় গোষ্ঠগানের নামে।

আমাদের ধানদূর্বায় দুধভাতে এমনিই ভোরে
কাঁচা আলোর বাগানে নামেন-
রফিক, জব্বার, বরকত- আসে হৃদমাঝারে, মাঠে।
বরণের নামে,কাঁচা হলুদের মনে মায়ের আঁচলে
আমরা প্রভাতফেরিতে গাই-
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?

আমরা নদী সনে বৈঠকে পরামর্শ না করে কতো শত
বাঁধ দিয়েছি নদীরই মাঝঘরে,
হরিণের অন্তঃপুরে অধিবেশন না ডেকে বরং আগুন
জ্বালিয়েছি সুন্দরবনে, এমাজনের মনোভূমি মোড়ে।

প্রভাতের কাঁচা হলুদ রোদ্দুরে, সুবেহ সাদেকের
আপন ঘরে বৈঠকে না বসে সভা ডেকেছি
সচিবালয়ের হিমশীতল সুনসান উষ্ণ দরবার ঘরে-
ভোরের প্রভাতফেরি সরিয়ে এনেছি মধ্যরাতের ভিড়ে।

তাড়া আছে, ধমকে পড়ি- জলদি হাঁটো
আঠারো জোড়া আইনের পদমূলে ফুল দিতে হবে,
সিঁড়িঘরে গাইতে হবে কোরাস- ফুলের মাথাগুলো
নমিত করো, কেটে নাও- ছাঁটো।

বোবা কাহিনী

কথা, কথার ভারে ছটফট করে নক্ষত্র তারাদের সাথে
বলতে বলতে, বলা হতে হতে তার কৌমার্য হারায়।

ফলে, এবেলায় বোবা হবার বাসনা আমার।
জানি না আমার দেখা হলো কার সাথে মধু আঙিনায়
বলে সে ভাষার মুক্তি নিরালা কথায়, নীরবতায়-
আমাদের পূর্বপুরুষ আর উত্তরপুরুষ উভয়ে থাকেন
জল ও হাওয়ার গভীরে, না বলা কথায়।

তোমরা বলো, বলতে বলতে মাইল কী মাইল চলে যেও।
আমি বসেছি কথা না বলার তাহাজ্জতি সাধনায়,
সব কথা বলবো আমি রবীন্দ্রনাথের সনে, বোবা মেয়ের
চোখের তারায়, ভিটগেনস্টাইনের বারামখানায়।

নীরবতা বলে যাবে আমার পক্ষে সকল কথা,
সব ঘুমের নহরে কিছু বলার বাকি রইবে না আর।

একটি প্রাণ আরেকটি প্রাণের তালুতে লিখে যাবে
আদিবাসী মন, চিত্রা হরিণের ভয়ার্ত চোখের লোবান
মঙ্গলগ্রহ অবধি সেলাই করা থাকবে হারিয়ে যাওয়া
ভাষাদের মর্সিয়া, ভৈরবী- আদিবাসী কৌমের জবান।

বদরুজ্জামান আলমগীর
কবি, নাট্যকার, অনুবাদক
ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শাহাব আহমেদ
শাহাব আহমেদ
2 years ago

বদরুজ্জামান আলমগীরের কবিতা সম্পূর ভিন্ন ধরনের। তার হৃদগ্রাহী শব্দ, ভাষার সহজিয়া মাটি সন্নিহিত সুর অনুভূতিকে নাড়া দেয়। তার প্রতিবাদ অন্যধরনের, মননশীল বিবেকবান মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়ার, ক্ষমতার, শিল্প সাহিত্যের লাঠিয়াল যারা তাদের চিহ্নিত করার, ইটপাটকেল লাঠি নিয়ে তেড়ে যাবার নয়। সফল কবির কাজ এটাই। নির্জনতায় শব্দ তোলেন তিনি, যে শব্দ আমাদের উৎস থেকে উদ্গত।
“নিমাই চল করেছিলেন এই কাঁচা সবুজ ভোরের নুনে গোষ্ঠগানের লীলা ও রৌদ্রস্নানের সংকেতে।”

এইভাবে আর কাকেও বলতে শুনিনা।