চীনে ঈদ উৎসব – ফাহিম হিমেল (প্রশান্তিকার ঈদ আনন্দ আয়োজন)

  
    

 

ঈদ আসছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আপনাদের প্রিয় প্রশান্ত পাড়ের বাঙলা কাগজ ‘প্রশান্তিকা’ ঈদ আনন্দ আয়োজন করেছে। দেশে বিদেশের লেখক ছাড়াও একঝাঁক নবীন লেখকেরা এই আয়োজন সমৃদ্ধ করছেন। সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক।

আজকের লেখাটা পাঠিয়েছেন সুদূর চীন থেকে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী হিমেল।

চীনে ঈদ উৎসব – ফাহিম হিমেল

  

 

পৃথিবীতে কাজপাগল কিংবা পরিশ্রমী জাতি হিসেবে চীনাদের বিশেষ কদর রয়েছে।এতদিন এটা শুনে আসলেও বিগত দুই বছর যাবৎ নিজ চোখে দেখছি – সত্যিই তাই।আর এদিকে চীনা কমিউনিস্ট সরকারতো একপ্রকার বদ্ধপরিকর, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় কুসংস্কারমুক্ত,অর্থনৈতিক শক্তিশালী। বাস্তবিক আক্ষরিক অর্থে অনেকটা সেরুপ হচ্ছেও প্রায়।চাইনীজ নাগরিকরাও তাই সুবোধ বালকের মতো প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রোবটের মতো সারাটা দিন কাজ করে সন্ধে সাতটার মাধ্যে ডিনার সেরে রাত এগারোটার আগেই বিছানায় চলে যায়।

প্রায় অধিকাংশ চাইনীজ নাস্তিক, সংশয়বাদী বা একেবারেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনা। সুতরাং আমি যে শহরে আছি তার নাম হুয়াইন,জিয়াংশু। সেখানে হাতে গোনা কিছু মুসলমান ও খ্রিষ্টান রয়েছে। তবুও এদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো না,অন্তত বিগত ঈদ আর ক্রিসমাসে যতটুকু বুঝেছি আর কি। সুতরাং এখানে ঈদ কিংবা অন্য কোন ধর্মীয় উৎসবে অফিসিয়ালি ছুটি একদম নেই। সপ্তাহের অন্য সব কর্মব্যস্ত দিনের মতই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অফিস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটতে হয়।

তবে চীনারা ধর্মীয় উৎসব পালনে আগ্রহী না হলেও, তারা যে উৎসব বিমুখ জাতি এমনটা ভাবার কোন সুযোগ নেই।শত হলেও প্রায় পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস আর সংস্কৃতি সমৃদ্ধ জাতি এরা।
চীনাদের প্রধান উৎসব হলো চাইনীজ নিউ-ইয়ার বা স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল।চাঁদের হিসেব আর ওদের নিজেদের ক্যালেন্ডার অনুসারে কি কি যেন একটা হিসেব রয়েছে, সেই অনুযায়ী,বছরের ভিন্ন তারিখে এটি পালিত হয়।এই যেমন গত বছর ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে হলেও এ বছর উৎযাপিত হলো ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
প্রতিবছর চীনারা তাদের নতুন বছরকে একটা করে প্রাণীর সাথে তুলনা করে যেটা তাদের ভাগ্য,ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি নির্ধারণ করবে এমন একটা মতবাদ প্রতিষ্ঠিত । আর এ প্রাণীকে বলা হয় “Zodiac Animal”.এই সম্পর্কে একটা কথাও প্রচলিত আছে”This animal hides in your heart “.

সারাবছর ধরেই অধীর আগ্রহে এইদিনটির অপেক্ষায় থাকে ওরা।এই সেলিব্রেসনের সময়টায় সমগ্র চীন বাস্তবিক অর্থে বন্ধ থাকে,ব্যবসা বানিজ্য,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব প্রায় ৫-৭ দিনের সরকারি ছুটিতে বন্ধ থাকে। অনেকটা বাংলাদেশের ঈদের মতো ব্যাপার-স্যাপার। এ সময়টাতে সবাই আমাদের দেশের মতই নিজেদের হোমটাউন বা গ্রামে ফিরে যায় এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটায়। সেসময় তারা মজার মজার ট্রাডিশনাল রান্নাবান্না, নতুন জামা পরিধান করে ঘুরতে যাওয়া , দিন রাত পটকা ফুটিয়ে আনন্দ করা সাথে রয়েছে আমাদের ঈদ সালামির মতো করে ছোট বড় সবাইকে কিছুনা কিছু সারপ্রাইজ গিফ্ট দেয়া।বেশ মজার একটা অনুষ্ঠান আরকি।
এছাড়াও অন্যান্য উৎসবের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল, চিনমিং ফেস্টিভ্যাল, মিড-অটাম ফেস্টিভ্যাল প্রভৃতি।
যেহেতু এখানে ঈদে কোন ছুটি নেই তবুও চীনে বসবাসরত বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত মুসলমানেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন কাজ কিংবা ক্লাসের ফাকে সাময়িক বিরতি নিয়ে সকাল সকাল মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজটা সেরে ফেলেন। তারপর বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সাথে কুশল বিনিময় শেষে দলবেঁধে খানিকটা ঘুরতে বেরিয়ে পড়া,এরপর সন্ধের আগেই বাসায় ফিরে  কান্ট্রিমেটরাসহ দেশীয় মজার মজার কিছু রান্না করে একসঙ্গে বসে খাওয়া, গল্পগুজব শেষে দেশে থাকা পরিবার আর বন্ধু-বান্ধবদদের সাথে ভিডিওকলে কথা বলে খানিকটা ইমোশনাল হয়ে ঘুমোতে  চলে যাওয়া।পরদিন খুব সকালে শুরু হয় পুনরায় কর্মব্যস্ত দিন। তবে চীনা মুসলমানরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন  পরিবারের সদস্যদের সাথে দুটো ঈদ উৎযাপন করতে।

ফাহিম হিমেল
ব্যাচেলর দ্বিতীয় বর্ষ(সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারিং)
হুয়াইন ইন্সসটিটিউট অব টেকনোলজি।
হুয়াইন, জিয়াংশু ,চীন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments