জলজ আগ্রাসন
খুলে দাও বাঁধ, ভেসে যাক সব মানবিক অনুভূতি।
বন্যার জলে ধুয়ে-মুছে যাক মিথ্যে প্রতিশ্রুতি।
ভেসে যাক মাঠ, ক্ষেতের ফসল,গৃহস্থ বাড়ি-ঘর।
দিনে দিনে ক্রমে হয়ে ওঠো আরো চরম স্বার্থপর।
নিঃস্ব কৃষক, নিরন্ন শিশু, বৃদ্ধের দুখীমুখ
তোমরা দেখোনি; ঘৃণার প্লাবনে ভাসে বাংলার বুক।
খুলে দাও সব বাঁধের দরজা; গঙ্গার গর্জন
স্রোতের দাপটে বাংলাদেশে চালাক আগ্রাসন।
বাংলার এই পলিজমা মাটি বিশুষ্ক হোক আরো;
জলের ন্যায্য হিস্যা কেড়েছো, কেড়ে নাও অধিকারও।
শিউলি
যেমন ঝরেছে শারদ হাওয়ায় ভোরের শিউলি ফুল,
তেমনি দুলেছে দুরুদুরু বুকে তোমার কানের দুল।
সুবাসে সুবাসে ভরেছে তোমার সর্পিল কালো বেণী।
দেখো আশ্বিনে স্বাগত জানায় শারদ শিউলি-শ্রেণী।
শিউলি পাতায় শিশিরের স্বর শুনেছে কি তব কান?
পেয়েছো কি প্রিয়, আমার হৃদয়ে ফোঁটা শিউলির ঘ্রাণ?
তুমিতো আমার শারদ-প্রতিমা; হৃদয়ের বেদীমূলে
তোমাকে পূজেছি প্রভাতী প্রহরে শুভ্র শিউলি ফুলে।
মাঝরাতে বৃষ্টি
শহরে মধ্যরাত – রাস্তায় জ্বলে আলো।
মেঘে মেঘে বাজে তুমুল দামামা, বিদ্যুৎ চমকালো।
রেলিংয়ের পরে উদ্বাস্তু পাখি – ভিজছে ফুলের টব।
ইলিকট্রিকের খুঁটির ওপর মৌন জলোৎসব।
এমন বৃষ্টিমুখর নির্জন কোনো রাতে
ইচ্ছে শুধুই হাঁটবো তোমার সাথে।
গল্প না হোক, জল্পনা হবে সঙ্গী।
বৃষ্টির ছাঁটে বদলাবে মুখভঙ্গী।
ফিসফিস হাওয়া – নিসপিস হাত মুঠোয়,
লুটোবে এমন যতখুশি জল লুটোয়।
শুধু শান্ত সলিলে ভিজবো তোমার সাথে
এমন কোনো শ্রাবণের বর্ষাতে!
কান্তি ভূষণ তরফদার। সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলা নাটকে কাজ করার পাশাপাশি কবিতা লিখেন। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস।