জলসা ২ ও অতঃপর … -সালেহ জামী

  
    

 

এই লেখাটির প্রকাশ হওয়া উচিত ছিল ১৯ জানুয়ারী খুব ভোরে। জলসা’র রেশ থাকতে থাকতে। অনাকাঙ্খিত বাস্তবতায় প্রায় ৬০ ঘন্টা পরে লেখার সুযোগ পেলাম। ১৮ জানুয়ারী সন্ধ্যায় যখন ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের সায়েন্স থিয়েটারে ‘জলসা ২’ সংগীত অনুষ্ঠানটি দেখছিলাম তখন থেকেই ডুবে গিয়েছিলাম পরিবেশিত গানগুলিতে। সেসব গানের রেশ অবশ্য রয়ে গেছে আজ ২ দিন বাদেও। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে সিডনির স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে পথ প্রোডাকশনের এই পরিবেশনা দ্বিতীয় বছরে পা রাখলো। আয়োজকদের ধন্যবাদ স্থানীয়দের উপর আস্থা রাখায় আর দর্শক-শ্রোতাদের অশেষ ধন্যবাদ তাঁদের উৎসাহিত করায়।

আমি গান পাগল কিন্তু সংগীত বোদ্ধা নই। গান শুনি গভীরভাবে তবে গানের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কিছু লেখা আমার কাজ নয়। বলতে পারেন একজন মুগ্ধ শ্রোতার অভিব্যক্তি। চোখ যা দেখতে পায় তাই মনে হয় সত্য আর কান যা শুনতে পায় তাইই প্রাণ পর্যন্ত পৌছায়। সে বিবেচনায় সাহসী এই আয়োজনকে ধন্যবাদ অনেক নতুন কিছুকে এক সাথে করে উপস্থাপন করায়, উদ্দেশ্য আর বিধেয়কে এক রেখে ২০২০ সালের স্মরণীয় সন্ধ্যা উপস্থাপনে। নতুন শিল্পীদের পাশাপাশি অনন্য পুরাতন শিল্পীরা তাঁদের সুরে জাদু করেছিল নিশ্চিত। থেকে থেকেই কানে বাজছে গানগুলি। কোন গানটা রেখে কোন গানের কথা লিখবো? উজ্জ্বল, পলাশ, লুৎফা, জিয়া, রূপসা, সুমন, নাবিলা, জিও, নীলাদ্রি, তামিমা, সেমন্তী, এঞ্জেলা, রুমানা, সুমনা ও আশিক আপনারা সকলেই ভালো গেয়েছেন। অসম্ভব পরিশ্রম করে চেষ্টা করেছেন আপনাদের সেরা সুরে আমাদের ভরিয়ে দিতে। আমরা কৃতজ্ঞ।


স্থানীয় যন্ত্র শিল্পীরাও বাজিয়েছেন অসম্ভব সুন্দর। কয়েকটি গানের সংগীতায়োজন তো ছিল তুখোড়। বাজনার তাল তন্ময় করে রেখেছিল পুরো হল রুম। বাঁশি, সেতার, ভায়োলিন, অক্টোপ্যাড, তবলা, চেলো, কী-বোর্ড, বেজ-লীড গিটারের মূর্ছনায় মত্ত হয়ে শ্রোতারা ফিরে গিয়েছে সুন্দর সব স্মৃতিতে। কেননা গানগুলির বেশির ভাগই অনন্য সব সুর স্রষ্টাদের সৃষ্টি আর বিখ্যাত ও একই সাথে পরিচিত। এতো কঠিন সব গানে বাজানো খুব সহজ নয়। ওঁরা প্রমাণ করেছেন ওঁরা মাতাতে জানেন। এখানে বড় হওয়া কী-বোর্ডিস্ট নীলাদ্রি এই আয়োজনের বড় অর্জন। যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি এই প্রজন্মের একজন শিল্পীর উঠে আসা দেখেই।

নেপথ্যের কুশীলবও কম প্রশংসার দাবিদার নন। তাঁরা একাগ্র চিত্তে পরিশ্রম করে গেছেন জলসা ২ কে সফল করতে। বিশেষ ধন্যবাদ আরজিন হোসাইন দীপ্রকে খুবই মার্জিত ও রুচিসম্মত ভিজুয়াল এফেক্ট তৈরী করায়। প্রতিটি গানের সাথে পিছনের দৃশ্যগুলি যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। কারিগরি সহায়তা ছাড়াও ব্যবস্থাপনা, অনুশীলনসহ সার্বিকভাবে পথ প্রোডাকশনের এই দলটি পারে আগামী প্রজম্মের শিল্পীদের জন্য একটি সংহত প্লাটফর্ম তৈরী করে দিতে। আমরা ভীষণভাবে আশাবাদী। শুভজিৎ ভৌমিকের চৌকষ উপস্থাপনায় জলসা ২ স্মরণীয় হয়ে থাকবে আগামী জলসার পূর্ব পর্যন্ত।

যেহেতু কিছু জিনিস আয়োজকদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না তাই তাঁদের উচিত হবে ভবিষ্যতে শব্দ প্রকৌশলীদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে। এটা বিনীত অনুরোধ।

সালেহ জামী
লেখক, সংস্কৃতি কর্মী
সিডনি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments