শঙ্খের হৃদয়
এতটুকু স্পর্শ না করে
হৃদয়ের অন্ত:পুর কিভাবে ছুঁয়ে দিতে হয়
জানে যে, তুমি সেই যাদুকর।
কি কঠিন মোড়কে
নিজেকে রাখো আবৃত তুমি!
অথচ সারাক্ষণ মনে হয়
তোমার চোখ, তোমার দৃষ্টি,
তোমার কন্ঠের দৃঢ়তার আড়ালে যে কোমলতা
সবই কি ভীষণরকম বাঙময়!
নিমেষে পড়ে নিতে পারি আমি
কতোটা ভালোবেসে তুমি এতোটা নিশ্চুপ।
তোমার হাত ধরে
কখনো হাঁটা হবে না শিশিরভেজা মেঠোপথে,
কিংবা ভরা পূর্ণিমার রাতে,
জোৎস্নায় যখন ভেসে যাবে সমস্ত চরাচর
তোমার কন্ঠে শুনবো না কোন স্বপ্নমাখা সুর।
আমরা দুজনে ভিজবোনা বৃষ্টিতে,
দেখবোনা সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত কোন।
তবু প্রতিদিনের এই পুতুল খেলার বিরাম চিহ্নে
আমার সমস্ত অনুভবে
কি গভীর করে ছুঁয়ে থাকো তুমি।
অস্তিত্ব নয় শুধুই অবয়ব
মন আর মননেই পায় তা পূর্ণতা।
সেখানে তোমার নিত্য বসবাস,
তুমি সুনিপুণ কারিগর তার।
এ্যাকুরিয়ামের কাঁচ-ঘেরা কৃত্রিমতায়
বাঁধা পড়ে আছে যে জীবন
সে কখনো শঙ্খের নয়।
কান পেতে শুনে দেখো
তার বুকে পাবে তুমি সমুদ্র-গর্জন।
বাঁশিওয়ালা
তোমায় ছাড়া শূণ্য জীবন ভীষণ অর্থহীন
তোমায় পেলেই পূর্ণ ভুবন ফুলেল রঙ্গিন।
সপ্তডিঙ্গা ভাসিয়ে দিব তোমার পানে চেয়ে
চাঁদের প্রদীপ উঠবে জ্বলে, ঝর্ণা উঠবে গেয়ে।
ছোট্ট কুটির বানিয়ে দিব ফুলের বাগান ঘেরা
জোনাকিরা জ্বালবে পিদিম, হাসবে সন্ধ্যাতারা।
পরদেশী হ্যামিলনের তুমিই বাঁশিওয়ালা
তোমার ধ্যানেই কেটেছে মোর সকল মেয়েবেলা,
তোমায় ভেবেই ফুল তুলেছি সাঁজি ভরে ভরে
গেঁথেছি মোর বরমাল্য অনেক যতন করে।
অমন করে ডাক পাঠালে না এসে কি পারি
তোমার কথা শুনতে আমার ভালো লাগে ভারি।
স্বপ্নলোকের খোঁজে আমি বাড়িয়ে দিলাম হাত
ভালোবাসার নকশী বুনে ফুরিয়ে গেল রাত।
দিনের আলো ফুটলে দেখি মলিন তোমার মুখ
বিবর্ণ এই আমির মাঝে পাওনি খুঁজে সুখ।
জোৎস্না প্রদীপ মিলিয়ে গিয়ে জীর্ণ কুটির মাঝে
হারিয়ে যাওয়া বাঁশির সে সুর গুমরে গুমরে বাজে।
অলংকরণ: আসমা সুলতানা
