অস্ট্রেলিয়াতে ‘ওয়ারাথাহ’ নামের যে ফুলটি আছে, তা পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখা যায় না। গাছের মাথায় বিশাল লাল টকটকে ফুল। বনের মাঝে যেন একটি মশাল জ্বেলে রেখেছে কেউ। আর অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের অস্ত্র ‘বুমেরাং’এর নাম তো তোমরা শুনেছ। সেই ‘ওয়ারাথাহ’ ফুল ও ‘বুমেরাং’এর একটি গল্প আজ তোমাদের আমি শোনাব।
অনেক অনেককাল আগে টুংকু এবং ইংগারদি নামের দুজন আদিবাসি ছেলে-মেয়ে একটি বনে বাস করত। একদিন টুংকু শিকারে বের হলো।
টুংকু বলল, ইংগারদি, আজ আমি কাঙ্গারু বা ইমু যেটাই শিকার করে আনব, তুমি রান্নার আয়োজন করো।
ইংগারদি শুকনো পাতা কুড়িয়ে জড়ো করে রাখল, যেন টুংকু ফিরে এলেই আগুন জ্বালিয়ে রান্না বসাতে পারে। কিন্তু সারাটা দিন পার হয়ে যায় টুংকু তো ফিরে আসে না। ইংগারদি তো খুব চিন্তায় পড়ে গেল।

ওদিকে হয়েছে কি টুংকুর কাছে কোনো ভাল অস্ত্র নেই, যা দিয়ে কাঙ্গারু বা ইমু শিকার করতে পারে। টুংকু খুব বিপদে পড়ে গেল। তাঁর মনও খুব খারাপ হলো। কারণ সে ইংগারদিকে বলেছে কাঙ্গারু বা ইমু শিকার করে আনবে। যদি নিয়ে যেতে না পারে তাহলে ইংগারদি খুব কষ্ট পাবে। টুংকু তখন বনের দেবতা দারামার কাছে মিনতি করে বলল,
কিন্তু দারামা তাকে কিছুতেই অস্ত্র দিবে না। দারামা বললেন,
টুংকু বলল,
কিন্তু দারামা কিছুতেই মানতে নারাজ। তখন টুংকু রেগে তাঁর হাতের লাঠিটি দারামার দিকে ছুঁড়ে দেয়। দারামা সেটি ধরে ফেলে এবং সোজা লাঠিটিকে বাঁকিয়ে টুংকুর দিকে ছুঁড়ে মারে। এই বাঁকা লাঠিটির নামই হচ্ছে ‘বুমেরাং’।
বুমেরাংয়ের আঘাতে টুংকু অজ্ঞান হয়ে পড়ে। দারামা তখন টুংকুকে শাস্তি হিসেবে পৃথিবী থেকে চাঁদে পাঠিয়ে দেয়।

ওদিকে ইংগারদি তো টুংকুর ফিরে আসতে না দেখে কাঁদতে কাঁদতে শেষ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে আকাশে বিশাল একটি চাঁদ উঠে। ইংগারদি চাঁদের দিকে তাকিয়ে টুংকুকে দেখতে পায়। টুংকু তাকে কি যেন বলার চেষ্টা করছে। ইংগারদি একটি উঁচু পর্বতে উঠে, যদি টুংকুর কথা শোনা যায়। ইংগারদি শুনতে পায় টুংকু বলছে,
একথা শুনে ইংগারদি দারমাকে অনেক অনুরোধ করে টুংকুকে ক্ষমা করে দেবার জন্য। দারামা বলেন,
ইংগারদি অনেক চিন্তা করে দারমাকে তাঁর হৃদয়টা দিয়ে দেয়। টুংকু পৃথিবীতে ফিরে আসে। কিন্তু ইংগারদিকে ফিরে পায় না। কারণদ দারামাকে নিজের হৃদয়টা দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ইংগারদি।
দারামা ইংগারদির লাল টকটকে হৃদয়টি পেয়ে সেটিকে মাটিতে পুতে দেয়। সেখান থেকেই বেড়ে উঠে ওয়ারাথাহ ফুলের গাছ। ওয়ারাথাহ একেকটি ফুল আসলে ফুল নয়, ইংগারদির হৃদয়।